Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বড় ম্যাচের আগে আজ বাগানের বদলার লড়াই

সকাল থেকে গ্যালারিতে বাবার সঙ্গে বসে ছিল বছর কুড়ির ওই কিশোরী। সনি নর্ডির সঙ্গে একটা সেলফি তোলার আশায়।

প্র্যাকটিসে থাকলেও আজ অনিশ্চিত সনি। ছবি: উৎপল সরকার।

প্র্যাকটিসে থাকলেও আজ অনিশ্চিত সনি। ছবি: উৎপল সরকার।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

সকাল থেকে গ্যালারিতে বাবার সঙ্গে বসে ছিল বছর কুড়ির ওই কিশোরী। সনি নর্ডির সঙ্গে একটা সেলফি তোলার আশায়।

ঘণ্টাখানেক মাঠের বাইরে ফিজিকাল ট্রেনিং করে ফেরার পথে সোনালি চুলের মোহনবাগান জনতার হার্টথ্রবের দেখা পেলও সে। ছবিও তুলল হাসিহাসি মুখ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে, আসল ইচ্ছেটাই পূরণ হল না তাঁর। ফেসবুকে পোস্ট করা হল না গর্বের ছবিটা। কারণ আষাঢ়ে মুখ করে তাঁবু ছেড়ে বেরনোর সময় হাইতি স্ট্রাইকার বলে গেলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ আইজল ম্যাচটা খেলতে পারব না। চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এখনও ব্যথা আছে। পরের এএফসি ম্যাচ থেকেই শুরু করব ঠিক করেছি।’’ আর সনির কথা শুনে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা আহিরীটোলার মেয়ের মুখ থেকে বেরোল, ‘‘ছবিটা পোস্ট করলে লাইক পড়বে না একটাও। ও তো খেলছেই না।’’

মাঘের ময়দান জুড়ে এখন রং আর রং। কোথাও পলাশ ফুলের আগুন। কোথাও দেখা যাচ্ছে হলুদ-কমলা গাঁদা ফুল হাজারে হাজারে। বাগান তাঁবুর বাইরেটাও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ভিতরটা? শুক্রবার সকালে অদ্ভুত ধরনের শীতলতা সেখানে, শীত চলে যাওয়ার পরও কেমন যেন রুক্ষ রুক্ষ সবকিছু! কেমন যেন জড়সড়!

গতবারের সেই রক্তাক্ত হওয়ার দিনটা তা হলে ভোলেননি সঞ্জয় বাহিনীর কেউ-ই। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরুর সঙ্গে রেসের ঘোড়ার মতো দৌড়তে দৌড়তে সে দিনই তো প্রথম খেতাব থেকে দূরে সরে যাওয়ার শুরু সনিদের। আইজলের মাঠে ম্যাচ হেরে বসে যেতে শুরু করেছিল বাগান রথ। আর পারেননি সনিরা। সেই দুঃখের স্মৃতি শুক্রবার সকালেও মুখে মুখে ঘুরছিল সবুজ-মেরুন তাঁবুতে। গতবার ম্যাচের পর আবার আজ শনিবার আই লিগে দেখা হবে বাগান আর পাহাড়ের। সে জন্যই কি এ রকম থমথমে চারিদিক।

‘‘ডার্বি নিয়ে ভাবব পরে। এখন আমার মাথায় শুধুই আইজল। আমরা যাদের হারাতে পারিনি সেই শিবাজিয়ান্সকে হারিয়ে এখানে এসেছে ওঁরা। খুব ভাল খেলছে টিমটা,’’ বলতে বলতে পাশে বসে থাকা জেজের দিকে তাঁকান সঞ্জয় সেন। বাগান কোচের হাতে এখনও প্লাস্টার। তাঁর টিমের চোট-আঘাতও তো অনেক। কুড়ি জনের দলে বেছে রাখলেও সনির খেলার সম্ভাবনা নেই-ই। আর এক বিদেশি এডুয়ার্ডো, তিনিও তো কোমরের ব্যথায় বাইরে। বলবন্ত সিংহ, রাজু গায়কোয়াড়েরও চোট। এই অবস্থায় গোলের জন্য জেজের দিকে বাগান-কোচকে তো তাকিয়ে থাকতে হবেই। মিজো ভূমিপুত্রই যে আজ বাগানের কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার প্রধান অস্ত্র। জেজে সেটা বেশ উপভোগও করছেন মনে হল। ‘‘মিজোরামের কোনও টিমের বিরুদ্ধে খেলতে নামলেই বাড়তি একটা মোটিভেশন পাই। গোল করার জন্য মরিয়া হতে ইচ্ছে করে। মিজোরামের অনেকে কাল খেলা দেখতে আসবে। দেখবেন ওদের অনেকেই আমার জন্যও প্রার্থনা করবে,’’ বলতে বলতে কঠিন হয় দেশের সেরা স্ট্রাইকারের মুখটা। মনে হয়, চোট সারিয়ে ফেরা জেজে যেন এই মঞ্চটার অপেক্ষায় ছিলেন। সে জন্যই রবীন্দ্র সরোবরে ডুব দিয়ে গোল নামক মুক্তো তুলে আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। ড্যারেল ডাফিকে সঙ্গী করে।

কিন্তু সেই সুযোগ কি তাঁকে দেবেন আই লিগের সবথেকে কমবয়সি কোচ খালিদ জামিল। অনুশীলনে নামার আগে বাগান-তাঁবুতে সঞ্জয় প্রোজেক্টরে আইজলের বেশ কয়েকটি ম্যাচের ভি়ডিও ফুটেজ দেখিয়েছেন ছাত্রদের। সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ম্যাচেই গিরগিটির রং বদলের মতোই ম্যাচ ধরে ধরে ফর্মেশন বদল করেন আইজল কোচ। কখনও ৪-৩-২-১, কখনও ৪-৪-২, কখনও আবার ৪-৫-১। শুধু তাই নয়, প্রতিপক্ষের শক্তি লুকিয়ে আছে সেট পিস আর গতিতে। আর সেটা দেখেই এ দিন অনুশীলন হল স্ট্র্যাটেজি তৈরি হল বাগানে। যা শুনে আইজল কোচ খালিদ হাসলেন, ‘‘আমাদের কোনও ফর্মেশন নেই। ফর্মেশন একটাই হয় জেতো নয় তো ড্র করো। বাইরে খেলতে এসেছি, হেরে না ফিরলেই হল।’’ বাগানের মতো দেশের তারকা সমৃদ্ধ দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে খালিদের গলায় কেন এত জোর? মনে হচ্ছে দুটো কারণে। এক) পুরনো দল ছেড়ে আসার সময় আশুতোষ মেহতা আর জয়েশ রাণের মতো দুটো ঝকঝকে অস্ত্র সঙ্গে করে এনেছেন খালিদ। দুই) সিরিয়ান মিডিও মাহমুদ আমান্না আসার পর আইজলের মাঝমাঠ শক্তিশালী হয়েছে।

এসব দেখেই বাগান সতর্ক। এমনিতে তাদের টপকে ইস্টবেঙ্গল শীর্ষে চলে গিয়েছে। সামনে ডার্বি। তার আগে খেতাব যুদ্ধের লড়াইতে থাকতে হলে আইজলকে হারাতেই হবে প্রীতম-শৌভিকদের। আবার এটাও বাগান কোচকে মাথায় রাখতে হচ্ছে যে, আট দিনে আই লিগ এবং এএফসি মিলিয়ে তিনটে ম্যাচ খেলতে হবে কাতসুমিদের। সে জন্যই শুক্রবার সকালের অনুশীলনে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ সব অঙ্কই করলেন সঞ্জয়। আর বললেন, ‘‘টিমে প্রচুর চোট-আঘাত। তিন বছরে এত চোট কখনও হয়নি। মনে হচ্ছে আইএসএলের জন্যই এই অবস্থা।’’ চোট সারিয়ে কিংশুক দেবনাথ অবশ্য ফিরছেন প্রথম এগারোয়। আনাসের সঙ্গী হিসাবে। সামনে ডাফির সঙ্গে জেজে। সনি-র জায়গায় প্রবীর দাশ। আপাতত এ রকম টিমই সঞ্জয় ভেবে রেখেছেন পাহাড় বধের জন্য।

গোয়ায় ফুটবল উঠে যাওয়ার মুখে। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোই এখন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে জেজে-জোজোরা। আইজলের এই টিমটাতেই তাদের জুনিয়র টিমের পাঁচ ফুটবলার খেলছে। এবং বেশ দাপট দেখিয়েই।

লিগ টেবলের এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকা সঞ্জয় বনাম খালিদ যুদ্ধ তাই হতে চলেছে অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের। দেখার, ডার্বির আগে বাগান-ব্রিগেড পাহাড়ি কাঁটা উপড়ে ফেলতে পারে কি না? কাজটা কিন্তু সহজ নয়।

শনিবারে আই লিগ ফুটবল

মোহনবাগান: আইজল এফসি (রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম ৭-০৫)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sony Norde Mohun Bagan Aizawl FC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE