Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রুশ বিপ্লবে স্তব্ধ স্পেন

ইনিয়েস্তার বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক, বিস্মিত ফাব্রেগাস 

লিয়োনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিদায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যেন আরও এক মহাতারকার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিল।

হতাশ ইনিয়েস্তারা।

হতাশ ইনিয়েস্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

শিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামার আগেই নাটক স্পেন শিবিরে। প্রথম একাদশে জায়গা পেলেন না আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। তাঁর জায়গায় শুরু থেকে খেলানো হল মার্কো আসেনসিও-কে।

লিয়োনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিদায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যেন আরও এক মহাতারকার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিল। গ্রুপ পর্বে ইনিয়েস্তাকে খেলানো হলেও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমেআলোচনা শুরু হয়েছিল যে, ইনিয়েস্তা তাঁর সেরা সময় পেরিয়ে গিয়েছেন। এ বার তাঁর জায়গায় নতুন রক্ত আনা দরকার।

সেই দাবি শেষ পর্যন্ত মেনেই নিলেন স্পেনের ভারপ্রাপ্ত কোচ ফার্নান্দো ইয়েরো। রিয়াল মাদ্রিদের আসেনসিওকে শুরু থেকে নামিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, ইনিয়েস্তা হয়তো সত্যিই তাঁর সময় পেরিয়ে এসেছেন। এ বছরেই বার্সেলোনা থেকেও বিদায় নিয়েছেন মাঝমাঠের অন্যতম সেরা শিল্পী। লা মাসিয়া অ্যাকাডেমি ধরলে ২১ বছর বার্সেলোনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ইনিয়েস্তার। সেই বন্ধন যেমন আর নেই, তেমনই স্পেনের জার্সিতেও হয়তো শুরু হয়ে গেল তাঁর বিদায় যাত্রা। ২০১০-এ স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ে অন্যতম প্রধান স্থপতি ছিলেন ইনিয়েস্তা। ফাইনালে তাঁর গোলেই বিশ্ব জয় করেছিল স্পেন।

কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে উল্লাস রাশিয়ার।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে ইনিয়েস্তাকে দেখতে না পেয়ে অনেকেই কিন্তু অবাক হয়ে যান। তার মধ্যে স্পেনের অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ এবং পন্ডিতও রয়েছেন। টুইটারে অনেকেই লিখতে থাকেন, রাশিয়া রক্ষণাত্মক ফুটবল এবং কাউন্টার অ্যাটাকে খেলে তিকিতাকার ছন্দ নষ্ট করবে। ওদের জন্য সেরা অস্ত্র ছিল ইনিয়েস্তার শিল্পই। নাটকীয় ভাবে লোপেতেগির রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পরে বিশ্বকাপে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইয়েরোকে। এমন ডামাডোলের মধ্যেও গ্রুপ পর্বের বাধা টপকে স্পেন শেষ ষোলোয় যাওয়ায় তাঁর প্রশংসা হচ্ছিল। কিন্তু রবিবার ম্যাচ শুরু হওয়ার পরেই প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, ইনিয়েস্তাকে বসিয়ে স্পেন ফুটবল ভক্তদের কাছে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেছেন ইয়েরো। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে এত দিন ইনিয়েস্তাকে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছিল। এ দিন তারাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলতে থাকেন, ইনিয়েস্তা মোটেও বাদ পড়ার মতো খেলেননি। বরং গ্রুপ পর্বে পুরনো ঝলক দেখিয়েছেন। মরক্কোর বিরুদ্ধে ইস্কোর সমতা ফেরানোর গোলটি তাঁর সেই দুরন্ত টাচে সাজিয়ে দিয়েছিলেন ইনিয়েস্তাই। আবার একাংশ সওয়াল করতে থাকেন আসেনসিওর পক্ষে।

বিবিসি-তে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বসা সেস ফাব্রেগাস বিস্ময় প্রকাশ করেন তাঁর এক সময়ের সতীর্থকে বেঞ্চে বসতে দেখে। ‘‘এটা খুবই চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। গত পনেরো বছর ধরে ওর সঙ্গে আছি বা ওর সম্পর্কে খোঁজ রাখছি। সম্ভবত এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দেখলাম, প্রথম একাদশ থেকে ও বাদ পড়েছে। স্প্যানিশ সুপার কাপে এক বার ওকে বাদ পড়তে হয়েছিল। তা ছাড়া সব সময়, সব ম্যাচে খেলেছে,’’ বলেন ফাব্রেগাস। প্রথম একাদশ ঘোষণা হওয়ার পরেই স্পেনে যে বিতর্কের ঝড় বইতে শুরু করেছে, তার যুক্তিও বুঝতে পারছেন ফাব্রেগাস, ‘‘ওর নাম আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। কত বড় ফুটবলার! স্পেনকে কত সম্মান এনে দিয়েছে! বাদ পড়া নিয়ে কথা তো উঠবেই।’’

ফুটবল মহলে অবশ্য কথা উঠতে শুরু করে দেয়, লিয়োনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের দাপট দেখেই কি রণনীতি পাল্টে ফেললেন ইয়েরো? ১৯ বছরের কিলিয়ান এমবাপের তারুণ্যের আগুনে পুড়ে যায় আর্জেন্টিনা। ইয়েরোও কি তাই অভিজ্ঞতার জায়গায় তরুণ রক্ত নিয়ে এলেন? ইনিয়েস্তার বয়স ৩৪, আসেনসিওর ২২। বারো বছরের ছোট আসেনসিও দৌড়তে পারেন, উঠেনেমে খেলতে পারেন, স্পেনের খেলায় বৈচিত্র যোগ করতে পারবেন।

৬৬ মিনিট পেরিয়ে ইনিয়েস্তাকে পরিবর্ত হিসেবে নামালেন ইয়েরো। কিছুটা বাধ্য হয়েই। রাশিয়া তখন গোল শোধ করে দিয়েছে। স্কোর ১-১। লাল জার্সি বেশ চাপে। অগত্যা ভরসা মাঝমাঠের ‘বুড়ো শিল্পী’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE