Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কন্তের কাউন্টারের থেকেও এগিয়ে সুইডের কপিবুক ফর্মুলা

ইউরোর লড়াই এসে দাঁড়িয়েছে শেষ আট দলে। এই আট দলের সেরা চার কোচ কারা? র্যাঙ্কিং করলেন সঞ্জয় সেনসুইডিশ এই কোচ আমার বরাবরের প্রিয় ব্যক্তিত্ব। সম্পূর্ণ আবেগবর্জিত মানুষ। ইউরোর কোয়ালিফাইং রাউন্ড থেকে ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। ধুরন্ধর এই কোচের স্ট্র্যাটেজিতেই নেদারল্যান্ডসের মতো দলের এ বার ইউরোর মূল পর্বে ওঠা সম্ভব হয়নি।

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০৪:২৭
Share: Save:

লার্স লেগারব্যাক আইসল্যান্ড

সুইডিশ এই কোচ আমার বরাবরের প্রিয় ব্যক্তিত্ব। সম্পূর্ণ আবেগবর্জিত মানুষ। ইউরোর কোয়ালিফাইং রাউন্ড থেকে ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। ধুরন্ধর এই কোচের স্ট্র্যাটেজিতেই নেদারল্যান্ডসের মতো দলের এ বার ইউরোর মূল পর্বে ওঠা সম্ভব হয়নি। রবেনদের হোম-অ্যাওয়ে দুটোতেই হারিয়েছিল লেগারব্যাকের দল। ফ্রান্সেও রোনাল্ডোর পর্তুগালকে রুখে গ্রুপে দ্বিতীয় হয়েছে। নকআউটে রুনির ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জায়ান্ট কিলারের সম্মান আদায় করে নিয়েছেন এই বর্ষীয়ান কোচ। কোনও দেখনদারির মধ্যে না গিয়ে প্রথম থেকেই ডিফেন্স জমাট রেখে ৪-৪-২ ছকে কাজের কাজটা সেরে ফেলছেন। লেগারব্যাকের ফর্মুলা দুটো। এক, ডিফেন্স সংগঠন— যেখানে ব্যাক ফোরের মধ্যে দূরত্বটা বাড়তে দেয় না। ফলে গোলের মুখটা আটকে রাখতে পারে। দুই, বিপক্ষ ডিফেন্সের সামনে গিয়ে একাধিক পাস খেলে। তাতে প্রতিপক্ষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। যেটা হয়েছিল ইংল্যান্ডের। একটা অত্যন্ত সাধারণ টিম নিয়ে ইউরোর মতো টুর্নামেন্টের শেষ আটে উঠেছেন যে কোচ, তাঁকে তো এক নম্বরে রাখতেই হবে।

আন্তোনিও কন্তে ইতালি

ইউরোয় ইতালি কোচকে যত দেখছি ততই মজা লাগছে। খেলা শুরুর সময় কী অদ্ভুত শান্ত। মনে হয় মাথায় টনটন বরফ চাপিয়ে রেখেছেন। কিন্তু দল গোল করলে সাইডলাইনে এমন লাফাতে থাকেন যেন আট বছরের বাচ্চা! কিন্তু সেটা তো কন্তের বহিরঙ্গ। এত দিন ইতালি মানে চোখের সামনে ভাসত কাতানেচ্চিও, আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল, কাউন্টার অ্যাটাকের নানা কথা। কিন্তু এই সব ট্যাগ ইতালির গা থেকে ছিঁড়ে ফেলেছেন ইউরোর পরেই ইপিএলে চেলসির দায়িত্ব নিতে চলা কন্তে। এই ইতালি শুরু থেকেই ওপেন অ্যাটাকে আসছে। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে কেউ ওদের ফেভারিট ধরেনি। কন্তের ৩-৫-২ ছকের মোদ্দা ব্যাপারই হল, ডিফেন্সটাও জমাট থাকছে, আবার আক্রমণেও প্রয়োজনে লোক বাড়াতে পারছে ইতালি। কোনও মহাতারকা স্ট্রাইকার নেই। কিন্তু যারা আছে, তাদের দিয়েই কাজটা আদায় করে নিচ্ছে কন্তে। দুই উইংকে কাজে লাগিয়ে পেল্লেদের বল বাড়ানোর সাপ্লাই লাইনটা জোরদার করেছেন কন্তে। একই সঙ্গে অ্যাটাকের সময় বক্সে ছ’জনকে তুলে আনছেন। পাশাপাশি জুভেন্তাসের (বোনুচ্চি-বারজাগলি-কিয়েলিনি) জমাট রক্ষণ। কন্তেকে ভাল লাগার দ্বিতীয় কারণ হল ওঁর সাহস। গত দু’বারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিরুদ্ধে কান্দ্রেভার মতো ফুটবলারকে চোটের জন্য পাননি। কিন্তু সেই জায়গাটা ঠিক মেরামত করে নিলেন দে’সিলিওকে দিয়ে। যার ফলে উইং নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।

দিদিয়ের দেশঁ ফ্রান্স

এক জন কোচের উপর বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ থাকলে সেটা যে তার উপর কত ভয়ঙ্কর চাপ তৈরি করে, সেটা না বললেও চলে। তার উপর দেশঁর দল ইউরোয় নেমেছে নিজের দেশে। চাপটা আরও পাঁচগুণ বেড়ে যাওয়ার কথা। বে়ঞ্জিমাকে বাদ দিয়ে দেশঁর এই টুর্নামেন্টে নামার সাহসটাই তো ওঁকে আলাদা করছে বাকি কোচেদের থেকে। কখনও আবার পোগবা, গ্রিজম্যানকেও বসিয়ে রাখছেন। তার পর যখন তাদের মাঠে নামাচ্ছেন তখন তারা মাঠে আগুন ঝরাচ্ছে। এটাই হচ্ছে আসল ম্যান ম্যানেজমেন্ট। প্লেয়ারকে বসিয়ে রেখে প্রথমে তাকে তাতিয়ে দাও। যাতে সেরাটা দিতে পারে নামলে। প্রি-কোয়ার্টারে যেমন কোমানকে নামিয়ে বাজিমাত করলেন। টিমের ডিফেন্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু পোগবাদের দিয়ে মাঝমাঠের স্ন্যাচিংটাও এত সুন্দর করাচ্ছেন যে ডেড বল সিচুয়েশন ছাড়া ফ্রান্স কিন্তু ওপেন অ্যাটাকে গোল খায়নি।

জোয়াকিম লো জার্মানি

বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন কোচ লো-র দিকে সবার একটা আলাদা নজর তো থাকবেই। সেই প্রত্যাশাও জার্মানি এখনও পর্যন্ত পূরণ করেছে। ইউরোয় জার্মানি এখনও গোল খায়নি। এ রকম বড় টুর্নামেন্টে লো-র এই ডিফেন্সিভ সংগঠনই তো অবাক করার মতো। যে ভাবে মাঝমাঠে টনি ক্রুজকে কোচ পাসার হিসেবে ব্যবহার করছেন, তা দুর্দান্ত। একই সঙ্গে কখনও সোয়াইনস্টাইগার বা কখনও ড্র্যাক্সলারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করছেন। যাতে ৬০-৭০ মিনিটের মাথায় তাজা পা কাজে লাগাতে পারেন। সোজা কথায়, পাওয়ারের সঙ্গে পাসিং ফুটবলের ককটেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

best coach euro cup 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE