Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাইশ গজের বাইরেও দুর্বোধ্য নাইট অধিনায়কের স্ট্র্যা়টেজি

বাইশ গজের যুদ্ধে কেকেআর অধিনায়কের কয়েকটা স্ট্র্যাটেজি বোঝা যায়নি। বাইশ গজের বাইরেও তাঁর স্ট্র্যাটেজি ঠিক একই রকম বোঝা গেল না! কড়া নিয়ম না হলেও আইপিএলের অলিখিত নিয়মে প্রাক্-ম্যাচ শুধু নয়, টিম ক্যাপ্টেন ম্যাচ শেষেও মাঝে মাঝে আসবেন।

বিধ্বস্ত। বুধবার কোটলায়। ছবি : উৎপল সরকার

বিধ্বস্ত। বুধবার কোটলায়। ছবি : উৎপল সরকার

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

বাইশ গজের যুদ্ধে কেকেআর অধিনায়কের কয়েকটা স্ট্র্যাটেজি বোঝা যায়নি। বাইশ গজের বাইরেও তাঁর স্ট্র্যাটেজি ঠিক একই রকম বোঝা গেল না!

কড়া নিয়ম না হলেও আইপিএলের অলিখিত নিয়মে প্রাক্-ম্যাচ শুধু নয়, টিম ক্যাপ্টেন ম্যাচ শেষেও মাঝে মাঝে আসবেন। সে টিম জিতুক বা হারুক। অধিনায়ক আসবেন, এসে মিটিয়ে যাবেন তাঁর স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কিত যাবতীয় মিডিয়া-কৌতুহল। নাইট অধিনায়ককে এমনিতে এত দিন টিম হারলে বা জিতলে দেখা যায়নি। কিন্তু তাই বলে টিমের আইপিএল বিদায়ের দিনেও তিনি মিডিয়ার সামনে আসবেন না?

পাঠিয়ে দেবেন বছর উনিশের কুলদীপ যাদবকে?

প্রথমে বিস্ময়। তার পর বিস্ময় কাটিয়ে এমন আশ্চর্য সিদ্ধান্তের তীব্র কারণ খোঁজাখুঁজি। গম্ভীর কি ভেঙে পড়েছেন? এতটাই ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছেন যে, মিডিয়ার মুখোমুখি হতে ইচ্ছে করছে না? শুনতে ইচ্ছে করছে না তাঁর ভ্রান্ত স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আগুনে সব প্রশ্নবাণ?

একটাও না। গম্ভীর আসেননি কারণ তিনি নাকি টিমের সেরা ক্রিকেটারকে পাঠাতে চেয়েছিলেন। যাঁর নাম কুলদীপ যাদব!

শোনা গেল, বরাবরের মতো কেকেআর ক্যাপ্টেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, টিম হেরে গিয়েছে। আইপিএলে আজকের পর থেকে আর নেই। কাকে পাঠানো হবে? শুনেটুনে কেকেআর অধিনায়ক নাকি বলে দেন, কুলদীপ। টিমের সেরা প্লেয়ারই যাবে। কেকেআরের চায়নাম্যান যে এ দিন টিমের সেরা, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে সময়, পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট বলেও একটা ব্যাপার থাকা উচিত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বরাবরের মিডিয়া-বীতশ্রদ্ধ বলে পরিচিত মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, টিম হেরে গেলে কিন্তু তাঁকেও প্রেস কনফারেন্স রুমে ঢুকতে দেখা যায়।

কোটলার মিডিয়াকে উপেক্ষা করে গেলেন বটে, কিন্তু কোটলা সংগঠকদের উপেক্ষা করা সম্ভব হল না। ম্যাচ শেষে তাঁদের মাইকের সামনে দাঁড়াতে হল। যেখানে কেকেআর অধিনায়ককে বলতে শোনা গেল, “উইকেটটা ভাল ছিল। ১৬৩ এখানে তাড়া না করে জেতার কোনও কারণ ছিল না।” কেকেআর অধিনায়ককে বলতে শোনা গেল, “কলিন মানরোর আউটটাই টার্নিং পয়েন্ট। কাউকে একটা যুবির মতো ইনিংস খেলতে হত। অবিশ্বাস্য খেলেছে ও। একাই ম্যাচ পাল্টে দিয়ে গিয়েছে। রাসেল থাকলে আমাদের ব্যাটে বাড়তি বারুদ থাকে। রাসেল বোলিংটাও দারুণ করে। আমরা আজ কোনও যুবি পেলাম না। কেউ ভাল পার্টনারশিপই দিতে পারল না।”

কেকেআর অধিনায়ককে তখন দেখলে মনে হবে যেন ম্যাচ পরবর্তী নাইট ডাগআউটের তাজা ভিডিওর রিপিট টেলিকাস্ট কেউ চোখের সামনে চালিয়ে দিয়েছে! ক্যাপ্টেন যেন সত্যিই গোটা টিমের চলমান বিষাদ প্রতিভূ। ম্যাচ শেষ হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরেও নিশ্চলের মতো চেয়ারে এ দিক ও দিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল টিম। মাথা উঠছে না, শরীর চলছে না, চোখ আবদ্ধ কোটলা-ভূমিতে। ওয়াসিম আক্রমকে প্রসন্ন ব্যক্তিত্ব বলেই ক্রিকেট-পৃথিবী জানে। কিন্তু এ দিনের কোটলা যাঁকে দেখল? দেখে মনে হল আত্মীয়বিয়োগ ঘটেছে। গম্ভীর কী করছিলেন, কী বলছিলেন, কতটা চূর্ণ হয়ে পড়েছিলেন, নতুন করে না বললেও চলে। সমর্থকরা টিভিতে সবই দেখেছেন। দেখেছেন প্রিয় টিমের যমুনাবক্ষে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া। জয়ের স্বর্ণ-সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও একটু একটু করে ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

ডেভিড ওয়ার্নার বোধহয় কেকেআরের কাটা ঘায়ে আরও নুনের ছিটে দিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, তাঁর টিম অন্তত দশ-পনেরো রান কম করেছিল। বলে গেলেন, তাঁর ব্যাট মোটেই ভাল চলেনি। শুনিয়ে দিলেন, কুলদীপ খুবই ভাল স্পিনার। কিন্তু যুবরাজের মতো প্লেয়ারও ক্রিকেট-বিশ্বে ঘোরাফেরা করেন যাঁদের ফিট মুভমেন্ট অসম্ভব ভাল। যা দিয়ে একটা কুলদীপ যাদব ম্যানেজ করে দেওয়া অসম্ভব ক্রিকেট-ক্যালকুলাস নয়।

শুনতে তো হবেই। এলিমিনেটর যুদ্ধে ১৬৩ তাড়া করে জিততে না পারলে অপমানের অ্যাসিড শরীর পুড়িয়ে দেবেই। এক দিক থেকে ভাবলে কোটলা থেকে আজ কিছু পানওনি গম্ভীর। দিল্লির ছেলে তিনি, কোটলা তাঁর বছরের বাকি দশ মাসের মাঠ। কিন্তু এ দিন পিচ থেকে শুরু করে পূর্ণ কোটলার উদাত্ত সমর্থন— একটাও পাননি কেকেআর অধিনায়ক। তাঁর বাউন্ডারিগুলো বিলবোর্ডে ধাক্কা খেতে দেখে হাজার কুড়ি যত না খুশি হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি তাদের উল্লসিত দেখিয়েছে যুবরাজ সিংহের প্রহারে। ম্যাচ শেষে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়া টিম চিয়ারলিডার ছাড়া পাশে বলতে ছিল সেই টিমেরই কয়েক জন। যাঁদের কাউকে কাউকে ম্যাচ শেষের দিকে কোটলা প্রেসবক্সে বিলাপ করতে শোনা যাচ্ছিল। মণীশ পাণ্ডে আউট হয়ে যাওয়ার পর সেগুলোও যেন কোথায় হারিয়ে গেল।

এবং যমুনাতীরে নাইট-স্বপ্নের মৃত্যুর ছবি দেখলে পাশাপাশি আরও একটা ছবি মনে পড়বে। না, উত্তর ভারতের নয়াদিল্লির কোনও ছবি নয়। দাক্ষিণাত্যের ছবি। মঙ্গলবার রাতে বেঙ্গালুরুর ছবি। আনন্দে উন্মত্ত হয়ে যাওয়া চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের এক একটা অমর ফ্রেম। চব্বিশ ঘণ্টা পরেও যে অমৃতে ডুবে থাকতে দেখা গিয়েছে বেঙ্গালুরুকে। এয়ারপোর্টের টিভিতে, রাস্তায়-ঘাটে, যুবক-যুবতীর আলোচনায়।

আর বেঙ্গালুরুবাসীকে এমন অমৃতকুম্ভের সন্ধান দিয়েছেন যিনি, অদৃষ্টের পরিহাসে তিনিও এক দিল্লিবাসী। বুধবারের পর একজন থাকলেন, আর একজন থাকলেন না। বিরাট কোহালি থাকলেন। গৌতম গম্ভীর থাকলেন না। শোনা গেল, কোহালি নাকি টিমকে এখন দু’দিন ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। যে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম থেকে তাঁর টিম নামবে ২৯ মে-র ফাইনালে।

গম্ভীরের সেখানে টিমকে আর বলার কিছু পড়ে থাকল না। বাড়তি ছুটি নিয়ে রাখা, সে সবের ব্যাপারও আর থাকল না।

বুধবার থেকে তো তাঁর পুরোটাই ছুটি, অখণ্ড অবসর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

twenty yard Knight Captain IPL 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE