Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ক্রিকেট খেলার স্বপ্নই দেখিনি, বলছেন নতুন রঞ্জি নায়ক

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করতে ভালবাসতেন। বড় হয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। সেই মতোই শুরু হয়েছিল পড়াশোনা। কে জানত, নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’-এর গোল্ড মেডেলিস্ট একদিন চেতেশ্বর পুজারাকে বোকা বানিয়ে আউট করবেন? এক বার নয়, একই ম্যাচে দু’বার। বিদর্ভের বাঁ হাতি স্পিনার আদিত্য সরওয়াটের কাহিনি যে এ রকমই অভাবনীয়!  

লক্ষ্য: ইরানি ট্রফিতেও সাফল্যের খোঁজে আদিত্য। ফাইল চিত্র

লক্ষ্য: ইরানি ট্রফিতেও সাফল্যের খোঁজে আদিত্য। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করতে ভালবাসতেন। বড় হয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। সেই মতোই শুরু হয়েছিল পড়াশোনা। কে জানত, নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’-এর গোল্ড মেডেলিস্ট একদিন চেতেশ্বর পুজারাকে বোকা বানিয়ে আউট করবেন? এক বার নয়, একই ম্যাচে দু’বার। বিদর্ভের বাঁ হাতি স্পিনার আদিত্য সরওয়াটের কাহিনি যে এ রকমই অভাবনীয়!

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নেথান লায়ন, মিচেল স্টার্কদের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়ে ফিরে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে শূন্য এবং এক রান করেন পুজারা। কী ভাবে সম্ভব হল আদিত্যর এই পুজারা-দমন? শুক্রবার নাগপুর থেকে আনন্দবাজারকে ফোনে রঞ্জি ফাইনালের নায়ক বললেন, ‘‘পুরোটাই দলগত প্রয়াসের ফল। ফাইনালের আগে আমরা নিয়মিত পুজারার ভিডিয়ো দেখেছি। ইনিংসের শুরুতে ও নড়বড়ে থাকে। সেটারই সুযোগ তুলেছি আমরা। প্রথম ইনিংসে আমার বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ঠিক করেছিলাম ওর বিরুদ্ধে আর্মার ব্যবহার করব। সেই পরিকল্পনাতেই সাফল্য আসে। এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যায় পুজারা।’’

বিশ্বাস করেছিলেন, বিদর্ভকে রঞ্জি ট্রফি জেতাবেন? ২৯ বছর বয়সি অলরাউন্ডারের উত্তর, ‘‘কোনও দিন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নই দেখিনি। ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি আমার বেশি টান। বাড়িতে বসে পড়তেই ভাল লাগত। বন্ধুও বেশি ছিল না। ক্রিকেট ভাল লাগলেও পাড়ায় খেলতাম না। স্কুল ক্যাম্পে মাঝেমধ্যে যেতাম। দেখতাম আমি বেশ ভাল ব্যাট করতে পারি। বলও খারাপ করি না। সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ে।’’

রঞ্জি ট্রফিতে চলতি মরসুমে ১১ ম্যাচে ৫৫ উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ফাইনালেই নিয়েছেন ১১ উইকেট। ৩৬০ রানও করেছেন আদিত্য। ১৮ বছর বয়সে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্নকে পিছনে ফেলে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে পূরণ করতে লেগে পড়েন তিনি। ভর্তি হন বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থা আয়োজিত সারা বছর ধরে চলতে থাকা শিবিরে। আর পিছনে তাকাতে হয়নি এই অলরাউন্ডারকে। আদিত্য বলছিলেন, ‘‘ব্যাটসম্যান হিসেবেই অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ প্রতিযোগিতায় খেলি। পার্টটাইম বোলার হিসেবে সাফল্যও আসতে শুরু করে জাতীয় স্তরে। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়িনি। প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় নিয়মিত বই নিয়ে বসতাম। বই পড়া আমার এক রকমের নেশা।’’

বহু ঝড়-ঝাপটার মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে আদিত্যকে। ছোটবেলায় পথ দুর্ঘটনায় আহত হন আদিত্যর বাবা। কোমায় চলে গিয়েছিলেন। সেই থেকে হুইলচেয়ারই সঙ্গী তাঁর। সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর মায়ের উপর। আদিত্যর কথায়, ‘‘সেই সময়ের কথা চিন্তা করলে আজও কষ্ট হয়। বাবার দুর্ঘটনার পরে মা গোটা সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সকালে বাবাকে ওষুধ খাইয়ে আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। তার পরে রান্না করে নিজে চাকরি করতে বেরোতেন। মায়ের থেকেই জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেয়েছি। এখন আর কোনও কিছুতেই ভয় পাই না।’’ আদিত্য জানিয়েছেন, বিদর্ভের বাকি ক্রিকেটারেরাও তাঁর মতোই নাছোড়। বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রত্যেক ক্রিকেটারকে ছোটবেলা থেকেই মেন্টাল কন্ডিশনিংয়ের ক্লাস করতে হয়। টেকনিকে উন্নতি করার থেকেও মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে হয় বেশি। যার ফল, টানা দ্বিতীয় বার রঞ্জি ট্রফি জয়। ‘‘শিবিরে যোগ দেওয়ার পরেই মেন্টাল কন্ডিশনিং ও ফিটনেস বাড়ানোর ক্লাস করতে হয় প্রত্যেককে। একটি বিভাগে ব্যর্থ হলে সুযোগ দেওয়া হয় না প্রথম একাদশে। টানা দ্বিতীয় বার রঞ্জি ট্রফি জয়ের এটাই অন্যতম কারণ,’’ সাফ জানিয়ে দেন আদিত্য।

ভারতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন থাকলেও নিজের চাপ বাড়াতে চান না। বললেন, ‘‘যে নিয়মের মধ্যে রয়েছি, তা চালিয়ে যেতে পারলে ভাল ফলই হবে। বাকিটা নির্বাচকদের হাতে। সামনে ইরানি কাপ। সেখানে আরও একটি ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স করাই

আমার লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Ranji Trophy Vidarbha Aditya Sarwate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE