Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মিশন মস্কো: ২০১৮ বিশ্বকাপের গাইড, ‘জি’ গ্রুপে নজরে সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড

উয়েফা গ্রুপ ‘এফ’ থেকে সহজেই রাশিয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ইংল্যান্ড। অপরাজিত থেকে তারা বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র পায়।

 ত্রয়ী: দেম্বলে, দ্য ব্রুইন ও কোম্পানি। ছবি: এএফপি

 ত্রয়ী: দেম্বলে, দ্য ব্রুইন ও কোম্পানি। ছবি: এএফপি

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০৪:৫৩
Share: Save:

গ্রুপ জি

সেরা আকর্ষণ: বেলজিয়াম

• ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ৩

ডাকনাম: দ্য রেড ডেভিলস

বিশ্বকাপ ইতিহাস


• প্রথম পর্বে: ১২ বার

• সেমিফাইনালে: ১ বার

• ফাইনালে: এক বারও নয়

• চ্যাম্পিয়ন: এক বারও নয়

কী ভাবে রাশিয়ায়

উয়েফার গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে খুব সহজেই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে বেলজিয়াম। গ্রুপে খুব কঠিন প্রতিপক্ষও কেউ ছিল না। গ্রিস, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, এস্টোনিয়া, সাইপ্রাস এবং জিব্রাল্টারের সঙ্গে খেলতে হয়েছিল যোগ্যতা অর্জনের জন্য। গ্রিসের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ ড্র করা বাদ দিলে বেলজিয়াম আর কোনও পয়েন্টই নষ্ট করেনি। শেষের দিকের নাটকের জন্য অপেক্ষা করে না থেকে অনেক আগেই তারা রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছিল। যোগ্যতা অর্জন পর্বে ৪৩টি গোল করেছিল তারা। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের রোমেলু লুকাকু করেন ১১ গোল। চেলসির এডেন অ্যাজার ৬টি গোল করার পাশাপাশি ৫টি গোলে সহায়তা করেন। যোগ্যতা অর্জন পর্বে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেই পড়েনি তারা।

কোচ: রবের্তো মার্তিনেস

২০১৬-তে মার্ক উইলমটসের উত্তরসূরি হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়াটা চমকই ছিল। তার কারণ ইংল্যান্ডের বাইরে অন্য কোথাও কোচিংয়ের খুব একটা অভিজ্ঞতা ছিল না মার্তিনেসের। স্পেনের ফুটবল গুরু কোচিং করিয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল এভার্টন এবং সোয়ানসি-কে। জীবনে কখনও নিজে বিশ্বকাপ খেলেননি বা কোচ হিসেবেও অংশ গ্রহণ করেননি। রাশিয়াতেই প্রথম বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে মার্তিনেসের।

শক্তি

এই দলটিকে বেলজিয়ামের সোনার প্রজন্ম বলা হয়। এমনকি, নাম এবং জনপ্রিয়তায় ১৯৮৬-র সেই তারকাদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান দলের ফুটবলাররা। সত্যিই স্বপ্নের দল! গোলে থিবো কর্তুয়া। রক্ষণে য়ান ভার্তোহেন, টোবি আল্ডাওয়েরেল্ড এবং ভ্যানসঁ কোম্পানি। প্রত্যেকেই ইংল্যান্ডে সুনামের সঙ্গে খেলা ডিফেন্ডার। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে দুরন্ত মুসা দেম্বেলে। বিশ্বের সেরা প্লে-মেকার এখন কেভিন দ্য ব্রুইন। তিনিও থাকছেন। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এ বারের ইপিএল জয়ে পেপ গুয়ার্দিওলার সব চেয়ে বড় অস্ত্র ছিলেন দ্য ব্রুইন। সঙ্গে এডেন অ্যাজার, দ্রিস মের্তেন্সের মতো উইঙ্গার। যদিও নাপোলিতে গত দু’টি মরসুমে মের্তেন্স সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলেছেন। প্রিমিয়ার লিগে অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুর শক্তিশালী ফুটবল এবং গোল করার দক্ষতা অনেক প্রতিপক্ষের কাছেই ভয়ের কারণ হতে পারে। মার্তিনেসের হাতে তাই সত্যিই বিশ্বমানের একটি দল থাকছে। অনেকে এমনকি, বিশ্বকাপ জয়ের দাবিদারও বলছে বেলজিয়ামকে।

দুর্বলতা

অতীত ইতিহাস অ্যাজারদের বিপক্ষে থাকছে। প্রায় একই দল নিয়ে বেলজিয়াম নেমেছিল ২০১৪ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ ইউরোতে। কিন্তু তাঁদের নিয়ে তৈরি হওয়া প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি অ্যাজাররা। জয় করার মানসিকতাটাই খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁদের মধ্যে এবং সেটাই সব চেয়ে বড় দুর্বলতা এই বেলজিয়াম দলের। রণকৌশল নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। তবে মার্তিনেসের ফুটবল জ্ঞান প্রখর। রণনীতি ঠিক করার ব্যাপারে দারুণ। তবু কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেমন কেভিন দ্য ব্রুইন এবং এডেন অ্যাজার একসঙ্গে একই দলের হয়ে খেলে সফল হতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে সংশয় থাকছে। নাইনগোলনকে উপেক্ষা করার সিদ্ধান্তে অনেকে অবাক। মারুয়ান ফেলাইনিকে মাঝমাঠে খেলানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খুব ভাল লেফ্ট ব্যাকও নেই মার্তিনেসের হাতে, সম্ভবত সেই কারণেই তিনি ৩-৪-২-১ ছকে দলকে খেলাচ্ছেন।

তারকা: কেভিন দ্য ব্রুইন

পেপ গুয়ার্দিওলার অধীনে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এ বারের ইপিএল জয়ের নায়ক কেভিন দ্য ব্রুইন। তাঁর মোহময়ী পাসিং ফুটবলে আচ্ছন্ন ইংল্যান্ডের ফুটবল মহল। রাশিয়ায় আবার একই গ্রুপে রয়েছে দ্য ব্রুইনের বেলজিয়াম এবং ইংল্যান্ড। ইপিএলে ৮টি গোল করার পাশাপাশি ১৫টি গোলে সহায়তা করেছিলেন সুদর্শন মিডফিল্ডার। স্পেনের বাইরে আর কারও পাসের সৌন্দর্য নিয়ে এতটা আলোড়িত হয়নি ফুটবল বিশ্ব। দর্শনীয় ফুটবলে তিনি মাতিয়ে দিতে পারেন রাশিয়া। গুয়ার্দিওলা যে ভাবে তাঁকে সিটিতে ব্যবহার করেছিলেন, সেই ‘উইথড্রয়াল মিডফিল্ডার’ হিসেবেই তাঁকে বিশ্বকাপে ব্যবহার করতে চাইছেন মার্তিনেস। অনেকেই দেখতে চান, গুয়ার্দিওলার ছোঁয়ায় ঠিক কতটা উন্নতি করেছেন দ্য ব্রুইন। দুরন্ত ইপিএলের পরে একটা দুর্দান্ত বিশ্বকাপ কিন্তু তাঁকে মেসি, রোনাল্ডোদের সঙ্গে ব্যালন ডি’ওর জেতার দাবিদারও করে তুলতে পারে।

---------------------------------------------------------

ইংল্যান্ড

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ১৩

বিশ্বকাপ ইতিহাস


• প্রথম পর্বে: ১৪ বার

• সেমিফাইনালে: ২ বার

• ফাইনালে: ১ বার

• চ্যাম্পিয়ন: ১ বার (১৯৬৬)

কী ভাবে রাশিয়ায়

উয়েফা গ্রুপ ‘এফ’ থেকে সহজেই রাশিয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ইংল্যান্ড। অপরাজিত থেকে তারা বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র পায়। একই গ্রুপে ছিল স্কটল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং মাল্টা। মোট ১৮টি গোল করেছিল তারা। খেয়েছিল তিনটি। একমাত্র পয়েন্ট খুইয়েছিল অ্যাওয়ে ম্যাচে স্লোভাকিয়া এবং স্কটল্যান্ডের সঙ্গে। দু’টি ম্যাচই ড্র হয়। যোগ্যতা অর্জন পর্বে পাঁচটি গোল করেছিলেন হ্যারি কেন। বাকি আরও ১১ জন ফুটবলারও গোল পেয়েছিলেন।

কোচ: গ্যারেথ সাউথগেট

২০১৬ সেপ্টেম্বরে স্যাম অ্যালার্ডিসের জায়গায় অস্থায়ী কোচ হিসেবে আসেন গ্যারেথ সাউথগেট। নভেম্বরেই তাঁর হাতে পাকাপাকি দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। ডিফেন্ডার হিসেবে ১৯৯৮-এ ফ্রান্সে এবং ২০০২-এ কোরিয়া-জাপানে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন। জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও দারুণ শুরু করেছেন টানা ষষ্ঠ বার বিশ্বকাপের মূল পর্বে ইংল্যান্ডকে নিয়ে গিয়ে।

শক্তি

ওয়েন রুনি-নির্ভর দল আর নেই ইংল্যান্ড। এক-দুই জন তারকার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকার সেই দিন অতীত। বরং এ বার রাশিয়ায় আসছে সম্ভবত সাম্প্রতিককালের সব চেয়ে ফিট এবং অ্যাথলেটিক দক্ষতা সম্পন্ন ইংল্যান্ড দল। প্রচণ্ড গতিতে তারা ফুটবল খেলবে বলে পূর্বাভাস। তারুণ্যে টগবগ করছে এই দল। উইং ধরে যারা গতির ঝড় তুলতে পারে। তেমনই শক্তিশালী মাঝমাঠ। রাহিম স্টার্লিং, জেমি ভার্ডি, মার্কাস র‌্যাশফোর্ডদের সামলাতে সমস্যায় পড়তে পারে যে কোনও দল। সঙ্গে দুরন্ত ফর্মে থাকা হ্যারি কেন। রক্ষণে ড্যানি রোজ, কাইল ওয়াকার, কিরন ট্রিপিয়ার সমীহ করার মতো।

দুর্বলতা

বড় ইভেন্টে ইংল্যান্ডের ব্যর্থতা যেন এখন একটা মানসিক বাধা হয়ে গিয়েছে তাদের ফুটবলারদের কাছে। এ বারের দলটি তারুণ্য এবং শক্তিতে আশা জাগালেও দুর্বলতার অভাব নেই। সেন্টার ব্যাকদের কেউ খুব একটা ক্লাব দলের হয়ে সুযোগ পাচ্ছেন না। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারদের মধ্যে ম্যাচকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো শিল্প বা সক্ষমতা চোখে পড়েনি এখনও। সাউথগেটের সব চেয়ে বড় পরীক্ষা দলকে এককাট্টা করা।

নেতা: ইংল্যান্ডের ভরসা হ্যারি কেন। ছবি: এএফপি

তারকা: হ্যারি কেন

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্ট্রাইকারদের তালিকায় উঠে এসেছেন টটেনহ্যাম হটস্পারের হ্যারি কেন। দুর্দান্ত ‘ফিনিশার’। মনে করা হচ্ছে, ২০০২-এ মাইকেল আওয়েনের পরে এত নিপুণ স্ট্রাইকার আর কখনও বিশ্বমানের কোনও প্রতিযোগিতায় নিয়ে যায়নি ইংল্যান্ড। তাঁর খেলায় অ্যালান শিয়েরার এবং টেডি শেরিংহ্যামের ছোঁয়া দেখা যায়। যদি চোট সারিয়ে ফেরা ২৪ বছরের হ্যারি কেন রাশিয়ায় নিজের ছন্দে থাকেন, ইংল্যান্ড চমক দেখাতে পারে। অবাক হওয়ার নেই যে, সাউথগেট তাঁকেই অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

গ্রুপের অন্যরা

• পানামা: ফিফা র‌্যাঙ্কিং ৫৬। কনকাকাফ গ্রুপে তৃতীয় হয়ে মূল পর্বে। সেরা অস্ত্র খেইমি পেনেদো।

• তিউনিসিয়া: ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১৪। আফ্রিকার সহজ গ্রুপ থেকে মূল পর্বে। সেরা অস্ত্র ওয়াবি কাজরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

FIFA World Cup 2018 England Belgium Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE