Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ইডেনে আবার ‘কুখ্যাত’ রেল বনাম বাংলা

ঘাস উড়িয়ে সকাল এগারোটায় তৈরি প্রতিপক্ষ বধের স্ট্র্যাটেজি

ইডেন টাইম বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা। বিজয় হাজারে ট্রফিতে বাংলা বনাম রেল সেমিফাইনাল যুদ্ধ তখনই শুরু হয়ে গেল! ক্লাবহাউস গেট দিয়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন যে দু’জন, বঙ্গ ক্রিকেটপ্রেমীকুল তাঁদের ভাল রকম চেনে। ওঁরা টিম বাংলার দুই ‘মস্তিষ্ক’।

মনোজকে ঘিরে ভক্তদের আকুতি। বৃহস্পতিবার ইডেনে। ছবি: উৎপল সরকার।

মনোজকে ঘিরে ভক্তদের আকুতি। বৃহস্পতিবার ইডেনে। ছবি: উৎপল সরকার।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:০৪
Share: Save:

ইডেন টাইম বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা। বিজয় হাজারে ট্রফিতে বাংলা বনাম রেল সেমিফাইনাল যুদ্ধ তখনই শুরু হয়ে গেল!

ক্লাবহাউস গেট দিয়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন যে দু’জন, বঙ্গ ক্রিকেটপ্রেমীকুল তাঁদের ভাল রকম চেনে। ওঁরা টিম বাংলার দুই ‘মস্তিষ্ক’।

প্রথম জন—লক্ষ্মীরতন শুক্ল।

দ্বিতীয় জন— অশোক মলহোত্র।

ঢুকে একবার ইডেনের পিচ-দর্শন, তার পর সোজা কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের কাছে। সঙ্গে সনির্বন্ধ অনুরোধ, ঘাসটা উড়িয়ে দিন! টস হেরে যদি সন্ধের ইডেনে ব্যাটিং করতে হয়, মুভমেন্ট সামলানো প্রচণ্ড মুশকিল হয়ে যাবে। কিন্তু ঘাস না থাকলে টসটা অত ফ্যাক্টর হবে না। কিছু না হোক, ওই ভয়াবহ ল্যাটারাল মুভমেন্টের পাল্লায় পড়তে হবে না, যা কি না এত দিন সন্ধেয় ব্যাট করতে নামা টিমের হচ্ছে। তামিলনাড়ু, বরোদা, পঞ্জাব কেউই তো ইডেনে পরে ব্যাট করে রক্ষা পায়নি। যুবরাজ সিংহ, পাঠান-ব্রাদার্স, মুরলী বিজয়-কার্তিকের মতো বাঘা ব্যাটসম্যানদেরও ওই ‘খুনে’ মুভমেন্টের সামনে পরাভূত হয়ে শহর ছাড়তে হয়েছে।

অতঃকিম? কী আবার, পাল্টে গেল ইডেন পিচ! মাত্র চব্বিশ ঘণ্টায়। রাতারাতি।

সবুজ পিচ এ বার ঘাসহীন।

বিকেলের ইডেনে গিয়ে দেখা গেল, মন দিয়ে ঘাস ওড়ানোর কাজে ব্যস্ত মাঠকর্মীরা। ‘মোয়িং’ চলছে। কয়েক গজ দূরে রেল-যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বাংলা। টিমকে ফিল্ডিং প্র্যাকটিস দিচ্ছেন কোচ মলহোত্র। লক্ষ্মী নেট সেরে নকিংয়ে ডুবে। আশ্চর্য, শিবশঙ্কর পালকেও তো নেটে দেখা যাচ্ছে! না, টিমে তিনি নেই। শুক্রবার খেলছেনও না। কিন্তু তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন বঙ্গ অধিনায়ক স্বয়ং। মহম্মদ শামি নেই, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ভাল পেসারের সামনে প্র্যাকটিসটা দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর আবির্ভাব প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের এবং আরও একদফা ‘মোয়িং’।

দু’দিকেই সদর্পে প্রকাশ বাংলার যুদ্ধ জয়ের স্ট্র্যাটেজি। টসকে যতটা সম্ভব প্রভাবহীন করতে হবে। তাই ঘাস ওড়াও। আবার বিপক্ষের পেস বোলারদেরও ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে হবে। তাই ডাকো শিবশঙ্করকে।

কিন্তু এত কিছুর পরেও বঙ্গ শিবিরে চোরা টেনশন কেন? রাতেও তো দেখা গেল, পিচ-পরিবর্তন ঘটানোর পরেও টিম ধোঁয়াশায়। ধোঁয়াশা সেই উইকেট নিয়ে।

প্রশ্ন একগুচ্ছ। ল্যাটারাল মুভমেন্ট কমলেও সেটা কতটা কমবে? টস সত্যিই ‘অথর্ব’ হয়ে পড়বে তো? নাকি শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে ক্ষতি হচ্ছে বাংলারই? কে না জানে, বাংলার আসল শক্তি পেস বোলিং। মুভমেন্ট কমে যাওয়া মানে কিন্তু অশোক দিন্দার বিষাক্ত আউটসুইংগুলোও নির্বিষ হয়ে পড়া।

বেঙ্গল এক্সপ্রেস বরাভয় দিচ্ছেন। গাড়িতে ওঠার আগে অশোক দিন্দা বলে গেলেন, “আগের ম্যাচের মতো পিচে আর মুভমেন্ট হবে না। টিপিক্যাল ইডেন গার্ডেন্স উইকেট হবে। কিন্তু অশোক দিন্দা ঠিকই উইকেট পাবে।” কিন্তু বিভ্রান্তি বাড়িয়ে দিলেন বঙ্গ অধিনায়ক নিজেই। লক্ষ্মীরতন শুক্ল বললেন, টস এখনও ফ্যাক্টর! বললেন, টস জিতলে কোনও দিকে না তাকিয়ে ব্যাটটাই করতে হবে।

তা হলে ঘাস উড়িয়ে লাভ?

শোনা গেল, টসকে নিষ্ক্রিয় করা যদি একটা কারণ হয়, তা হলে দ্বিতীয়টা, রেলওয়েজ পেস অ্যাটাক। ভাল করে বললে দুই পেসার কৃষ্ণকান্ত উপাধ্যায় এবং অনুরীত সিংহ। যাঁরা গোটা রঞ্জি মরসুম বিভিন্ন বিপক্ষকে কাঁপিয়ে চলেছেন। বলা হচ্ছে, বাংলা পেস বোলিং নির্ভর টিম সেটা একটা প্রচলিত ধারণা। কৃষ্ণকান্ত-অনুরীত রঞ্জি থেকে টানা দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছেন রেলের হয়ে। বাংলার সেখানে ধারাবাহিক সফল পেসার বলতে একজন, দিন্দা। মহম্মদ শামিকে আর পাওয়া যাবে না। বীরপ্রতাপ সিংহ আছেন, কিন্তু তিনি রঞ্জি টিমে ছিলেন না। বিজয় হাজারেতেও তাঁর পারফরম্যান্স অসাধারণ নয়। বাংলা শিবির বলছে, ইডেনের উইকেট আগের মতোই সবুজ রেখে রেলের বিরুদ্ধে নামলে প্রবল ঝুঁকি হয়ে যেত। বিশেষ করে পরে ব্যাট করতে হলে। প্রচণ্ড গতিতে মুভমেন্ট সামলাতে হলে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। তার চেয়ে বরং এটা ভাল হল। এ বার দু’টো টিমের বোলিংকেই সমান করে দেওয়া গেল। পরিবর্তিত উইকেটে কৃষ্ণকান্ত-অনুরীত যা, দিন্দা-লক্ষ্মী-সায়নও তাই।

সমস্ত শুনে বাংলার এক নির্বাচক বলছিলেন, “এক দিক থেকে ঠিক। কিন্তু তা হলে টিমে বাড়তি ব্যাটসম্যান নিতে হবে।” কিন্তু সেখানেও বিস্তর কাটাকুটি। মহম্মদ শামির জায়গায় তিনটে নাম বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। পেসার বি অমিত। বাঁ হাতি স্পিনার ইরেশ সাক্সেনা। ব্যাটসম্যান দেবব্রত দাস। অর্থাৎ, ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে নামা শেষ পর্যন্ত হবে কি না, নিশ্চিত নয়। ম্যাচের দিন সকালে আরও একবার উইকেট দেখা হবে। তার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

এক দিকে বিজয় হাজারে সেমিফাইনাল। তার উপর বাংলা বনাম রেল। চলতি রঞ্জি মরসুমকে ধরলে যে যুদ্ধের মাহাত্ম্য ভাল রকম আছে। গত রঞ্জিতে দু’বার সম্মুখসমর হয়েছে বাংলা-রেলের, দু’বারই তুলকালাম। দিল্লিতে সন্দীপন দাসকে মুরলী কার্তিকের ‘মানকাডেড’ করা নিয়ে তীব্র গণ্ডগোল। অশোক দিন্দার প্রতি রেল ক্রিকেটারদের অশালীন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি। যে অপমানের শোধ আবার নিয়েছে ইডেন, নিয়েছে রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে। যেখানে বল-বিকৃতি করে চূড়ান্ত অপমানিত হতে হয়েছে রঞ্জির রেল অধিনায়ক কার্তিককে। টানা তিন-চার দিন শুনতে হয়েছে ইডেন দর্শকের বিদ্রূপ আর ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি। কার্তিককে এক সমর্থক ক্রমাগত ধিক্কার দিচ্ছেন দেখে সংশ্লিষ্ট সমর্থককে অনুরীত সিংহ-র হুমকি গুলি করে উড়িয়ে দেব!

রেল রোকো। সবিস্তার...

যে যুদ্ধ বোধহয় ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’ নইলে নীচের ঠোকাঠুকিগুলো কীসের লক্ষণ?

অনুরীত সিংহের বোলিং দেখার জন্য এ দিন রেল-নেটে চলে গেলেন মনোজ তিওয়ারি। কিছুক্ষণের মধ্যে স্পিন বোলিং শুরু করে দিলেন পেসার অনুরীত!

বাস আসতে কেন দু’মিনিট দেরি করছে, তা নিয়ে সিএবি-র গার্ডদের কথা শোনাচ্ছেন রেল কোচ অভয় শর্মা। গজগজ করছেন, “প্রত্যেক বারই কি আমাদের সঙ্গে এগুলো চলবে?”

লক্ষ্মীরতন শুক্ল ঠান্ডা গলায় বলে দিলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে ওদের কারও সঙ্গে আমার রেষারেষি নেই। কিন্তু ম্যাচ নিয়ে ভালই থাকবে!”

মুরলী কার্তিক শুক্রবার নেই। বিজয় হাজারে খেলছেন না। কিন্তু প্রতিপক্ষে আজও ‘বিতর্কিত’ অনুরীত আছেন, পরাক্রমী ব্যাটসম্যান মহেশ রাওয়াত আছেন (পঞ্জাব ম্যাচে সেঞ্চুরি), আছেন বাংলায় ‘ব্রাত্য’ অরিন্দম ঘোষ। উল্টো দিকে আবার সেই দিন্দা, লক্ষ্মী, মলহোত্র। স্ফুলিঙ্গ রঞ্জিতে যেমন ছিল, বিজয় হাজারেতেও আছে। কার্তিক তাই থাকুন, না থাকুন কিছু যায় আসে না।

ইডেনে আজ আবার টেনশনের বাংলা বনাম রেল।

ইডেনে আজ আবার বাংলা বনাম বাঙালি।

প্রথম সেমিফাইনালে

কর্নাটক : ঝাড়খণ্ড

(সল্টলেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ, সকাল ৮-৪৫)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE