Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সচিনের ওয়াংখেড়ে যখন বিরাট রাজার দখলে

শনিবার সাত সকালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঢোকার লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে চার্চগেট স্টেশন পর্যন্ত চলে এসেছে। সচিন তেন্ডুলকরের শেষ টেস্ট বাদ দিলে এমন দৃশ্য সম্প্রতি কোনও টেস্টে দেখা গিয়েছে বলে তো মনে পড়ল না।

বিরাট লাফ। সেঞ্চুরির পরে ওয়াংখেড়েতে। ছবি: বিসিসিআই।

বিরাট লাফ। সেঞ্চুরির পরে ওয়াংখেড়েতে। ছবি: বিসিসিআই।

চেতন নারুলা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

শনিবার সাত সকালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঢোকার লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে চার্চগেট স্টেশন পর্যন্ত চলে এসেছে। সচিন তেন্ডুলকরের শেষ টেস্ট বাদ দিলে এমন দৃশ্য সম্প্রতি কোনও টেস্টে দেখা গিয়েছে বলে তো মনে পড়ল না।

হঠাৎ ক্রিকেট নগরী জেগে উঠল!

পাঁচ বছর আগের ঘটনা হলে আন্দাজ করা যেত, হয়তো সচিন তেন্ডুলকরের টানে।

এখনও কি আন্দাজ করা কঠিন? মনে হয় না।

লাইনে দাঁড়ানো একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই প্রত্যাশিত জবাবটা পাওয়া গেল, ‘‘আমরা বিরাট কোহালির ব্যাটিং দেখার জন্য এসেছি।’’

বোঝাই গেল, সচিনের শহর আজ বিরাটের টানে ওয়াংখেড়েমুখী।

ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের শহরের ক্রিকেট আন্দাজেরও প্রশংসা করতেই হয়। ভোর থেকেই যাঁকে নিয়ে জল্পনা শহরজুড়ে, যাঁর খেলা দেখতে সর্পিল লাইন ওয়াংখেড়েতে, সেই বিরাট কোহালি ব্যাট হাতে নেমে পড়লেন দিনের দ্বিতীয় বলেই। ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’— এটা তো এখন বিরাটের ট্যাগলাইন।

সচিন তেন্ডুলকর স্ট্যান্ড, সুনীল গাওস্কর স্ট্যান্ড, বিজয় মার্চেন্ট স্ট্যান্ড-সহ ওয়াংখেড়ের অন্যান্য গ্যালারির হাজার বিশেক মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক ‘বি-রা-ট, বি-রা-ট’ বলে চেঁচিয়ে গেলেন সারা দিন ধরে। সারা দিন ওয়াংখেড়ে তো তাঁরই দখলে। এই সিরিজে যাঁর ব্যাটিং গড় ১৩৮.০০। সাত ইনিংসে যাঁর ৫৫২ রান, তিনি বিরাট কোহালি।

ওয়াংখেড়ের নিয়মিত টেস্ট অডিয়েন্সের অনেকে আবার বলছেন বিরাটের ১৫ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরি দেখে তাঁদের নাকি ২০০১-এ স্টিভ ওয়র অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সচিনের ৭৬-এর কথা মনে পড়ছিল।

দিনের শেষে তিনি ১৪৭ নট আউট। অপর সেঞ্চুরিয়ন মুরলী বিজয় ১৩৬ করে রশিদের বলে তাঁরই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন। বাকিদের কথা না বললেও চলে। তবু ভারত দিনের শেষে ৪৫১-৭। ইংল্যান্ডের চেয়ে ৫১ রানে এগিয়ে। এখান থেকে ম্যাচ যে দিকেই ঘুরুক না কেন, বিরাট রাজার এই রাজসিক ইনিংসটা কিন্তু রয়েই যাবে ওয়াংখেড়ের স্মৃতিতে, মননে।

অন্য দিক থেকে ২৮ রানের মধ্যে তিনটে উইকেট পড়তে দেখেও এক দিকে অটল বিরাট। এমন কত দেখেছেন তিনি। বহুতল ইমারতের স্তম্ভের মতো। তাঁকে শায়েস্তা করতে দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার সময়েও এ দিন অ্যালিস্ট্যার কুক নতুন বল নিতে রাজি হলেন না। রিভার্স সুইং আর স্পিনারদের আক্রমণের ধার বাড়ানোর জন্য। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। বিরাটের ব্যাটে রানের গতি ক্রমশ বেড়েছে বই কমেনি।

তাঁর দিনের সেরা শটটা রশিদকে সুইপ করে, কিপারকে বোকা বানিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠানো। তার আগে পর্যন্ত অফ স্টাম্পের বাইরের বলে অতি সতর্ক তিনি। লাঞ্চের আগে ৪৪ রান। এমনকী লাঞ্চের পর এক ঘণ্টায় ৪৭ বল খেলে ১১ রানও করলেন। ওই সময় মুরলী বিজয়ই বোলারদের শাসনের দায়িত্বে।

দিনের শেষে বিজয় ব্যাখ্যাটা দেন, ‘‘আমাদের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব ভাল। একে অন্যের খেলাটা আমরা ভাল বুঝি। কোন পরিস্থিতিতে কাকে কী রকম খেলতে হবে, সেটা বুঝি আমরা। আজও সেটাই হয়েছে।’’

উল্টো দিক থেকে বিজয় রানের গতি ধরে রাখায় নিজের ইনিংসের শুরুতে বিরাট চাপমুক্ত ছিলেন। অনায়াসে প্রয়োজন অনুযায়ী বল ছেড়েছেন। নিখুঁত ক্রিকেটীয় ব্যাকরন মেনে শট বাছাইয়ে মন দিতে পেরেছেন। এ জন্য নিশ্চয়ই ধন্যবাদ প্রাপ্য বিজয়ের।

ধন্যবাদ হয়তো আরও একজন দেবেন তামিল ওপেনারকে। তিনি কোচ অনিল কুম্বলে। যিনি এই টেস্ট শুরুর আগেই বলেছিলেন, ‘‘দেখবেন, বিজয় হয়তো এই টেস্টেই রানে ফিরবে।’’ তাঁর আস্থার দাম দিলেন বিজয়।

শর্ট বলে তাঁর দুর্বলতার কথা ভেবে এ দিন জেমস অ্যান্ডারসনকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন কুক। কিন্তু সেটা এ দিন কাজে লাগেনি। মুরলী যে শর্ট বলের জুজুটা কাটিয়ে উঠেছেন, সেটা এ দিনই বুঝিয়ে দিলেন ইংরেজদের।

অন্যরা ব্যর্থ হলে কেউ না কেউ ঠিক সামলে দেবে— টেস্ট ক্যাপ্টেনের এই বিশ্বাসটা যে মোটেই বেঠিক নয়, সেটাই আর একবার বোঝা গেল।

না হলে অন্য ব্যাটসম্যানরা সবাই মিলে শ’দেড়েক রান তোলা সত্ত্বেও দলের রান কখনও সাড়ে চারশোর গণ্ডি টপকায়?

ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস: ৪০০

ভারত
প্রথম ইনিংস (আগের দিন ১৪৬-১)

বিজয় ক ও বো রশিদ ১৩৬
পূজারা বো বল ৪৭
কোহালি ন.আ. ১৪৭
করুণ এলবিডব্লিউ মইন ১৩
পার্থিব ক বেয়ারস্টো বো রুট ১৫
অশ্বিন ক জেনিংস বো রুট ০
জাডেজা ক বাটলার বো রশিদ ২৫
জয়ন্ত ন.আ. ৩০
অতিরিক্ত ১৪
মোট ৪৫১-৭।
পতন: ৩৯, ১৪৬, ২৬২, ২৭৯, ৩০৫, ৩০৭, ৩৬৪।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ১৫-৫-৪৩-০, ওকস ৮-২-৩৪-০,
মইন ৪৫-৫-১৩৯-২, রশিদ ৪৪-৫-১৫২-২,
বল ১৪-৫-২৯-১, স্টোকস ৮-২-২৪-০, রুট ৮-২-১৮-২।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Virat Kohli Sachin Wankhede Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE