Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
আজ সামনে পাহাড়ি রয়্যাল

ড্রেসিংরুমের রোগ না সারালে ভুগবেন আর্মান্দো

ড্রেসিংরুম রসায়নের খারাপ প্রভাব কি পড়ছে ইস্টবেঙ্গলের খেলার উপর? ডেম্পোর কাছে পাঁচ গোলে হারের হাত থেকে বাঁচলেও, গুঞ্জন উসকে দিয়েছেন স্বয়ং কোচ আর্মান্দো কোলাসো। “আমার টিমে নানা ধরনের ছেলে আছে। একদল পঞ্জাবি, একদল বিদেশি আছে, একদল বাঙালি—নানা গ্রুপ। কিন্তু আমাদের টিমে কোনও সমস্যা নেই। সবার মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল। অন্য ক্লাবে বিদেশি নিয়ে এত ঝামেলা, আমার ডুডু-র্যান্টিরা কিন্তু সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলে।”

যুদ্ধের প্রস্তুতির ফাঁকে র্যান্টি-ডুডু। মঙ্গলবার। ছবি: উত্‌পল সরকার

যুদ্ধের প্রস্তুতির ফাঁকে র্যান্টি-ডুডু। মঙ্গলবার। ছবি: উত্‌পল সরকার

রতন চক্রবর্তী
মারগাও শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭
Share: Save:

ড্রেসিংরুম রসায়নের খারাপ প্রভাব কি পড়ছে ইস্টবেঙ্গলের খেলার উপর?

ডেম্পোর কাছে পাঁচ গোলে হারের হাত থেকে বাঁচলেও, গুঞ্জন উসকে দিয়েছেন স্বয়ং কোচ আর্মান্দো কোলাসো। “আমার টিমে নানা ধরনের ছেলে আছে। একদল পঞ্জাবি, একদল বিদেশি আছে, একদল বাঙালি—নানা গ্রুপ। কিন্তু আমাদের টিমে কোনও সমস্যা নেই। সবার মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল। অন্য ক্লাবে বিদেশি নিয়ে এত ঝামেলা, আমার ডুডু-র্যান্টিরা কিন্তু সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলে।”

মঙ্গলবার সকালে অনুশীলনের পর কেন হঠাত্‌ এ রকম কথা বললেন ইস্টবেঙ্গলের গোয়ান কোচ তা নিয়ে চর্চা শুরু হওয়ার মধ্যেই অন্য ছবি দেখা গেল টিম হোটেলের লবিতে। হরমনজ্যোত্‌ সিংহ খাবরার সঙ্গে রীতিমতো আঙুল তুলে তর্কাতর্কি করতে দেখা গেল বলজিত্‌ সিংহ সাইনি, গুরবিন্দর সিংহদের। পুরো পঞ্জাবি ব্রিগেড সেখানে হাজির। গুরমুখী ভাষায় কথা বলায় বোঝা যায়নি কে কাকে কী বলছেন উত্তেজিত হয়ে। তবে অঙ্গভঙ্গি দেখে ব্যাপারটা যে গুরুতর তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। টিমের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মাঠের ভিতর ফুটবলারদের টিম মিটিংয়ে কিছু বলেছিলেন অধিনায়ক খাবরা, তা নাকি মনঃপুত হয়নি তাঁর দেশোয়ালিদের।

ডেম্পোর মতো টিমের কাছে বিশ্রী হারের পরের দিন রীতিমতো বেসামাল লাল-হলুদ শিবির। আজ বুধবার তাদের ম্যাচ রয়্যাল ওয়াহিংডোর মতো পাহাড়ি দলের সঙ্গে। যারা আর্থার পাপাসের দলের মতোই একটা ম্যাচ জিতে রয়েছে এই গ্রুপে। সেই ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন নিয়ে একপ্রস্ত নাটক হল। আর্মান্দো ডেম্পো ম্যাচের পর সবাইকে বলেছিলেন, “পরপর খেলা ছেলেরা ক্লান্ত। তাই অনুশীলন হবে না। সামান্য স্ট্রেচিং হবে হোটেলে।” কিন্তু এ দিন সকালে হল উল্টো জিনিস। পুরো দল নিয়ে তিনি চলে গেলেন মাঠে। তার পর সেখান থেকে সোজা বাড়িতে ডাক্তার দেখাতে। টিমের পারফরম্যান্সে লাল-হলুদের গোয়ান কোচ এতটাই হতাশ যে এ দিন অনুশীলনের পর পুরো টিমকে ‘কী ভাবে ফিরে আসা যায়’ তার জন্য দাঁড় করিয়ে দিয়ে চলে আসেন অন্য দিকে। সেখানে সতীর্থদের জন্য বক্তৃতা দেন ডুডু থেকে র্যান্টি, মেহতাব থেকে খাবরারা। ‘টিমের মধ্যে সংযোগ বাড়াতে হবে’, ‘মাঠে এক একজনকে লিডারশিপ নিতে হবে’-র মতো ছেঁদো কথা। যা দেখে টিমের এক সিনিয়র ফুটবলারের মন্তব্য, “আরে, আমরা তো মাঠে খেলছিলাম। কী ভাবে জানব কী ভুল হয়েছিল? কোচ তো বাইরে ছিলেন। তিনিই তো ভুলগুলো শুধরে দেবেন! আমাদের বলতে দিয়ে কী লাভ।”

রয়্যাল ওয়াহিংডো পাহাড়ি দল। প্রচণ্ড দৌড়য়। সেটা জানেন আর্মান্দো। তাদের কাছে হারলে শেষ চারে যাওয়ার দৌড়ে টিম আরও পিছিয়ে পড়বে সেটাও দেশের অন্যতম সফল কোচ জানেন না তা নয়। সে জন্যই এ দিন তিনি বলে দিয়েছেন, “ওরা প্রচণ্ড দৌড়য়। আমাদের বক্স টু বক্স খেলতে হবে। এই ম্যাচটা না জিততে পারলে কিন্তু হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিতে হবে। মেহতাব-লোবোর উপরই আস্থা রাখছি। আমার ধারণা, জয়ে ফিরবে ছেলেরা।” খাবরা এ দিন হোটেলে ঢোকার মুখে বলে গেলেন, “আজ তো অনুশীলন করলাম। কোচ খেলালে খেলব।” আর্মান্দো অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন টিমে কোনও পরিবর্তন হবে না। “ছেলেরা সবাই মিলে শপথ নিয়েছে, জয়ে ফিরবেই। ডুডু তো নিজেই বলছিল হারতে জানে না। ওরা সবাই বুঝেছে পরিস্থিতি।”

টিমের এই খারাপ সময়ে ফুটবলারদের বিবেকের উপর সব ‘দায়িত্ব’ ছেড়ে দিয়েছেন কোলাসো। কিন্তু তাতে সন্তোষ কাশ্যপের টগবগে দলের বিরুদ্ধে কতটা কাজ হবে সেটা সময় বলবে। আগে এ রকম চাপে পড়া অবস্থায় পুরো টিমকে যিনি উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব নিতেন সেই শীর্ষকর্তা সারদা কাণ্ডে জেলে। অন্য কর্তারা কেউ আসার প্রয়োজন মনে করেননি, পকেটের পয়সা খরচ করে। ফেডারেশন কোচ-সহ চার জনের খরচ দিচ্ছে বলে সব দায়িত্ব তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন টেকনিক্যাল ম্যানেজার কাম সহকারী কোচ কাম ফুটবলার অ্যালভিটো ডি’কুনহার হাতে। অ্যালভিটোর মা অসুস্থ হয়ে হঠাত্‌ই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তাঁর অবস্থাও ল্যাজেগোবরে। অনুশীলনের পর টিমকে হোটেলে পাঠিয়ে ছুটছেন হাসপাতালে, সেখান থেকে মেহতাব-ডুডুদের লাঞ্চ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা দেখতে ছুটে আসতে হচ্ছে। আবার ফিরে আসছেন বাড়িতে। ফলে শীর্ষকর্তার অবর্তমানে ক্লাব প্রশাসনের অন্দরের অবস্থা যেমন টিম-প্রশাসনের অবস্থা তেমনই। কোচ সাংবাদিকদের ডাকছেন হোটেলে, অ্যালভিটো বলে দিচ্ছেন হোটেলে প্রেস কনফারেন্স করা যাবে না। ইন্টেগ্রিটি অফিসারের বারণ আছে। অ্যালভিটো বলছিলেন, “মা হাসপাতালে, তা-ও ইস্টবেঙ্গলকে ভালবাসি বলে সামলানোর চেষ্টা করছি। কেউ তো নেই। সব প্লেয়ারদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলছি। টিম ঘুরে দাঁড়াবেই।” অ্যালভিটো জানেন ভেঙে পড়া টিমের মানসিকতা। নিজের মতো করে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে কি সমস্যা মিটবে?

আর্মান্দো যে টিম নিয়ে দেশের সেরা কোচ হয়েছেন, সেটা ছিল কোম্পানি। কর্পোরেট ঢঙে চলে। ইস্টবেঙ্গল তো সমর্থকের ক্লাব। সেখানে সবই চলে অপেশাদার হিসাবে। এখানে একটু রাশ আলগা করা মানেই কিন্তু আগুন ধরে যেতে পারে অন্দরে। একটা জয় না পেলে আপাতত তা বদলানোর নয়। ড্রেসিংরুমেই যে আসল অসুখ ইস্টবেঙ্গলের। আর্মান্দো সেটা যত তাড়াতাড়ি বোঝেন, ততই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE