Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মেসিকে ম্লান করে ফুটবল গ্রহের একচ্ছত্র সম্রাট

পুরনো দিনের স্ট্র্যাটেজিতেই চূর্ণ বায়ার্ন

বায়ার্ন মিউনিখের হৃদপিণ্ড বেকেনবাউয়ার আশঙ্কাটা ব্যক্ত করেছিল পেপ গুয়ার্দিওলার দলের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। তখন কেউ পাত্তা দেয়নি কাইজারকে।চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের ম্যাচটা টিভিতে দেখার পরে আমারও আশঙ্কা হয়েছিল। বায়ার্নকে বার্সেলোনা বানাতে গিয়ে গুয়ার্দিওলা বেআন্দাজ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে ফিরতি ম্যাচে সেটা একেবারে হাট হয়ে গেল বায়ার্নের ঘরের মাঠেই। ৪-০! সব মিলিয়ে পাঁচ গোলে হারল বায়ার্ন। এর পরে বোঝাই যাচ্ছে, ‘লা ডেসিমা’ মানে দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খোঁজে রিয়াল মাদ্রিদ কতটা কর্তৃত্ব নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে গত বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মান টিমকে। তার পরেই ফুটবল দুনিয়ায় উঠছে প্রশ্নটা। পজেশনাল ফুটবলের দিন কি শেষ প্রখর কাউন্টার অ্যাটাকের সামনে?

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৫:০৩
Share: Save:

রিয়াল মাদ্রিদ-৪ (র্যামোস-২, রোনাল্ডো-২)

বায়ার্ন মিউনিখ-০

বায়ার্ন মিউনিখের হৃদপিণ্ড বেকেনবাউয়ার আশঙ্কাটা ব্যক্ত করেছিল পেপ গুয়ার্দিওলার দলের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। তখন কেউ পাত্তা দেয়নি কাইজারকে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের ম্যাচটা টিভিতে দেখার পরে আমারও আশঙ্কা হয়েছিল। বায়ার্নকে বার্সেলোনা বানাতে গিয়ে গুয়ার্দিওলা বেআন্দাজ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে ফিরতি ম্যাচে সেটা একেবারে হাট হয়ে গেল বায়ার্নের ঘরের মাঠেই।

৪-০! সব মিলিয়ে পাঁচ গোলে হারল বায়ার্ন। এর পরে বোঝাই যাচ্ছে, ‘লা ডেসিমা’ মানে দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খোঁজে রিয়াল মাদ্রিদ কতটা কর্তৃত্ব নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে গত বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মান টিমকে। তার পরেই ফুটবল দুনিয়ায় উঠছে প্রশ্নটা। পজেশনাল ফুটবলের দিন কি শেষ প্রখর কাউন্টার অ্যাটাকের সামনে?

আমার উত্তর না। কেন?

আসলে গুয়ার্দিওলার দলের বিরুদ্ধে রিয়াল কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলের চেয়েও যে ফুটবলটা খেলল তা পুরনো আমলের কথায় ‘ব্যালান্সড ফুটবল’। গোদা বাংলায় ভারসাম্যের ফুটবল। রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণ তিন বিভাগেই রোনাল্ডোরা টেক্কা দিয়ে গিয়েছে সোয়াইনস্টাইগারদের।

কাগজে পড়েছিলাম, ফ্লোরেন্সে কোচিং কোর্সের সময় রিয়াল কোচ কার্লো আন্সেলোত্তির থিসিস পেপারের বিষয় ছিল ভবিষ্যতে ফুটবলের উৎকর্ষ ও গতি কী ভাবে বাড়ানো যায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে নিজের গবেষণাপত্র যেন হাতে-কলমে বিশ্বকে দেখিয়ে দিল আন্সেলোত্তি। গুয়ার্দিওলাকে যেন বুঝিয়ে দিল, পজেশনের সঙ্গে ফুটবলে পেনিট্রেশন এবং ডাইরেক্টনেস বলে আরও দুটো শব্দ রয়েছে। যা রিয়ালের ঝুলিতে আছে। বায়ার্নের অভিধানে নেই। আর রোনাল্ডো-বেলদের গতির কাছে রবেন-রিবেরিরা মনে করাল সেই খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটা।

প্রথম দশ মিনিট বাদ দিলে গোটা ম্যাচে রাজত্ব করল রিয়াল। কর্নার থেকে র্যামোসের প্রথম গোলটার সময় বায়ার্ন রক্ষণের কাউকে পোস্টের ধারেকাছে দেখলাম না। ওরা বুঝতেই পারছিল না কাকে ধরবে, কাকে নয়। রোনাল্ডো, বেল, দি’মারিয়া, বেঞ্জিমাএক সঙ্গে চার জনকে বক্সে দেখে লাম-আলাবারা যেন হকচকিয়ে যাচ্ছিল। র্যামোসের দ্বিতীয় গোলের মান্দজুকিচ ওকে ধরতেই পারল না।

আর রোনাল্ডোর গোল দু’টো? অবিশ্বাস্য! প্রথমটার ক্ষেত্রে ১১ সেকেন্ডে আটটা ফরোয়ার্ড পাস খেলল রিয়াল। ফাইনাল পাসটা গ্যারেথ বেল রোনাল্ডোকে বাড়িয়ে নিজের পেশাদার মানসিকতার পরিচয়ও দিল। তার পর নব্বই মিনিটে রোনাল্ডোর দ্বিতীয় গোল ওর অসাধারণ ব্যক্তিগত ‘ব্রিলিয়ান্স’। প্রতিপক্ষের ওয়াল-এর ওই রকম সূক্ষ্ম জায়গা দিয়ে বল গোলে রাখতে খুব কম জনই পারবে ফ্রি-কিকে। যতই ভাল খেলুক, গত চার বছর মেসির ছায়ায় থেকে যেতে হচ্ছিল রোনাল্ডোকে। এ বার মেঘের আড়াল সরে গিয়ে সূর্য হাসছে ওর অনবদ্য কেরিয়ারের উপর। বিশ্বকাপটাও রোনাল্ডো মাতিয়ে দিলে অবাক হব না। রোনাল্ডো সব সময়ই ফ্রি-কিক ভাল নেয়। অ্যাথলেটিজম দুর্দান্ত। কিন্তু মেসি বা মারাদোনার মতো ভিড়ের মধ্যে ড্রিবল করতে পারে না। ও পছন্দ করে ফাঁকা জায়গা।

গত রাতে লাম বারবার সেটাই দিচ্ছিল রোনাল্ডোকে। বাঁ-দিক দিয়ে দি’মারিয়া, রোনাল্ডো, বেঞ্জিমা ত্রিভুজ সামলানো সম্ভব হচ্ছিল না জার্মান রাইট ব্যাকের পক্ষে। বেঞ্চ থেকে যা দেখার পরেও গুয়ার্দিওলা না বার করল কোনও ‘অ্যান্টিডোট’, না দিল মরণ কামড়। উল্টে মাথা গরম করে ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল রিবেরিরা। এক বার থাপ্পড়ই মেরে বসল কার্ভাজালকে।

আসলে মুলার-ক্রুজদের খেলা দেখে মনে হল গোটা দলটা ক্লান্ত। মান্দজুকিচরা আটটা পাসের মধ্যে পাঁচটা ব্যাক পাস করছিল। যা কখনও কখনও চলে যাচ্ছিল তাদের কিপার ন্যয়ার পর্যন্ত! মুলার অ্যাটাকার না উইথড্রল ফরোয়ার্ড সেটা বুঝে উঠতেই পারছিলাম না। মাঝমাঠে সোয়াইনস্টাইগার, টনি ক্রুজরা যেন অতীতের ছায়া। বায়ার্নের খেলায় তাই কেবল একঘেঁয়ে পাস, পাস আর পাস। কোনও বৈচিত্র নেই।

আন্সেলোত্তি আবার ঠিক উল্টো। জুভেন্তাসে যখন ছিল, পির্লো-ইনজাঘির পিছনে জিদানকে রেখে খেলাত ৩-৪-১-২। চেলসিতে খেলাত ৪-৩-৩। গত মরসুমে প্যারিস সাঁ জাঁয় ৪-৩-২-১। বায়ার্নের বিরুদ্ধে বের্নাবাওতে খেলেছিল ৪-৪-২। অ্যাওয়ে ম্যাচে বেল-বেঞ্জিমা-রোনাল্ডোকে নিয়ে শুরু করলেন ৪-৩-৩। কিন্তু বিপক্ষের দখলে বল গেলে বেল নেমে আসায় সেটা হয়ে যাচ্ছিল ৪-৪-২। পরিস্থিতি বুঝে ফুটবল-ছক নিয়ে কতটা বিন্যাস মাথায় কাজ করে! সেখানে গুয়ার্দিওলা প্রথমার্ধের একটা সময় মাত্র আঠারো মিনিটে তিন গোল হজম করেও দাঁতে আর বোয়াতেংয়ের সামনে কেন এক জন ব্লকার দাঁড় করাল না, কে জানে!

তিকিতাকার পেটেন্টওয়ালার কাছে কোনও প্ল্যান ‘বি’ নেই!

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে প্রথমবার মাদ্রিদ-ডার্বি

বার্য়ানের মতো ঘরের মাঠের সুবিধা তুলতে পারল না চেলসিও। উল্টে পিছিয়ে থেকেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের টিকিট পাকা করে ফেলল আটলেটিকো মাদ্রিদ। প্রথম পর্বে চেলসি-আটলেটিকো ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। কিন্তু বুধবার রাতে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ফিরতি ম্যাচে লোপেজ, কোস্তা ও তুরানের গোলে ৩-১ গোলে জিতল আটলেটিকো। চেলসির একমাত্র গোলদাতা তোরেস। অর্থাৎ লিসবনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হবে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম আটলেটিকো মাদ্রিদের মধ্যে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে মাদ্রিদ-ডার্বি ফাইনাল এই প্রথম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE