Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
মেসিকে রোখার দায়িত্বে খুনের হুমকি পাওয়া ফুটবলার

ছিয়াশির সঙ্গে মিল পাচ্ছে আর্জেন্তিনা

স্পেনের কাগজগুলোয় লেখা হয়েছে, বিশ্বকাপের পরেই আর্জেন্তিনা কোচ হতে চলেছেন দিয়েগো সিমিওনে। আটলেটিকো মাদ্রিদের গত মরসুমের পারফরম্যান্সের পুরস্কার সিমিওনে যে পাবেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু তা বলে এই সময়ে এ সব ভাবনা! যখন একটা রাত পেরোলেই সাবেয়া বাহিনী নামছে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে!

তাঁকে ঘিরেই যাবতীয় পরিকল্পনা। ব্রাসিলিয়ায় আর্জেন্তিনার প্র্যাকটিসে মধ্যমণি মেসি। ছবি: এএফপি

তাঁকে ঘিরেই যাবতীয় পরিকল্পনা। ব্রাসিলিয়ায় আর্জেন্তিনার প্র্যাকটিসে মধ্যমণি মেসি। ছবি: এএফপি

অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়
ব্রাসিলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৮
Share: Save:

স্পেনের কাগজগুলোয় লেখা হয়েছে, বিশ্বকাপের পরেই আর্জেন্তিনা কোচ হতে চলেছেন দিয়েগো সিমিওনে। আটলেটিকো মাদ্রিদের গত মরসুমের পারফরম্যান্সের পুরস্কার সিমিওনে যে পাবেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু তা বলে এই সময়ে এ সব ভাবনা! যখন একটা রাত পেরোলেই সাবেয়া বাহিনী নামছে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে!

সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন আর্জেন্তিনা কোচকে দেখে মনে হল, প্রতিটা ম্যাচের আগে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচটা তিনি খেলেন দেশীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে। প্রশ্নবাণে অস্থির করে দেওয়া হচ্ছে জাতীয় দলের কোচকে। মেসি কেন জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলান না সেই কয়েকশো বার উচ্চারিত প্রশ্ন থেকে আপনার মাঝমাঠে এত জায়গা যে পলিটিক্যাল পার্টির কনফারেন্স হয়ে যেতে পারে নানা ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া দেশটার নাম আর্জেন্তিনা। আর তুমি সেই দেশের জাতীয় কোচ।

একটা সময় আর্জেন্তিনা কোচকে অভিমানীও শোনাল, “আমি মেনে নিচ্ছি, যে মানের ফুটবলটা লোকে আমাদের কাছে আশা করে, তার ধারেকাছে আমরা পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু জয়টাও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ফ্লুকে জয়। আর হারলে সব শেষ হয়ে গেল এটাও বোধহয় ঠিক নয়। তাই না!”

গোটা দুনিয়ার বেটিং সাইটগুলো ম্যাচের সব রকম পরিসংখ্যান হাতড়ে বলে দিচ্ছে, ম্যাচটায় আর্জেন্তিনাই ফেভারিট। জেতার চান্স ৫৮ শতাংশ। বেলজিয়াম সেখানে অনেকটা পিছিয়ে। ৪১ শতাংশ। কিন্তু সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচে মেসিদের পারফরম্যান্সে অনেকে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। বড় একটা প্রশ্নের জায়গায় সাবেয়া নিজেই বোধহয় দাঁড়িয়ে। সামনে মেসি, ইগুয়াইনের পাশে ডান দিকে উইংয়ে কে? লাভেজ্জি, না পালাসিও! আগের ম্যাচে মাঝমাঠে মেসি গোলের বলটা ধরেছিলেন পালাসিওর পাস থেকেই। তবে একটা সুখবর। আগেরো আজ দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেন। সাবেয়া জানিয়েও গেলেন, “রিজার্ভ বেঞ্চে কাল ও থাকছে। দেখে ঠিক করব মাঠে নামতে পারবে কি না।” সাংবাদিক সম্মেলনে সিংহভাগ প্রশ্ন আসছিল মেসিকে নিয়েই। এক দিকে, মারাদোনা নিজে ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং স্টুডিওয় বসে নিয়মিত বলে যাচ্ছেন, ছেলেটার উপর বড় চাপ হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, দেশীয় মিডিয়ার নানা প্রশ্ন সেটাকে নিয়েই। “দেখুন, মেসি বিশ্বের সেরা ফুটবলার। যে কোনও টিমই ওর উপর নির্ভর করত। কিন্তু এই টিমটা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। মেসির কাছে সবাই একটু বেশি কিছু আশা করে। খুব স্বাভাবিক, তাই না!” কিন্তু মাঝমাঠে এত ফাঁকা জায়গা কেন? আপনার মনে হয়, বেলজিয়াম মাঝমাঠে এত জায়গা দেবে আপনার দলকে? সাবেয়াকে এখানেই যেন একটু আড়ষ্ট লাগছে।

খোশমেজাজ। ব্রাসিলিয়ায় প্র্যাকটিসে মেসি। ছবি: এএফপি

সমস্যাটা কোথায় তিনি নিজেও তো জানেন ভাল ভাবেই। বেলজিয়াম দলটার মাঝমাঠটা কী ভাবে ওঠানামা করছে সেটাও তাঁর জানা। আপনার কি মনে হয় না, মেসি আর দি’মারিয়া কাল মার্কড থাকবে? সেক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী? সাবেয়ার কথায় আবার সেই ফাঁকা জায়গার দখল নেওয়ার স্ট্র্যাটেজি। “গোটা দুনিয়ায় এখন এটাই চল। অ্যাটাকিং থার্ডে যারা আছে, তাদের মাথায় রাখতে হবে ওপেন স্পেস পাওয়া যাবে না।”

বেলজিয়াম শিবিরে সবচেয়ে স্বস্তির জায়গাটা বোধহয় এই ম্যাচের ইতিহাস। বিরাশিতে মারাদোনার আর্জেন্তিনাকে প্রথম ম্যাচেই হারিয়েছিল বেলজিয়াম। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যে কোনও অঘটন হবে না সেটা টুর্নামেন্টে আসার আগে এনজো শিফো-র সাক্ষাৎকারে বোঝা যাচ্ছিল। “অসাধারণ কিছু প্লেয়ার আছে এ বারের টিমটায়। আমি বলছি নক-আউট স্টেজে ওরা অনেক অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। নির্ভর করছে শুধু সেই দিনটার উপর।”

সাবেয়াও দেখলাম প্রচুর নম্বর দিলেন টিমটাকে। “বিরাশির ওই টিমটা ওদের গোল্ডেন জেনারেশন ছিল। আমি বলব এই টিমটাও তাই। আসলে ওয়ার্ল্ড কাপটাই এখন অনেক ওপেন হয়ে গিয়েছে।” সঙ্গে এটাও বলতে ভুলছেন না, “এখন আর চোট-বড় টিম বলে কিছু হয় না। প্রতিটা দেশের প্লেয়াররা এখন ইউরোপের লিগে খেলছে। বিদেশে খেলে তৈরি থাকছে। প্রত্যেকের শক্তি, দুর্বলতাগুলো সবাই জানে। ফলে আলাদা করে আর ফেভারিট বলা যাবে না কাউকেই। নক-আউট স্টেজে কতগুলো ম্যাচ একস্ট্রা টাইমে গেল দেখুন, তা হলেই বুঝে যাবেন।”

সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই প্র্যাকটিসে গেলেন সাবেয়া। সহকারী কোচরা মাঠ একেবারে তৈরি রাখেন। কিন্তু সাংবাদিকদের প্র্যাকটিস দেখার জন্য যে পনেরো মিনিট ধার্য থাকে, তাতে অবশ্য কিছুই বোঝার নেই। কিন্তু আর্জেন্তিনা শিবিরে কান পাতলে বোঝা যাচ্ছে, অন্তত দু’টো পরিবর্তন হচ্ছেই। দু’টো হলুদ কার্ড দেখে লেফট ব্যাক রোখো নেই। তাঁর জায়গায় হোসে বাসান্তা। আর ফ্রেদরিকো ফার্নান্দেজের বদলে দেমিসেলিস ঢুকবেন। এ দিন প্র্যাকটিসে নাকি তাই দেখা গিয়েছে। তবে সামনে ডান দিকে লাভেজ্জিই থাকছেন। ওখানে সাবেয়ার পরম ভরসার জায়গা মেসি আছেন। তাই নতুন কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যেতে চান না কোচ।

বেলজিয়াম কোচ উইলমটস ঠিক এই জায়গাতেই খোঁচা দিয়ে গেলেন প্রেস কনফারেন্সে। “আর্জেন্তিনা টিমটার ব্যালান্স কই? সবটাই তো মেসি নির্ভর। মেসিকে থামালেই সব শেষ।” আর মেসিকে থামানোর দায়িত্ব নাকি থাকতে পারে অ্যালেক্স উইটসেলের উপর। এই টুর্নামেন্টে হ্যাজার্ড, লুকাকুদের পাশে চোখে পড়ছে রাশিয়ান ক্লাব জেনিতের এই মিডফিল্ডারকে। প্রচণ্ড টাফ। একটা সময় বেলজিয়ান লিগে নাকি ট্যাকল করে ওয়াসিলুয়েকি নামের এক ফুটবলারের পা ভেঙে দেন। প্রচণ্ড বিতর্ক হয়েছিল সেই সময়। খুনের হুমকিও পেয়েছিলেন। বেলজিয়ান ফুটবল ফেডারেশন সাসপেন্ডও করেন। সেখান থেকে কামব্যাক করে উইটসেল শনিবারের ম্যাচে মেসির দায়িত্বে। আর্জেন্তিনা শিবির অবশ্য তাতে পাত্তা দিচ্ছে না। বিরাশির হার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই ছিয়াশির মারাদোনার টিমকে দেখাচ্ছে। সে বার সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারিয়েছিলেন মারাদোনা। তারপর ট্রফি। এ বার কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়াম। এ বার মেসি। কোথায় যেন মিল পাচ্ছে আর্জেন্তিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anilabh chattopadhyay fifaworldcup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE