Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Sunil Chhetri

‘ওইটুকু চেহারা নিয়ে একটা ছেলে খেলে যাচ্ছে কী করে এই ফুটবলটা!’

প্রশ্নটা হয়তো সেই সময় কলকাতায় বসে থাকা সব ফুটবলপ্রেমীর মনেই ঘুরছিল। তা হলে কী সেই চিৎকারের ডেসিবেলে কেঁপে যেত না ক্রিকেটের এই ভারত?

১০০তম ম্যাচের শেষে সুনীল ছেত্রী।—ফাইল চিত্র।

১০০তম ম্যাচের শেষে সুনীল ছেত্রী।—ফাইল চিত্র।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ১৫:৩৪
Share: Save:

স্টেডিয়াম জুড়ে এমন সুনীল...সুনীল চিৎকার, বদলে দিয়েছিল ১০০তম ম্যাচের আবহটা! সাত হাজারের মুম্বই স্পোর্টস এরিনার গ্যালারি না হয়ে যদি এটা যুবভারতী হত?

প্রশ্নটা হয়তো সেই সময় কলকাতায় বসে থাকা সব ফুটবলপ্রেমীর মনেই ঘুরছিল। তা হলে কী সেই চিৎকারের ডেসিবেলে কেঁপে যেত না ক্রিকেটের এই ভারত?

কিন্তু, মুম্বই যে ভাবে সুনীলের আবেদনে সাড়া দিয়েছে তাতে মুগ্ধ সকলেই। মুগ্ধ কলকাতা ময়দান। মুগ্ধ প্রাক্তন ফুটবলাররাও।

যেমন সুব্রত ভট্টাচার্য। ভারতীয় ফুটবল সুনীলের হাত ধরেই দেশের সব কোণায় পৌঁছে যাবে, এটা ভেবেই গর্বিত তাঁকে মোহনবাগানে নিয়ে আসা সুব্রত ভট্টাচার্য। তিনি আবার সম্পর্কে সুনীলের শ্বশুরও বটে। জামাইয়ের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আবেগটা যেন অনেকটাই বেশি ধরা পড়ল সুব্রতর গলায়। মেয়ে সোনম খেলা দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ে। কিন্তু, তিনি যাচ্ছেন না। জানিয়েও দিয়েছেন সে কথা সুনীলকে। ঘরে বসেই জামাইকে সমর্থন করবেন। সোমবার সুব্রত বললেন, ‘‘সুনীলকে নিয়ে আমার গর্ব তো হবেই। সেই ২০০৩-এ আমি হাত ধরে ওকে মোহনবাগানে নিয়ে এসেছিলাম। সেই ছেলে আজ দেশের হয়ে ১০০তম ম্যাচ খেলছে! এটা গর্বের তো বটেই।’’

গর্বটা যে শুধু সুব্রত ভট্টাচার্যের নয়, সেটা বুঝিয়ে দিল সুভাষ ভৌমিকের একটাই কথা। সুনীলকে নিয়ে বলতে গিয়ে সুভাষ বললেন, ‘‘আমার অল-টাইম বেস্ট ভারতীয় ফুটবল দলের প্রথম একাদশে থাকবে সুনীল। ওই তালিকায় গত ২৫ বছরের আর কেউ নেই কিন্তু।’’ সুভাষের এই একটা কথাই সুনীলকে আরও উৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট। সুব্রত যেমন বলছিলেন, ‘‘ওর কোনও পরামর্শের প্রয়োজন নেই। সুনীল জানে ওকে কী করতে হবে। ওর নিষ্ঠা-সাধনাই আজ ওকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে। ও শুধু খেলে যাক। থামার কথা ওকে ভাবতেই বারণ করব।’’ সুভাষও তেমন বললেন, ‘‘আমি সুনীলকে এসএমএস করে বলেছি, তোমার ১৫০তম ম্যাচের অপেক্ষায় থাকলাম। আমার বিশ্বাস ও ১৫০টা ম্যাচ খেলবেই। ওর কাছে ওখানে পৌঁছনোটা কোনও ব্যাপারই নয়।’’

এ দিন সুনীলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে শোনা গেল প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে। এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটাই তিনি সুনীলকে দিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ও গোল করেছে নিজের দক্ষতায়। মেসি, রোনাল্ডোর তালিকায় ঢুকে যাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার। সেটা যদি ফেডারেশনকে অনুপ্রাণিত করে তা হলে খুব ভাল হয়। তবে, সুনীল অনেক দূর যাবে। ও আমার কোচিং-এও এক বছর খেলেছে। এই মুহূর্তে ও-ই সেরা।’’

মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও আপ্লুত সুনীলের এই কৃতিত্বে। তাঁর কথায়, ‘‘১০০ ম্যাচ খেলাটা সহজ নয়। এটা পেরেছে ওর ফুটবলের প্রতি ভালবাসা, অধ্যবসায় দিয়ে। আমার দেখা অন্যতম ভারতীয় স্ট্রাইকার সুনীলই। আমি আর কাউকেই ওর আগে রাখতে পারছি না। যে কোনও দশকের নিরিখে ও সেরা।’’ তবে, মেসির সঙ্গে কারও তুলনায় নারাজ শঙ্কর। তাঁর মতে, ‘‘মেসি ফুটবলের ভগবান। মেসিকে বানানো যায় না। কিন্তু রোনাল্ডো, সুনীলকে বানানো যায়।’’ সংখ্যার নিরিখে এক তালিকায় থাকলেও এই তুলনা চান না শঙ্কর।

প্রাক্তন জাতীয় স্ট্রাইকার দীপেন্দু বিশ্বাস এই ঘটনাকে ভারতীয় ফুটবলের সম্মানজনক অধ্যায় বলেই মনে করেন। তিনি বললেন, ‘‘রোনাল্ডো, মেসির পরেই ৬১টা গোল করে সুনীল রয়েছে। তার মানেই তো বিশ্ব ফুটবলের আলোচনায় ভারত উঠে আসবে। এই সম্মানটা সুনীল আমাদের এনে দিয়েছে। যে কোনও ফুটবলারের কাছে পারফরম্যান্সটাই শেষ কথা। যেটা ও ধারাবাহিক ভাবে করে যাচ্ছে। আমার কাছে এক নম্বর ওই। কে কবে ঘি দিয়ে ভাত খেয়েছে সেটার কোনও মূল্য নেই।’’

বাকিদের মতোই সুনীলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার। তাঁর মতে, ‘‘এই পৃথিবীতে সবাই প্রতিভা নিয়ে আসে। সুনীলের প্রতিভা অনস্বীকার্য। ভাবতে অবাক লাগে, ওইটুকু চেহারা নিয়ে একটা ছেলে এই ফুটবলটা খেলে যাচ্ছে কী করে! প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে ও যে ভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, সেটা দেখলে মনে হয়, সবাই কেন ফুটবলে ভাল চেহারা, উচ্চতা নিয়ে এত লাফালাফি করে!’’ গৌতমের আরও সংযোজন, ‘‘ও আসলে দলের অক্সিজেন। এক জন সত্যিকারের টিমম্যান। ওর ব্যবহার, ওর সততাই এ সাফল্যের চাবিকাঠি। ও আগামী প্রজন্মের প্রেরণা।’’

আরও পড়ুন
শততম ম্যাচে জোড়া গোল সুনীলের, সামনে শুধু মেসি-রোনাল্ডো

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE