Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
দুই চরিত্র, দুই মেরু

তিন পয়েন্টের স্বার্থে এ বার আপসের পথে আর্মান্দো

বুধবারের পড়ন্ত বিকেলে যুবভারতীর ফিল্ড টার্ফে সাপের নাচন দেখা যাবে? জবাবে নৈশভোজের টেবিল থেকেই ফোঁস করে উঠলেন ভারতীয় ফুটবলে বহুচর্চিত সেই ‘স্নেক ডান্স’-এর পেটেন্ট পকেটে নিয়ে ঘোরা ইউসিফ ইয়াকুবু। বললেন, “অবনমন বাঁচাতে আমার কাজ গোল করা। সেটাই করতে চাই। গোল পেলে উপরি হিসেবে ‘স্নেক ডান্স’ দেখবেন।”

ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে কোলাসো-সুয়োকা।

ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে কোলাসো-সুয়োকা।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

বুধবারের পড়ন্ত বিকেলে যুবভারতীর ফিল্ড টার্ফে সাপের নাচন দেখা যাবে?

জবাবে নৈশভোজের টেবিল থেকেই ফোঁস করে উঠলেন ভারতীয় ফুটবলে বহুচর্চিত সেই ‘স্নেক ডান্স’-এর পেটেন্ট পকেটে নিয়ে ঘোরা ইউসিফ ইয়াকুবু। বললেন, “অবনমন বাঁচাতে আমার কাজ গোল করা। সেটাই করতে চাই। গোল পেলে উপরি হিসেবে ‘স্নেক ডান্স’ দেখবেন।”

মুম্বই এফসি-র ইয়াকুবুর এই সংকল্পকেই আবার ভয় ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসোর। প্রথমে বললেন, “ও-ই তো আসল লোক মুম্বইয়ের দলটার। এই বয়সেও অনবদ্য ফর্মে। হ্যাটস্ অফ ফর হিম।” পরক্ষণেই ‘বাবুরাম সাপুড়ে’-র মতো পরিস্থিতিকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে বসলেন, “ইয়াকুবুকে এক বিন্দু ফাঁকা জায়গাও দেব না এ বার।”

লাল-হলুদ কোচের ভাগ্য ফিরিয়েছে শিলং। আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে সেখানকার রাংদাজিদকে হারানোর পরেই তিনি ফের দেখতে পেয়েছেন আই লিগ খেতাবের সোনালি রেখা। আই লিগে ওটাই শেষ জয় ইস্টবেঙ্গলের (১৭ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট)। আর ওই শিলংয়ের লাজংয়ের কাছেই লিগের ফার্স্ট বয় বেঙ্গালুরু এফসি (২০ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট) হারায় লাল-হলুদের রাডারে ফের ধরা পড়েছে আই লিগ চ্যাম্পিয়নের সিংহাসন। পরপর তিন ম্যাচ জিতলেই নিশ্বাস ফেলা যাবে বেঙ্গালুরুর ঘাড়ে। আর সুনীল, রুনিরা ফের পয়েন্ট নষ্ট করলেই আই লিগ জমে দই। আর এতেই কি দোলাচলে পড়ে গিয়েছেন আর্মান্দো?

ব্যর্থতার কুয়াশা ফের হাজির হলে ‘তৃতীয় হাত’ তৈরি রেখেছেন চিডিদের কোচ। “মরসুমের শুরু থেকে দলের কন্ডিশনিং হয়নি। ফিটনেসের অভাবেই দলের এই অবস্থা” মার্কা অজুহাত এ দিন শুনিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও আই লিগ হাতে তোলার সম্ভাবনাও যে রয়েছে! তাই সুয়োকার মতো ‘টিম ম্যান’ নন এমন ফুটবলারের সঙ্গেও ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে হচ্ছে তাঁকে। বেটো, র্যান্টি, জুনিয়রদের দাপটের সঙ্গে সামলানো কোচ বলছেনও সে কথা, “যারা অবাধ্য, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা ক্লাব দেখবে। একেই উগা-মোগা-মেহতাবরা নেই। তার পর একে একে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে কাকে খেলাব? তাই কখনও কখনও কোচকে কম্প্রোমাইজও করতে হয়।”

১৯ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট পাওয়া খালিদ জামিলের মুম্বই এফসি যে অবনমনের সমুদ্র থেকে বাঁচার জন্য এক পয়েন্টও খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চাইবে তা পুরোদস্তুর জানেন আর্মান্দো। তাই এ দিন মাঠে অনুশীলনের পর ফুটবলারদের চাগাতে লাল-হলুদ কোচ বলে দিয়েছেন, “ওরা রেলিগেশন বাঁচানোর জন্য মরিয়া হবে। যা হয়েছে সব ভুলে যাও। ঈশ্বর আমাদের ফের সুযোগ দিয়েছেন। সেটাকে কাজে লাগিয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে এসো।”


জাকুজিতে নির্বিকার জাপানি ফুটবলার।

‘কোহিনুর’সম এই তিন পয়েন্ট আনতে আর্মান্দোর স্ট্র্যাটেজিশুরুতেই গোল তুলে নাও। আর ‘অপারেশন ইয়াকুবু’-র জন্য অস্ত্র ডাবল কভারিং। কিন্তু ক্লাইম্যাক্স, রফি, প্রদীপ, আনোয়ারদের দাওয়াই? এ বার মুখ খুললেন হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা। চোটের জন্য দলের বাইরে থাকা মেহতাবের জায়গায় অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড বুধবার যার হাতে থাকবে। বললেন, “ওরা সেকেন্ড বলটা খুব ভাল খেলে। প্রথম পর্বে আমরা সেটা হারিয়েছিলাম বলেই ওরা জিতে গিয়েছিল। এ বার সেটা হবে না।”

শেষ পাঁচ ম্যাচে যেমন পরপর দু’ম্যাচ জেতেনি আর্মান্দোর ইস্টবেঙ্গল, ঠিক তেমনই শেষ পাঁচ ম্যাচে জয় নেই মুম্বই এফসি-র। মুম্বইকরদের হারিয়ে লিগ যুদ্ধে ভেসে থাকতে তাই রাংদাজিদ ম্যাচের দলে বিশেষ কোনও পরিবর্তন আনতে চান না আর্মান্দো। গোলে অভিজিৎকে রেখে তাঁর ব্যাক ফোর অভিষেক-অর্ণব-রাজু-রবার্ট। মাঝমাঠে ভাসুম-খাবরা-লোবো-জোয়াকিম। এ বার চিডির সঙ্গী সুয়োকা না লেন তা নিয়েই প্রশ্ন। এ দিন জাপানি ফুটবলারটিকে এক বার দলের সঙ্গে আর এক বার বাইরে রেখে দু’রকম অনুশীলনই করিয়ে রাখলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। আপসের অঙ্কে সুয়োকা রয়েছেন। আর জাপানির খারাপ ব্যবহার যদি সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে তা হলে চিডির সঙ্গী হবেন লেন। কোচ অবশ্য তাঁবু ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “দল বাছব বুধবার সকালে।” বালেওয়াড়িতে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে গোলদাতা সুয়োকা আবার বাড়ির পথ ধরলেন স্রেফ, “জিততে হবে”, বলেই।

আই লিগে মুখোমুখি সাক্ষাতে খালিদ জামিলের দলের বিরুদ্ধে পিছিয়ে লাল-হলুদ (১১ বারের সাক্ষাতে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে চার বার, মুম্বই এফসি পাঁচ বার)। সেই পরিসংখ্যান ৫-৫ করে আই লিগের সুঘ্রাণ নেওয়া যাবে বুধবার? আর্মান্দো বলছেন, “ছেলেরা গুরুত্ব বুঝেছে। ঠিক জিতিয়ে আনবে।”

লোবোদের এই বোধোদয়টাই আজ আই খেতাবের যুদ্ধে ভেসে থাকার শেষ লাইফ লাইন গোয়ান কোচের।

বুধবার আই লিগ

ইস্টবেঙ্গল-মুম্বই এফসি (যুবভারতী, ৩-০০)।

ছবি: উৎপল সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

iLeague armando debanjan bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE