ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)-এ কলকাতার দল কেনা নিয়ে এত দিন ভাবা হচ্ছিল লড়াইটা ভূমিপুত্র সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বনাম রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর শাহরুখ খানের। কিন্তু এ বার সেই টক্করে হাজির শতবর্ষ প্রাচীন মোহনবাগানও। ফলে ক্রিকেট ও বলিউড তারকাদের সঙ্গে এ বার কলকাতার দল কেনায় লড়াই বাঙালির আবেগ এবং ঐতিহ্যের!
মহারাজ বনাম বাদশা-র ডুয়েল সরে গিয়ে ত্রিমুখী এই কলকাতা দখলের যুদ্ধে ১২৫ বছরের মোহনবাগান অবশ্য একা নামেনি। চুনী-সুব্রত-গোষ্ঠ পালদের ক্লাব হাত মিলিয়েছে দেশের অন্যতম সেরা স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ‘র্যঁদেভু’-র সঙ্গে। যারা অতীতে আইপিএল-এ কোচি টাস্কার্স দলের অংশীদার ছিল। টিম রয়েছে ইন্ডিয়ান ব্যাডমিন্টন লিগেও। তার চেয়েও বড় তথ্য, এই সংস্থার অন্যতম এক পরামর্শদাতা লিয়েন্ডার পেজের খেলাধুলোর আঁতুরঘর সবুজ-মেরুন তাঁবু এবং মাঠ।
মুম্বই থেকে সংস্থার চেয়ারম্যান কিষান গায়কোয়াড় ফোনে এ দিন আনন্দবাজারের কাছে স্বীকার করে নেন আইএসএল-এ কলকাতার দলের জন্য তাঁরাও লড়তে নেমেছেন। বললেন, “আইএসএল-এ মোহনবাগানের সঙ্গে জোট বেঁধেই আমরা দরপত্র জমা দিয়েছি।” গত চার মরসুম ট্রফি নেই যে ক্লাবে তার সঙ্গে ফুটবলের আইপিএল-এ জোটবন্ধনের যৌক্তিকতা কোথায় তা জানতে চাইলে কিষানের পাল্টা প্রশ্ন, “মোহনবাগান ছাড়া ভারতীয় ফুটবল হয় নাকি? আর ফুটবলে যদি কিছু করতে হয় তা হলে কলকাতাই প্রথম পছন্দ। আর কোটি কোটি মোহনবাগান সমর্থকও তো আমাদের একটা ব্যাঙ্ক ব্যালান্স।” আর সৌরভ বনাম শাহরুখ? কিষান বলছেন, “দেখা যাক, ভাগ্য কার সঙ্গ দেয়। আমরা কিন্তু কলকাতার জন্য নিলামে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। ওঁরা তারকা মানছি। আমাদের সঙ্গেও কিন্তু দেশের গর্ব মোহনবাগান রয়েছে।” দরপত্রে দ্বিতীয় পছন্দ বলে একটা ব্যাপার ছিল। কিষান সে কথা উঠতেই প্রথমে বলছেন, “পছন্দ একটাই। সেটা কলকাতা।” পরে স্বীকার করে নেন কোচি তাঁদের দ্বিতীয় পছন্দের শহর।
ইতিমধ্যেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে মোহনবাগানের সঙ্গে তাঁদের জোট বাঁধার কথা ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। নিলামে কী হবে তা জানার আগেই মোহনবাগানকে তারা হাজির করেছেন বিপণনে। যেখানে ওডাফারদের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে হোসে রামিরেজ ব্যারেটোর ইমেজকেও। রয়েছে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে ১৯১১ সালে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের ঐতিহাসিক তথ্যও। শুধু তাই নয়, দুর্গাপুরে মোহনবাগান অ্যাকাডেমি এবং মোহনবাগান মাঠের কথাও জ্বলজ্বল করছে সংস্থাটির সাইটে। বোঝাই যাচ্ছে দরপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে এই পরিকাঠামোর কথাই তাঁরা জানিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে শুরু হতে চলা প্রস্তাবিত এই লিগে কলকাতার দল কেনার জন্য ইতিমধ্যেই একটি বিদেশি ফুটবল ক্লাব এবং বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছেন ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। একই দল কিনতে দৌড়ে রয়েছেন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর শাহরুখ খানও। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, তিনি আবার নিজের কোম্পানি ‘রেড চিলিজ’-এর হয়ে নয়, ক্রিকেটের পর কলকাতার ফুটবল দল কিনতে দৌড়ে সামিল হয়েছেন একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে।
মোহনবাগান কর্তারা অবশ্য বিষয়টি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ হওয়ায় কিছুটা বিব্রত। এ দিন ক্লাবের অর্থসচিব দেবাশিস দত্তকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে হ্যাঁ কিংবা না কোনওটাই বলব না।” তবে সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু অবশ্য মোহনবাগান-র্যঁদেভু জোট নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও ইতিবাচক ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আইএসএল-এ দরপত্র জমা দেওয়া অনেক কর্পোরেট সংস্থাই মোহনবাগানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে র্যঁদেভু-র সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে। যদিও কোনও লিখিত চুক্তি হয়নি।” আইএসএল-এ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে জোটে মোহনবাগানের ভূমিকা কী জানতে চাওয়া হলে সৃঞ্জয়বাবুর বলেন, “ওরা আমাদের কাছে টেকনিক্যাল সাপোর্ট চেয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আমরা সেটাই ওদের দেব।” প্রশ্ন হল, যাদের সঙ্গে মোহনবাগানের চুক্তি হয়নি তারা নিজস্ব ওয়েবসাইটে মোহনবাগানকে কী ভাবে ব্যবহার করতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy