Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
দল নির্বাচন করি না, একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন মহেশ ভূপতি

আগে তো শুধু লি-হেশ ছিল, আমার হাতে অনেক বিকল্প

দেশের সর্বকালের সেরা টেনিস জুটির অংশ তিনি। কিন্তু মনে করছেন, তাঁদের সময়কার ভারতীয় টেনিস ছিল দুই তারকা নির্ভর। এখন অনেক বেশি গভীরতা যোগ হয়েছে, অনেক সম্পূর্ণতা এসেছে। ইটালির বিরুদ্ধে দ্বৈরথে রোহন বোপান্নাদের নেতৃত্ব দিতে বুধবারই কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। ব্যস্ততা আর হুড়োহুড়ির মাঝেও ক্যালকাটা জিমখানায় প্র্যাক্টিসের পরে মহেশ ভূপতি একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।  ব্যস্ততা আর হুড়োহুড়ির মাঝেও ক্যালকাটা জিমখানায় প্র্যাক্টিসের পরে মহেশ ভূপতি একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।  

মহড়া: ইটালি ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু। সাউথ ক্লাবে বোপান্নাকে নিয়ে ব্যস্ততা ভূপতির। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

মহড়া: ইটালি ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু। সাউথ ক্লাবে বোপান্নাকে নিয়ে ব্যস্ততা ভূপতির। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৪
Share: Save:

প্রশ্ন: দু’বছর হয়ে গেল ডেভিস কাপের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন। এই দু’বছরের যাত্রা কেমন হল?

মহেশ ভূপতি: আমার যাত্রাটা তো এখন পুরোপুরি ছেলেদের উপরে নির্ভরশীল। বলব, খারাপ হয়নি। ছেলেরা ভাল খেলেছে, নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিচ্ছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে আমরা উপরে উঠেছি। আমাদের দলে এখন বেশ গভীরতা রয়েছে।

প্র: দলে গভীরতা এসেছে বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?

ভূপতি: গত কয়েক দশকের ভারতীয় ডেভিস কাপ টিমগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিমগুলো ছিল দু’জনের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। এখন তা নেই। অনেক পরিপূর্ণ আকার ধারণ করেছে। অনেক বেশি ‘অপশন’ রয়েছে কোচ বা ক্যাপ্টেনের হাতে। সেটাকেই সব চেয়ে বড় ইতিবাচক দিক বলে মনে করছি আমি।

প্র: নাম-নির্ভর, বিতর্কবিদ্ধ ভারতীয় টেনিসকে একসূত্রে বাঁধাটাই কি নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল?

ভূপতি: আমি পুরোপুরি মানতে রাজি নই যে, আগে দলগত ব্যাপারটা ছিল না। ডেভিস কাপে খেলার সময়ে আমরা সব সময়েই টিম হিসেবে খেলেছি। গোটা দল এককাট্টা হয়ে লড়েছি, একটাই পরিবারের মতো থেকেছি। আমি যখন খেলতাম, তখনও টিম হিসেবে ভাল করার ভাবনাটাই সব সময় অগ্রাধিকার পেয়েছে। সেই পরম্পরাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অতীতে যা হয়েছে, বর্তমানেও তাই হচ্ছে, ভবিষ্যতেও তাই যেন হয়। ডেভিস কাপে দলগত ভাবনাটা আনার জন্য তাই কাউকেই বেশি কিছু পরিশ্রম করতে হবে না।

প্র: ইটালি র‌্যাঙ্কিংয়ে দশ নম্বরে থাকা দল। আপনার স্ট্র্যাটেজি ওদের ঘাসের কোর্টে ফেলা। তাই কলকাতায় খেলা হচ্ছে। কতটা তৈরি ভারত?

ভূপতি: ঘাসের কোর্ট বেছেছি কারণ, এটাই ইটালিকে হারানোর সেরা সুযোগ। কেউ অস্বীকার করবে না যে, ওরা আমাদের চেয়ে ভাল দল। অনেক শক্তিশালী দল। প্রথম পঞ্চাশে ওদের চার-পাঁচ জন খেলোয়াড় আছে। আমাদের লক্ষ্য হবে, অঘটন ঘটানো। নিজেদের জন্য সব রকম সুযোগ তৈরি করতে হবে যাতে ওদের আমরা হারাতে পারি। তার জন্য আমার মনে হয়েছে, ইটালিকে ঘাসের কোর্টে ফেললে আমাদের জন্য সেরা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

প্র: ভারতীয় টেনিসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও লি-হেশ নেই। নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের কাজ কতটা কঠিন?

ভূপতি: লি-হেশ নেই কিন্তু নতুন অনেক মুখ আসছে। তারা রীতিমতো উত্তেজক সব প্রতিভা। প্রজ্ঞেশ (গুনেশ্বরণ), ইউকি ভামব্রিরা একশো র‌্যাঙ্কিংয়ের আশেপাশে চলে এসেছে। নতুন অনেক ছেলেকে বেশ প্রতিশ্রুতিমান দেখাচ্ছে। মনে হয় না ভারতীয় টেনিসে এতটা গভীরতা আগে কখনও দেখা গিয়েছে বলে। এক জন বা দু’জন নির্ভর থেকে ভারতীয় টেনিসের এখন সব মিলিয়ে মান অনেক উন্নত হয়েছে। আমি বলব, পুরুষদের টেনিসে অবশ্যই বাতাসে একটা উত্তেজনা রয়েছে। সেটা খুবই ইতিবাচক দিক। এখন আমাদের কাজ হবে, ঠেলা দিয়ে ওদের আরও উপরে তোলা। একশোর আশেপাশে থাকলেই চলবে না, এখন আশি বা পঁচাত্তর র‌্যাঙ্কিংয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

প্র: নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে নিজের জন্য আপনি কি নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্য স্থির করছেন?

ভূপতি: অবশ্যই। আমি চাই ডেভিস কাপে দলের মূল্যবান এক সদস্য হতে। যে কি না এই সব প্রতিভাবান ছেলেদের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারবে। যদি কেউ সত্তর শতাংশ থাকে, নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন যেন তাকে নব্বই শতাংশে নিয়ে যেতে পারে। ছেলেদের এবং ভারতীয় দলের সার্বিক উন্নতির জন্য যে রকম পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নেওয়ার দরকার, সেটা যেন নিতে পারি। শুধু এই দু’বছর বলে নয়, ভবিষ্যতেও যেন সেই ভূমিকা পালন করে যেতে পারি।

প্র: তার মানে বলাই যেতে পারে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের ভূমিকা বেশ উপভোগই করছেন?

ভূপতি: আমার এই কাজটা ভাল লাগছে কারণ, ছেলেদের থেকে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। সব সময় আমাদের মধ্যে যোগাযোগ থাকে। এটা শুধু টেনিস কোর্টে চার ঘণ্টা এক সঙ্গে কাটানোর ব্যাপার নয়। সম্পর্কের রসায়নটা তখনই তৈরি হয় যদি কোর্টের বাইরেও আপনি বন্ধনটাকে নিয়ে যেতে পারেন। আমি সেটাতেই বিশ্বাস করি আর সে ভাবেই চলার চেষ্টা করি। ছেলেরা সাড়া দিচ্ছে দেখে আরও বেশি উপভোগ করছি। আমার মনে হয়, একটা ভাল টিম গড়ে তোলার জন্য এই পারস্পরিক মেলবন্ধনটা খুব জরুরি। আমি সম্পর্কের রসায়নের উপর বেশি জোর দিতে চেয়েছি। এর পর আমরা যত ভাল খেলতে থাকব, যত কোর্টের মধ্যে উন্নতি করতে থাকব, তত টিম হিসেবে এগোব।

প্র: যদি কেউ জানতে চান, ভারতীয় টেনিসে পরের লি-হেশরা কবে আসবেন, কী বলবেন?

ভূপতি: বলব, এক দিনে তো কেউ বড় নাম হয়ে যায় না। অপেক্ষা করুন, দেখতে থাকুন, ঠিকই পরের বড় নাম উঠে আসবে ভারতীয় টেনিসে।

প্র: যা প্রতিভা দেখছেন বা যে সব ছেলেদের হাতে পাচ্ছেন, তা নিয়ে তা হলে আপনি খুশি?

ভূপতি: খেলায় খুশি হওয়ার কোনও সীমারেখা নেই। আরও উন্নতির জায়গা সব সময় রয়েছে। কিন্তু এক্ষুনি যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব, নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে কোনও অভিযোগ নেই। আমি টিমের গভীরতা দেখে খুশি। আমার হাতে নানা বিকল্প রয়েছে। আমার সময়কার নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের কথা ভাবুন। তাঁর হাতে কিন্তু এত বিকল্প ছিল না, ছিল শুধু লি-হেশ। কিন্তু এখন আমি চাইলে ক্লে কোর্টে একটা দল খেলাতে পারি, হার্ড কোর্টে একটা দল, গ্রাস কোর্টে এক রকম দল। এ রকম বিলাসিতা ভারতীয় টেনিসে কখনও কোনও ক্যাপ্টেন দেখাতে পারেনি।

প্র: নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে লিয়েন্ডার পেজের মতো তারকাকে বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে...

ভূপতি: (থামিয়ে দিয়ে) এখানেই মানুষ বুঝতে ভুল করছে। সকলে ভাবে আমি একাই দল নির্বাচন করে ফেলছি। সেটা মোটেও নয়। কাউকে বসানোর সিদ্ধান্ত আমার নয়। আমি নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন, নির্বাচক নই।

প্র: কিন্তু মানুষের প্রশ্নও তো শুনতে হয় এ নিয়ে। ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে তারকাকে নিয়ে আবেগ অনেক বেশি কাজ করে। সেই দিকটা কী করে সামলান?

ভূপতি: এই মুহূর্তের কথা বলতে পারি। কোনও রকম আবেগ নিয়েই ভাবছি না। আমাদের একমাত্র নজর এখন ইটালিকে হারানোর দিকে।

প্র: বলা হচ্ছে ভারতীয় ডেভিস কাপ দল লিয়েন্ডার পেজ পরবর্তী যুগের সূচনা করতে চলেছে কলকাতায় ইটালি-অভিযান দিয়ে।

ভূপতি: আমি এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tennis Mahesh Bhupathi Rohan Bopanna Davis Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE