n অ্যাথলেটিক্স মিটে শ্যামা (ওপরে, বাঁদিক থেকে দ্বিতীয়)। গোরাবাজারের বাড়িতে (নীচে)। —নিজস্ব চিত্র
জীবনে প্রথমবার চার কেজি ওজনের লোহার বল ছোড়ার ( শট পাট) ঘটনাটা এখনও শ্যামা উপাধ্যায়ের দিব্যি মনে আছে। জাতীয় স্তরে বহু স্বর্ণপদক জয়ী মহিলা শট পাটার শ্যামা প্রথম দিকে জিমন্যাস্টিক্স করতেন। কিন্তু ১২ বছর বয়সে একদিন চার কেজি ওজনের লোহার বলটা অন্য মেয়েদের চেয়ে অনেক দূরে ছুড়ে কোচকে অবাক করে দেন তিনি। ৬১ বছর বয়সে পৌঁছেও ছোটবেলার সেই ঘটনা এখনও স্পষ্ট মনে আছে প্রাক্তন শট পাটার শ্যামা উপাধ্যায়ের।
স্মৃতির সরণি বেয়ে ছোট বয়সের আরও অনেক ঘটনাই এখনও মনে করতে পারেন তিনি। বলছিলেন, কোচের ধমক খেয়ে শট পাট অনুশীলন শুরু করেন। সেসময় রেল দলের প্রশিক্ষক সুধীর পাল, কুন্তল রায়দের কাছে আরেক শট পাটার সুব্রতা দেবনাথের সঙ্গে অনুশীলন করতেন তিনি। সেই কঠোর অনুশীলনই জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় জুনিয়র ও সিনিয়র বিভাগে তাঁকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। অল ইন্ডিয়া কোলফিল্ড অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১৯৮২ থেকে ’৯১ পর্যন্ত টানা সেরা হয়েছিলেন শ্যামা। এর পাশাপাশি ১৯৭৫ থেকে ’৯২ সাল পর্যন্ত একাধিক জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় তিনি পদক জিতেছেন। বার্ধক্যে পৌঁছেও প্রবীণদের আন্তঃজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সেরা হন তিনি।
শট পাটে সাফল্যের জন্যই ১৯৭৯ সালে জামশেদপুরে টাটা স্পোর্টস অ্যাকাডেমির স্পোর্টস অর্গানাইজার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন শ্যামা। পরবর্তীকালে ওই অ্যাকাডেমির স্পোর্টস অফিসার পদে একটানা চাকরি করে ১৯৯৭ সালে তিনি স্বেচ্ছা-অবসর নেন। ইতিমধ্যে নামী ক্রীড়াবিদ অশোক উপাধ্যায়কে তিনি বিয়ে করেন। বহরমপুরে ফিরে আসার পরও শট পাট এবং ক্রীড়া জগৎ ছাড়েননি শ্যামা। বর্তমানে তিনি ‘মাস্টার্স অ্যাথলিট অ্যাসোসিয়েশন অফ মুর্শিদাবাদ’এর সাধারণ সম্পাদক।
বহরমপুরের গোরাবাজারের বাবুপাড়ার বাড়িতে বসে শ্যামা কেরিয়ারের নানা বর্ণময় অধ্যায়ের কথা বলছিলেন। জানালেন, টাটার অ্যাকাডেমিতে এশিয়াডে সোনাজয়ী শট পাটার বাহাদুর সিংহ চৌহানের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এতে তাঁর টেকনিক অনেক উন্নত হয়। ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক মহিলাবর্ষের ক্রীড়া উৎসবেও তিনি পদক জিতেছেন। ওই বছরই জাতীয় গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শট পাটে প্রথম হন তিনি। ১৯৮৬ সালে আগরতলায় আন্তঃরাজ্য জাতীয় অ্যাথলেটিক্স মিটে সোনা জেতেন। তবে অনেক পদক জয় করলেও একটা আক্ষেপ এখনও রয়ে গিয়েছে শ্যামার। তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় স্কুল গেমসে ১৩.৩৪ মিটার বল ছুড়ে তিনি জাতীয় রেকর্ড গড়েছিলেন। পরবর্তীকালে অনেক চেষ্টা করেও তার চেয়ে দূরে বল ছুড়তে পারেননি।
শট পাটে এই সাফল্যের কারণ কী? শ্যামা বললেন, ‘‘আমি শট পাটেই মনোনিবেশ করেছিলাম। অন্য কোনও খেলায় যাইনি। তাছাড়া ছোট বয়স থেকেই কঠোর অনুশীলনকেই জীবনের মন্ত্র বানিয়ে নিয়েছিলাম। বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য কী পরামর্শ দেবেন? তাঁর উত্তর, ‘‘আমাদের জেলায় প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু তারা বেশিদূর এগোতে পারছে না। যদি কোনও পেশাদার প্রশিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেত ওরা, তবে ভাল হত। সঙ্গে চালাতে হবে কঠোর অনুশীলন। কারণ সাফল্যের কোনও শর্টকাট হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy