Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিরাটের মনে হচ্ছে চাপ টের পাবেন তিন-চার বছর পরে

‘মেজাজটাই তো আসল রাজা, আমি রাজা নয়’। সেই মেজাজেই তিনি বিশ্বসেরা। দেশ, ক্রিকেটবিশ্ব জুড়ে তাঁর যা প্রভাব, যা জনপ্রিয়তা, তা বিরাট কোহালির প্রতিদ্বন্দ্বীদের আছে না কি? ক্রিকেটে কোহালিয়ানার কোনও তুলনাই নেই।

গর্বিত বিরাট-বাহিনী। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

গর্বিত বিরাট-বাহিনী। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাজীব ঘোষ
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

‘মেজাজটাই তো আসল রাজা, আমি রাজা নয়’।

সেই মেজাজেই তিনি বিশ্বসেরা। দেশ, ক্রিকেটবিশ্ব জুড়ে তাঁর যা প্রভাব, যা জনপ্রিয়তা, তা বিরাট কোহালির প্রতিদ্বন্দ্বীদের আছে না কি?

ক্রিকেটে কোহালিয়ানার কোনও তুলনাই নেই।

অবশ্য সোমবার পঞ্চাশ টেস্ট খেলে ফেলার পরই তাঁর সঙ্গে জো রুটের তুলনা শুরু করে দিলেন একদল ক্রিকেট গবেষক।

তুলনাটা হতেই পারে। পরিসংখ্যানে, পারফরম্যান্সে।

কিন্তু মেজাজে? তিনিই একমেবাদ্বিতীয়ম।

ভারত সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার পরে সোমবার সন্ধ্যেয় ভেসে উঠল এক বিরাটভক্তের টুইট— ‘আমার ঠাকুরদা আমার বাবাকে শুনিয়েছিলেন ডন ব্র্যাডম্যানের কথা। আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন সচিনের কথা। আমি আমার ছেলেকে বলব বিরাট কোহালির কথা।’

এটাই কোহালিয়ানা!

এক দিকে দুনিয়াজোড়া জনপ্রিয়তা, যশ। অন্য দিকে বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের দায়িত্ব। আর নিজের ক্রিকেটার সত্ত্বা। কোনটা ছেড়ে কোনটা সামলাবেন?

এটা নিয়ে আপনার, আমার দুশ্চিন্তা হলেও বিরাট নিজে কিন্তু এ সব ভাবেন না। সাফ বলেও দিলেন সে কথা, ‘‘এ সব চাপ আমি নিই না। এই বেশ ভাল আছি।’’

যে কোনও ব্যাটসম্যানের ক্রিজে নামা মানে তাঁর নিজের কাজটা নিয়ে ভাবা। তাঁকে কী করতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও মনে মনে রাখতে হয়। কিন্তু তিনি যদি আবার দলের অধিনায়কও হন, তা হলে পিঠে আরও বড় বোঝা নিয়ে মাঠে নামা। কিন্তু তাতে তাঁর কোনও অসুবিধে হয় না বলে জানিয়ে দিলেন ভারতের টেস্ট ক্যাপ্টেন।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে উঠে সোমবার ক্যাপ্টেন কোহালি বলে দিলেন, ‘‘ক্যাপ্টেন্সির কথা মাথা থেকে বার করে দিয়ে ব্যাট করতে যাওয়াটা খুব মুশকিলের। মাথায় রাখতেই হয়। কাজটা কঠিন। আর দলে পাঁচটা ব্যাটসম্যান খেললে তো কথাই নেই। দায়িত্ব আরও বাড়ে। মাথা থেকে দূর করে দিতে পারি না বলেই টেস্ট ম্যাচে আমি বল আকাশে ওড়াই না। টেস্ট ক্রিকেটে আমি ওই ভাবে ব্যাট করতে অবশ্য পছন্দও করি না।’’ এখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখা উচিত। গত আইপিএলে যিনি ৩৮টা ছয় হাঁকিয়েছেন, ৫০ টেস্টে তাঁর ব্যাট থেকে দশটার বেশি বল উড়ে যায়নি গ্যালারিতে।

ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিংয়ের সাধারণ নিয়মগুলোই মেনে চলার চেষ্টা করেন কোহালি। বললেন, ‘‘উইকেটে টিকে থাকলে রান আপনাআপনি আসবে। এটাই নিয়ম। আর আমি সেই নিয়মই মেনে চলি। যতটা পারি উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করি। গোটা দুয়েক সেশন যদি ক্রিজে থাকতে পারি, তা হলে রানও ওঠে। তাই রান নিয়ে ভাবি না, উইকেটে টিকে থাকব কী করে সেটাই ভাবি। তবে সব কিছু মাথায় রেখে ব্যাটিংয়ে খুব চাপ পড়ে। তবে আমি সেই চাপটা এখনও বুঝতে পারি না।’’

তবে কথায় বলে না, ‘চিরদিন সবার সমান নাহি যায়’। সেটা বিশ্বাসও করেন বিরাট। সাংবাদিকদের তিনি বললেন, ‘‘হয়তো তিন-চার বছর পর চাপটা অনুভব করব। কিন্তু আপাতত তেমন কিছুই ভাবি না। যেমন চলছে, ভালই চলছে।’’

কুক-রুটদের ধরাশায়ী করে যে বেশ তৃপ্ত তিনি, তা তাঁর অভিব্যক্তিতে বোঝা যাচ্ছিল। তবে কুকদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতায় বিপক্ষ অধিনায়ক কিছুটা হলেও বিস্মিত। আর সেটা একেবারেই না লুকিয়ে কোহালি বলে দিলেন, ‘‘কেন ওরা দ্বিতীয় ইনিংসে এমন রক্ষণাত্মক ব্যাট করল জানি না। ওদের মধ্যে যেন লড়াইয়ের ইচ্ছেটাই দেখা যাচ্ছিল না। তাই রবিবার দু’টো উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেই বুঝে যাই পরের দিন বাকিগুলোও তাড়াতাড়ি ফেলে দেওয়া যাবে।’’

দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনার কুক আর হামিদ ৫০ ওভারের উপর ব্যাট করে মাত্র ৭৫ রান তোলেন। সেই সময় দু’দলের ক্রিকেটারদের স্নায়ুযুদ্ধের কথা শোনাতে গিয়ে ভারত অধিনায়ক বসলেন, ‘‘ওটা ছিল আমাদের ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষা। ওরা ভেবেই নেমেছিল যে, ওরা এ রকম খেলবে আর আমাদের পাগল করে দেবে। ভেবেছিল আমরা মেজাজ হারাব। কিন্তু আমরা কিছুই করিনি। একই রকম বোলিং করেছি, একই রকম ফিল্ডিং সাজিয়ে রেখেছিলাম প্রায় সারাক্ষণ।’’ গতকাল শেষ ওভারে অ্যালিস্টার কুকের আউটের প্ল্যানটা নাকি চেতেশ্বর পূজারা দেন কোহালিকে। বললেন, ‘‘পূজারা বলল, এ বার একটু ফিল্ডিংটা বদলে দেখা যাক। লেগের দিকে আরও দু’জন ফিল্ডার বাড়িয়ে দিলে ওরা শেষ ওভারে আরও ডিফেন্ড করবে। সেই প্ল্যানটাই খেটে গেল। কুক শরীরের কাছে না খেলে বলটা প্যাডের কাছে খেলতে গেল আর তাতেই আউট। এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলোই বড় তফাত গড়ে দেয়।’’

টেস্ট গড়ে জো রুট বিরাটের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এই বছরের মোট আন্তর্জাতিক রানের দিক থেকে বিরাটই এগিয়ে। এ বছর যেখানে সব রকম ফর্ম্যাটে ২২৭৭ রান করেছেন বিরাট, সেখানে রুটের ঝুলিতে ২২৬৫। লড়াই হাড্ডাহাড্ডি চলছে। আর সারা সিরিজ জুড়েই চলবে এই ডুয়েল।

সে চলুক। কিন্তু জনপ্রিয়তায়, ভক্তদের ভালবাসায় বিরাটকে কী করে মারবেন ইংরেজ ব্যাটিং তারকা? ‘সিরফ মুশকিল হি নহি, নামুমকিন হ্যায়’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Virat Kohli Joe Root Team India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE