Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বোয়ার মন্থরতায় আক্রান্ত বাগানও

এক বছরেই পাল্টে গিয়েছে ছবিটা। গত মরসুমে কলকাতা লিগে তিন নম্বর ম্যাচে ড্রয়ের পরেই ট্রফিহীন থাকার আশঙ্কা গ্রাস করতে শুরু করেছিল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। আর বুধবার চলতি মরসুমে কলকাতা লিগের সেই তৃতীয় ম্যাচের পর জয়ের হ্যাটট্রিকে মশগুল বাগান সমর্থকরা দিয়ে বসলেন আত্মবিশ্বাসী স্লোগান।

ময়দানে বোয়ার প্রথম গোল। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

ময়দানে বোয়ার প্রথম গোল। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০০
Share: Save:

মোহনবাগান-২ (বোয়া, বলবন্ত)

কালীঘাট এমএস-০

এক বছরেই পাল্টে গিয়েছে ছবিটা।

গত মরসুমে কলকাতা লিগে তিন নম্বর ম্যাচে ড্রয়ের পরেই ট্রফিহীন থাকার আশঙ্কা গ্রাস করতে শুরু করেছিল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের।

আর বুধবার চলতি মরসুমে কলকাতা লিগের সেই তৃতীয় ম্যাচের পর জয়ের হ্যাটট্রিকে মশগুল বাগান সমর্থকরা দিয়ে বসলেন আত্মবিশ্বাসী স্লোগান। বিগত চার মরসুম ধরে ট্রফিহীন থাকায় পাড়ার চায়ের দোকানে, রকের আড্ডায় যে মুখগুলো লুকিয়ে পড়েছিল, সেই মুখগুলোই বলে উঠল, “পাস্ট ইজ হিস্ট্রি, ফিউচার ইজ ভিকট্রি।”

এ মরসুমে বাগান সমর্থকদের বিবর্ণ মুখে হাইভোল্টেজ হাসি ফিরিয়ে আনার মানসিক জড়িবুটি যিনি পকেটে গুঁজে দিয়েছেন তিনি সুভাষ ভৌমিক। বাগানের সেই টিডি সুভাষ যখন যুবভারতী ছাড়লেন, তখন তাঁকে ঘিরেও তাঁদের ট্রফি জয়ের আকুতির শেষ নেই। যা দেখে কালীঘাট মিলন সঙ্ঘকে ২-০ হারিয়ে ওঠা বাগান টিডির পাল্টা প্রশ্ন, “হারলেও এ ভাবে পাশে থাকবেন তো?”

বাগানে নিজের কোচিং জীবনের তৃতীয় ইনিংসে সুভাষের মূলমন্ত্র একটাই ট্রফি চাই যে কোনও মূল্যে। যার প্রথম ধাপ কলকাতা লিগ। কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের বিরুদ্ধে ৪-১-২-৩ ছকে টিম সাজিয়েছিলেন। ব্যাক ফোরের আগে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন শেহনাজ। তাঁর সামনে দুই মিডিও কাতসুমি এবং সৌভিক চক্রবর্তী। আক্রমণে জেজে, বলবন্ত, বোয়াদের ত্রিভুজ। যার প্রাবল্য আরও বাড়িয়েছিল দুই সাইড ব্যাক সতীশ-সৌভিকের ওভারল্যাপ। একমাত্র বিদেশি ওয়াহিদকে দিয়ে বাগানের এই ঝড় সামলানো সম্ভব ছিল না কালীঘাটের ছেলেদের। তবে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি বোয়া আর বলবন্তের হেডে ২-০ এগিয়ে যাওয়ার পর সবুজ-মেরুন সমর্থকরা যখন আরও গোলের অপেক্ষায় ঠিক তখনই আশ্চর্যজনক ভাবে মাঝমাঠে খেলাটা ধরে বসল কালীঘাট। মাঝমাঠে অনায়াসেই চার-পাঁচটা পাস খেলতে শুরু করে দিয়েছিল।

জাতীয় লিগ এবং আই লিগ মিলিয়ে তিন বারের খেতাব জয়ী সুভাষ যা আটকাতে দ্বিতীয়ার্ধে শেহনাজের পাশে কাতসুমিকে নামিয়ে চলে গেলেন ৪-২-৩-১-এ। এতে মাঝমাঠ দখলে এল ঠিকই কিন্তু সত্তর মিনিটের পর হঠাৎই মন্থর মোহনবাগান। যে সুযোগে শেষের দশ মিনিট কিংশুকদের সহ্য করতে হল ওয়াহিদদের চোখ রাঙানি। সুভাষ যদিও ম্যাচ শেষে বলে গেলেন, “শেষ চার দিনে দু’টো ম্যাচ খেললাম। ফের চব্বিশ তারিখ খেলতে হবে। দু’গোল হয়ে যাওয়ায় ছেলেদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, গোল যখন হয়ে গিয়েছে তখন না দৌড়ে বলের দখল নিজেদের পায়ে রাখো। ছেলেরা অক্ষরে অক্ষরে সেটাই করেছে।”

কিন্তু বলবন্তদের খেলা দেখে মনে হল ফিটনেসে আরও উন্নতি দরকার। আর বিপক্ষের আক্রমণের সময় সৌভিক, কাতসুমিদের আরও দ্রুত নেমে এসে ব্লকিং করতে হবে। যা এ দিন হয়নি। আর যুবভারতীর এবড়ো-খেঁবড়ো টার্ফ দলের খেলা মন্থর হওয়ার একটা বড় কারণ।

সুভাষের দলের আরও বড় খাটাখাটুনির জায়গাটা কিন্তু তাঁদের আইকন ফুটবলার। জার্সির পিছনে যাঁর পরিচয় পিবো নামে। ক্যামেরুনের সেই পিয়ের বোয়ার হেড, টাচ, টার্নিং ভাল। রক্ষণকে সাহায্য করতে নীচেও নামেন। কিন্তু গতি সেই মানের নয়। একে প্রাক-মরসুম প্রস্তুতি পর্বের পর দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, বহুদিন অনুশীলনে নেই। যে কারণেই বোধহয় এ দিন একের-বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে কাটিয়ে বেরোতে পারছিলেন না। যদিও ময়দানে প্রথম গোল করে বলে গেলেন, “বিপক্ষের মার্কিং এড়ানোর জন্যই উঠে-নেমে খেলতে পছন্দ করি। কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে থাকি না।” কিন্তু বাগানের ৪৩ নম্বর জার্সি আরও ঝকঝকে দেখাতে গেলে গার্সিয়ার কাছে আরও রগড়ানি দরকার।

যুবভারতীর ভিআইপি বক্স থেকে বাগানের এই হালহকিকত মেপে গেলেন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা। যুবভারতী ছাড়ার সময় জেনে ফেলেছেন তাঁর ক্লাবের খারাপ খবর। দুঃসময়েও লাল-হলুদ সমর্থকদের আশ্বস্ত করে অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া, “আল ইজ ওয়েল।”

মোহনবাগান: শিল্টন, সতীশ, কিংশুক, ধনচন্দ্র, সৌভিক, শেহনাজ, সৌভিক চক্রবর্তী (পঙ্কজ), কাতসুমি, জেজে (সাবিথ), বলবন্ত (রাম), বোয়া।

বুধবার

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ: মহমেডান : পুলিশ এসি (বারাসত, ৪-০০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE