Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
রিওয় চোখ প্রাক্তন পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞের

সর্দারদের ভয়ডরহীন খেলা পদকের আশা দেখাচ্ছে

দেশকে ছত্রিশ বছর পরে অলিম্পিক্স হকিতে শেষ আটে নিয়ে যাওয়ার পরে সর্দারদের আরও এগোতে যদি কোনও অনুপ্রেরণার দরকার পড়ে, তো সেই অনুপ্রেরণা তাঁদেরই এক প্রাক্তন সতীর্থ! যিনি বিশ্বকাপ হকি খেলতে যাওয়ার দু’দিন আগে শতাব্দী এক্সপ্রেসে দুষ্কৃতীদের গুলিতে পরের দু’বছর প্রায় পঙ্গু অবস্থায় হুইলচেয়ারে কাটিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

দেশকে ছত্রিশ বছর পরে অলিম্পিক্স হকিতে শেষ আটে নিয়ে যাওয়ার পরে সর্দারদের আরও এগোতে যদি কোনও অনুপ্রেরণার দরকার পড়ে, তো সেই অনুপ্রেরণা তাঁদেরই এক প্রাক্তন সতীর্থ! যিনি বিশ্বকাপ হকি খেলতে যাওয়ার দু’দিন আগে শতাব্দী এক্সপ্রেসে দুষ্কৃতীদের গুলিতে পরের দু’বছর প্রায় পঙ্গু অবস্থায় হুইলচেয়ারে কাটিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে আবার ভারতের নীল জার্সিতে খেলেছেন চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিক্সেও! রূপেন্দ্র-রঘুনাথদের আগে তিনি, সন্দীপ সিংহ-ই ছিলেন দেশের এক নম্বর পেনাল্টি কর্নার স্পেশ্যালিস্ট। স্টার স্পোর্টসের রিও গেমস বিশেষজ্ঞ প্যানেলের অন্যতম হকি তারকা শুক্রবার সন্ধেয় দিল্লি থেকে ফোনে কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।

প্রশ্ন: হকি দলকে এ বার কেমন দেখছেন?

সন্দীপ: চারটে ম্যাচই টিভিতে পুরো দেখেছি। এই ইন্টারভিউটা শেষ করেই স্টুডিওতে ছুটতে হবে। ভারত-কানাডা ম্যাচের প্রিভিউ প্রোগ্রাম করতে। তো দেখুন, ভারতের জয়-হারের স‌ংখ্যা সমান-সমান হলেও আমার কিন্তু ছেলেদের খেলা ভাল লাগছে। জার্মানি আর নেদারল্যান্ডসের কাছে যে দু’টো ম্যাচে হেরেছি, দু’টোতেই ভারত বিপক্ষের চেয়ে ভাল খেলেছে।

প্র: কী বলছেন? একটায় ভারত খেলা শেয হওয়ার তিন সেকেন্ড আগে গোল খেয়েছে। অন্যটায় শেষ মিনিটে পরপর পাঁচটা পেনাল্টি কর্নার পেয়েও গোল দিতে পারেনি!

সন্দীপ: আমি কিন্তু দু’টো ঘটনার মধ্যেই ইতিবাচক দিকের সন্ধান পাচ্ছি। কয়েক বছর আগেও জার্মানির কাছে আমরা তিন-চার গোলে হারতাম। সেখানে ওদের এ বার জিততে জিভ বেরিয়ে গিয়েছে। আর ডাচদের বিরুদ্ধে ওই পাঁচটা পেনাল্টি কর্নার পাওয়া তো এটাই প্রমাণ দিচ্ছে যে, ম্যাচের শেষ পর্যন্ত আমাদেরই আক্রমণ ছিল। ওদের নয়।

প্র: কিন্তু নক আউটে এগোতে গেলে তো গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়াকে টপকাতে হবে!

সন্দীপ: গ্রুপে বিশ্ব হকির দু’টো হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে ছেলেদের ভয়ডরহীন খেলার পরে নক আউটে বড় দলকে না হারাতে পারার কোনও কারণ দেখছি না।

প্র: শুধু ভয়ডরহীন খেলাতেই কি অলিম্পিক্সে পদক জেতা সম্ভব? স্কিলেও তো প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এগিয়ে থাকতে হয়!

সন্দীপ: অন্য ইভেন্টের কথায় যাচ্ছি না। তবে হকিতে বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে আমাদের তফাত উনিশ-বিশ। নইলে ভারতের র‌্যাঙ্কিং এখন পাঁচে থাকত না। সে জন্যই বলছি, যে টুর্নামেন্টে সেরা দলগুলোর মধ্যে স্কিলের তফাত সূক্ষ্ম, সেখানে যারা ভয়ডরহীন বেশি থাকবে, তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নক আউট থেকে লড়াইটা আরও বেশি মানসিক হয়ে উঠবে।

প্র: ভারতের পেনাল্টি কর্নারে সাফল্যের পার্সেন্টেজ তো খুব কম!

সন্দীপ: মানছি না। বরং ফিল্ড গোল আসছে না। এই দলটার যদি কোনও কমজোরি থাকে তো সেটা একমাত্র ফরোয়ার্ডলাইনে। এ ব্যাপারে আমি অশোক কুমার সাবের সঙ্গে পুরোপুরি একমত। প্রথম চার ম্যাচে আমাদের পঁচানব্বই ভাগ গোল তো পেনাল্টি কর্নার থেকেই। তবে একটা কথা— ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময় পাওয়া পেনাল্টি কর্নার থেকে তুমি ক’টা গোল করতে পারলে সেটাও একটা বড় ব্যাপার।

প্র: নেদারল্যান্ডের সঙ্গে আপনি থাকলে শেষ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে দিতেন? রূপেন্দ্র-রঘুনাথ যা পারেননি!

সন্দীপ: আমি কোনও তুলনায় যাব না। তবে আমার ইন্টারন্যাশনাল কেরিয়ারে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করার পার্সেন্টেজ পঁয়ষট্টির বেশি।

প্র: কিন্তু আপনার আমলে ম্যাচের মোক্ষম সময় পেনাল্টি কর্নার থেকে ভারতের গোলের হার কেমন ছিল? রিওর চেয়ে বেশি?

সন্দীপ: দু’টো ঘটনা এখনই মনে পড়ছে। গত অলিম্পিক্সেরই কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টে ফ্রান্স আর কানাডা ম্যাচ আমরা জিতেছিলাম দু’টোতেই শেষ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার গোলে। দু’টো ড্র্যাগ ফ্লিকই আমার ছিল। আমার বিশ্বাস রূপেন্দ্ররা আগের দিন না পারলেও নক আউটে নিজেদের ভুল শুধরে নিতে পারবে। নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পরেও কিন্তু আমি বলব, পেনাল্টি কর্নার-ই এই ইন্ডিয়া টিমের বড় শক্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sandeep Singh Indian hocky team Rio Olympics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE