যুগলবন্দি: ম্যাচের পর গম্ভীরের ইন্টারভিউ নিচ্ছেন উথাপ্পা। —নিজস্ব চিত্র।
এ বারের আইপিএলে সুনীল নারাইন-কে ওপেন করতে দেখে আমার একটা আক্ষেপ হচ্ছিল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের এত সফল ওপেনিং জুটিটা ভেঙে গেল! কিন্তু গত কয়েকটা ম্যাচ, বিশেষ করে শুক্রবারের দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সঙ্গে ম্যাচটা দেখার পরে সেই আক্ষেপ অনেকটাই মিটল।
গৌতম গম্ভীর-রবিন উথাপ্পার জুটি যেন ভেঙেও ভাঙছে না। তিন নম্বরে উথাপ্পা নামার পরে অধিনায়কের সঙ্গে ওর বড় পার্টনারশিপই হচ্ছে। দিল্লির বিরুদ্ধেও যেমন ১১ ওভারে ১০৮ রান তুলে দিল।
ওদের রসায়নটা ঠিকই আছে। ডান-হাতি, বাঁ হাতি ব্যাপারটা তো আছেই। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও দারুণ। কাকে কখন স্ট্রাইক নিতে হবে, ওরা ভাল জানে। যেমন, উথাপ্পা মারছিল দেখে মরিস-কামিন্সের ওভারে সিঙ্গলস নিয়ে ওকে স্ট্রাইক দিচ্ছিল গম্ভীর।
গম্ভীরের ব্যাটিং স্টান্সটা একটু বদলেছে। বাঁ পায়ের পাতা দেখছি পয়েন্ট নয়, একস্ট্রা কভারের দিকে থাকছে। পুরো ওপেন স্টান্স বলব না, কিন্তু এমন ভাবে দাঁড়াচ্ছে যাতে অন আর অফ— দু’দিকেই সাবলীল ভাবে স্ট্রোক খেলতে পারে। খেলছেও।
উথাপ্পা-কে এত ভাল ব্যাট করতে অনেক দিন দেখিনি। পরিষ্কার হিটিং, ক্রস ব্যাটে শট নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ শট খেলছে ফ্রন্টফুটে এসে। বলের সঙ্গে কন্ট্যাক্ট পয়েন্টে ওর ব্যাটটা একেবারে সোজা থাকছে। ফলে বিগ শট খেললেও ঝুঁকিটা কমে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও দেখেছি ও রিভার্স সুইপ বা সুইচ হিটটা নিত। এখন আর নিচ্ছে না। মানে ব্যাটিং থেকে ঝুঁকির মাত্রাটা কমিয়ে দিচ্ছে।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখছি, গম্ভীরের ৯ ম্যাচে ৩৭৬ রান। গড় ৬২.৬৬, স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৭২। উথাপ্পার ৯ ম্যাচে ৩৩১ রান, ৪১ গড় আর ১৬৮ স্ট্রাইক রেট। নাইটদের ধারাবাহিক জয়ের পিছনে এই জুটির অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি তো বলব, এই আইপিএলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জুটি গম্ভীর-উথাপ্পাই।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল এখনও বাছেনি ভারত। আশা করছি, নির্বাচকেরা আইপিএল পারফরম্যান্সের ওপর নজর রাখছে। কে এল রাহুল নেই। শিখর ধবন, অজিঙ্ক রাহানে বা যুবরাজ সে রকম ধারাবাহিক নয়। এ ক্ষেত্রে নাইট ব্যাটসম্যানদের কথা ভারতীয় দলের জন্য ভাবাই যেতে পারে। অন্তত উথাপ্পার কথা। ও তো দ্বিতীয় উইকেটকিপারের কাজটাও করে দেবে। কলকাতার এই ধারাবাহিক সাফল্যের পিছনে ওদের সাপোর্ট স্টাফের অবদানের কথা বলতেই হবে। এই ভয়ঙ্কর ঠাসা ক্রীড়াসূচির মধ্যে টিমটাকে ফিট রেখেছে। না হলে ভোর সাড়ে তিনটের ফ্লাইটে এসে পরের দিন একটা টিম ম্যাচ খেলছে এই গরম আর আর্দ্রতার মধ্যে, ভাবা যায়! ওদের টিম ম্যানেজমেন্টকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। ঠিক লোককে ঠিক সময় খেলাচ্ছে। পুণেতে স্পিনার খেলাবে বলে নেথান কুল্টার নাইল-কে বিশ্রাম দিয়ে তাজা রাখল। ছেলেটা শুক্রবার ফের দারুণ বল করে গেল। দিল্লি যখন রানটা দ্রুত তুলতে শুরু করল, ও এক ওভারে দু’জন সেট ব্যাটসম্যানকে তুলে নিল।
এর সঙ্গে রয়েছে গম্ভীরের ক্যাপ্টেন্সি। শুক্রবারও নারাইন-কে বিভিন্ন সময় কাজে লাগাল। শেষ চার ওভারে দিল্লি তো কুড়ির বেশি রানই তুলতে পারল না। এর পিছনে রয়েছে গম্ভীরের বোলিং চেঞ্জ। একটা জিনিস ছাড়া নাইটদের এই টিমটাকে সুইস ঘড়ির মতো লাগছে। সেটা হল ফিল্ডিং। শুক্রবারও ক্যাচ পড়ল। এটা ঠিক করে নিতে পারলে কিন্তু নাইটরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy