Advertisement
E-Paper

ডার্বির হৃদয় দর্শক, চেয়ে দেখি তাঁদের

ফুটবলের সঙ্গে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের ছোটবেলার সম্পর্ক। শৈশবে ট্রাকে চেপে তিস্তা চরে পাড়ার পিকনিকে যাওয়ার সময়ে একটি ফুটবলও ট্রাকে চড়ে বসত। বিচ-ভলিবলের মতোই ফুটবল চলত।

টিপলু বসু

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০১

ফুটবলের সঙ্গে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের ছোটবেলার সম্পর্ক। শৈশবে ট্রাকে চেপে তিস্তা চরে পাড়ার পিকনিকে যাওয়ার সময়ে একটি ফুটবলও ট্রাকে চড়ে বসত। বিচ-ভলিবলের মতোই ফুটবল চলত। বলটিকে কোনও ভাবে নদীতে ফেললেই হল, তার পর বড়দের রে রে অগ্রাহ্য করে দৌড়ে জলে ঝাঁপ দিয়ে তাকে উদ্ধার করে আবার খেলায় মেতে ওঠা। এ ভাবে শৈশবেই আনন্দ ও ফুটবল মিলেমিশে গিয়েছিল।

প্রতিদিনের বিকেলগুলোও ছিল ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্কিত। দু’ভাই রোজ স্কুলের শেষে জামা-কাপড়ে কাদা মেখে বগলে ফুটবল নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়ি ঢুকত। মার বকুনি ও ফুটবল খেলা অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে থাকত কৈশোরে। আমার মতো মফস্বলের মেয়ের কাছে ফুটবলের তেমন কোনও গুরুত্ব ছিল না। প্রথম ফুটবল খেলার দৃপ্ত ছবি দেখেছিলাম আমার বন্ধু অনামিকার কাছে। ওর জেঠু মণিলাল ঘটক গোলরক্ষক ছিলেন। ছবিতে উনি গোল বাঁচিয়ে বল হাতে বিজয়গর্বে তাকিয়ে রয়েছেন। ওঁর কপালের একপাশ কেটে দরদর করে রক্ত গড়াচ্ছে। অনামিকার জেঠুকে নিয়ে গর্ব আমাদেরও ছুঁয়েছিল। একটু বড় হয়ে মতি নন্দীর লেখা ‘স্ট্রাইকার’ ‘স্টপার’ ফুটবলকে অন্য পরিচয় দেয়।

ছোটবেলায় চা বাগানের মালিকরা—সত্যেন্দ্রপ্রসাদ রায়, তাঁর ছেলে ধ্রুবপ্রসাদ রায় প্রমুখ খেলাধূলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। ভাল খেলোয়াড় হলে চা বাগানের অফিসে বা বাগানে চাকরি হতো। তাই জলপাইগুড়ি জেলার ছেলেদের ফুটবলে আগ্রহ ছিল। টাউন ক্লাব মাঠে শহরের দলগুলি এমনকী বাইরে থেকে আসা দলের মধ্যেও নিয়মিত খেলা লেগেই থাকত। আমরা ভাইবোনেরা বাবার হাত ধরে সেই ম্যাচ দেখতে যেতাম। স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার অদম্য সুখ উপভোগ করতাম। সংসারের চাপে পিষ্ট কর্মব্যস্ত বাবাকে ওই টুকু সময়ে উচ্ছ্বসিত দেখে খুব ভাল লাগত। এ ভাবেই ফুটবল ভাবনা আমার জীবনে সঞ্চারিত হয়েছে ধীরে ধীরে। আমার কাকা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের দলে ফুটবল খেলেছেন। তবে জলপাইগুড়িবাসীর গর্ব হলেন কিংবদন্তী পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়।

ফুটবলের অসংখ্য বিন্দু এ ভাবেই ঘিরে আছে জল-শহরের মন, জেলার জীবনে। চারদিকে আজ উচ্চারিত একটাই শব্দ-‘ডার্বি’। উত্তরবাংলায় তথাকথিত বাঙালদের সংখ্যা বেশি। তাই ইস্টবেঙ্গলের অনুগামী বেশি।

জানি না দিন কে হাসবেন-সঞ্জয় সেন নাকি ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। শুধু জানি তিস্তা-করলা-মহানন্দার দেশের মানুষরা রবিবার সন্ধ্যে সাতটা থেকে পাহাড়ের সানুদেশ আলো করা স্টেডিয়ামে বসে ফুটবল প্রেমে মেতে উঠবেন। গঙ্গাপাড়ের সমর্থকেরাও এই আনন্দে সামিল হবেন। দু’টি দলের মাঠজোড়া লড়াই-এর আঁচে দর্শকরা সেঁকে নেবেন উত্তেজনায় গনগনে তাঁদের মন। দর্শকরাই খেলবেন প্রকৃত খেলা। ডার্বির হৃদয় তো দর্শকই। আমি তাঁদের অনুভূতি দেখি দূর থেকেই।

Derby match Supporters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy