Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
এমএসএনের ডেরায় আনন্দবাজার

ক্রুয়েফের স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন ‘ভলান্টিয়ার’ মেসি

ক্যাম্প টিটো ভিলানোভার মেন গেট থেকে সোজা যে রাস্তাটা সিকিউরিটি ব্যারিকেডে এসে ধাক্কা মেরেছে, তার ও পারেই ড্রেসিংরুমের বন্ধ দরজা। সামনেটা গাড়ি পার্ক করার জায়গা।

কৌশিক দাশ
বার্সেলোনা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৮
Share: Save:

ক্যাম্প টিটো ভিলানোভার মেন গেট থেকে সোজা যে রাস্তাটা সিকিউরিটি ব্যারিকেডে এসে ধাক্কা মেরেছে, তার ও পারেই ড্রেসিংরুমের বন্ধ দরজা। সামনেটা গাড়ি পার্ক করার জায়গা।

প্র্যাকটিস শেষ হয়ে গিয়ে‌ছে ঘণ্টাখানেক হল। একটু আগে লুইস এনরিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বেরিয়ে গিয়েছেন মিডিয়া সেন্টার থেকে। স্প্যানিশ মিডিয়া প্রতিনিধিরা স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সে সময় হঠাৎ-ই ড্রেসিংরুমের দরজাটা খুলে গেল।

আর বেরিয়ে এলেন তিনি!

সিকিউরিটি ব্যারিকেডের ও পাশটায় অনেকক্ষণ থেকেই পার্ক করা ছিল সাদা অডি এসইউভি-টা। ছাই রঙা টি-শার্ট, সাদা টুপির মালিক গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে উঠলেন, সিকিউরিটি গার্ডের দিকে তাকিয়ে একবার হাত নাড়লেন, স্বয়ংক্রিয় গেটটা খুলে গেল। মিলিসেকেন্ডের কম সময় বেরিয়ে গেল সাদা এসইউভি-টা।

লিওনেল মেসি প্র্যাকটিস শেষ করে বাড়ির পথ ধরলেন।

জানা গেল, ক্যাস্টেলদেফেলেসরে যে জায়গায় মেসির বাড়ি, স্বাভাবিক স্পিডে চললে মিনিট চল্লিশেক লাগা উচিত। মেসি যে গতিতে বেরিয়ে গেলেন, তার অর্ধেক সময়ে পৌঁছে যাওয়া উচিত বাড়িতে।

এটা যদি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়, তবে অস্বাভাবিক লাগছিল পরিবেশটা। শুধু অস্বাভাবিক কেন, গত কয়েক মিনিটের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে ‘অবিশ্বাস্য’ শব্দটা বোধহয় আরও ভাল খাটে।

দু’শো গজের মধ্যে দু’জন ছাড়া কাকপক্ষীও নেই। না ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী, না পুলিশ, না অটোগ্রাফ শিকারির ঝাঁক, না মিডিয়ার হুড়োহুড়ি, না টেলিভিশনের বুম। তা-ও কি না লা লিগার একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে, যখন কিনা বার্সেলোনা তিন নম্বরে নেমে গিয়েছে। আর একা-একা কে বেরিয়ে যাচ্ছেন প্র্যাকটিস সেরে? না, এই মুহূর্তে এই গ্রহের সেরা ফুটবলার! স্বয়ং ফুটবল ঈশ্বর।

ন্যু কাম্পে ম্যাচ থাকলেও বার্সেলোনা সেখানে প্র্যাকটিস করে না। করে এখন যেখানে লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি সরে এসেছে, সেই ক্যাম্প টিটো ভিলানোভায়। প্রয়াত কোচের নামে করা স্টেডিয়ামে। যেখানে বেশির ভাগ দিনই ক্লোজড ডোর প্র্যাকটিসে নামে বার্সেলোনা। শুক্রবার, গ্রানাডা ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিকদের পনেরো মিনিট ছাড়পত্র মিলেছিল প্র্যাকটিস দেখার।

এবং এই পনেরো মিনিটে টের পাওয়া গেল, জোহান ক্রুয়েফ কোথাও চলে যাননি, এখনও তিনি বার্সেলোনাতেই আছেন!

স্প্যানিশ সময় সকাল এগারোটা বেজে চুয়াল্লিশ মিনিট। প্রথম পাঁচ জন ফুটবলার নেমে যাওয়ার পর দেখা পাওয়া গেল তাঁদের। মহাবিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অ্যাটাকিং ফোর্স। পোশাকি নামটা ‘এমএসএন’। এটাও টের পাওয়া যাচ্ছিল যে, শুধু খেলার সময় নয়, তিনের বোঝাপড়ার ব্যাপ্তি এখন তার থেকে অনেক বেশি। মেসি-সুয়ারেজের ঠিক পরপরই নেইমার। মাঠে নেমে তিন জনই চলে গেলেন কোচ এনরিকের কাছে। সুয়ারেজকে নিয়ে আলাদা করে পড়লেন বার্সা কোচ। দু’হাত নেড়ে নেড়ে উত্তেজিত ভাবে তাঁকে কিছু বলতে শুরু করলেন। পাশে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছিলেন মেসি, একটু দূরে নেইমার। জানা গেল, ত্রিমূর্তি থাকেন শহরের প্রায় একই জায়গায়। নেইমার তো ছিলেনই, মেসির বাড়ির খুব কাছে এখন বাড়ি করে চলে এসেছেন সুয়ারেজও। যেটা প্রায় তাঁর বন্ধুর বাড়ির মতোই দুর্ভেদ্য। সাংবাদিক এবং ভক্তদের কাছে।

হঠাৎ মাঠ থেকে ভেসে এল একটা হুইসলের আওয়াজ। আর তার পরই বার্সেলোনা প্র্যাকটিসে ফিরে এলেন ক্রুয়েফ!

গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ফুটবলাররা। মাঝে তিন জন। এর পর শুরু হল খেলাটা। সার্কলে থাকা এক জন ফুটবলার বলটা ওয়ান টাচে পাঠাচ্ছেন অন্য এক জনের কাছে। মাঝের তিন জনের কাজটা হল সেই বল মাঝপথে ধরে নেওয়া। যার মারা বলটা ধরা হবে, সে তখন চলে আসবে সার্কলের মাঝে।

স্প্যানিশ ফুটবলমহলে এই ওয়ার্ম আপ কাম পাসিং গেমের নাম রন্ডো। যার ইংরেজি তর্জমা দাঁড়াচ্ছে সার্কল। জোহান ক্রুয়েফ নেদারল্যান্ডস থেকে যা নিয়ে এসেছিলেন বার্সায়। সঙ্গে থাকা লা লিগা প্রতিনিধি বলছিলেন, ‘‘দুটো কাজ হয় এই রন্ডোয়। এক, ওয়ার্ম আপ হয়ে যাচ্ছে প্লেয়ারদের। দুই, একই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে পাসিং স্কিল। সামনে থাকা তিন জনকে এড়িয়ে ওয়ান টাচে বলটা পাঠাতে হবে অন্য এক জনের কাছে। রন্ডোয় শাস্তি একটাই। যার পাস ধরে ফেলবে সার্কলের মধ্যে থাকা ফুটবলার, তাকে খাটান দিতে হবে সার্কলের মধ্যে এসে।’’

বলতে বলতে দেখা গেল সার্কলের মধ্যে চলে এসেছেন মেসি। সে কী, মেসির বাড়ানো পাস কি ধরে ফেলল কেউ? না, দেখা গেল ব্যাপারটা সে রকম নয়। মেসি নিজেই ভলান্টিয়ার করেছেন খাটান দেবেন বলে।

এখানে এসে লা লিগা এবং বার্সেলোনা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে শুনছি, সেই কর-বিতর্ক মামলা শুরু হয়ে যাওয়ার পর মেসি কথা বলা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকী কাতালান প্রেসের সামনেও নাকি মুখ খুলছেন না। তার উপর গত ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার দর্শকদের গালাগালি করে আরও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সম্ভবত মানসিক শান্তি ফেরাতেই এনরিকে কয়েক দিন ছুটি দিয়েছিলেন মেসিকে। পরিবার নিয়ে যে সময়টা মেসি কাটিয়ে এসেছেন প্যারিসে।

মেসির মানসিক শান্তি এখন আর কার কার অশান্তির কারণ হয়ে ওঠে, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Messi Johan Cruyff
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE