Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বুড়ো ক্লোজের বিকল্প এখনও নেই জার্মানিতে

গত দুই বিশ্বকাপে জার্মানির গোলের পর মিরোস্লাভ ক্লোজের সামারসল্ট দেখেছিলাম। চিন্তা ছিল এ বারের তারুণ্য নির্ভর জার্মান আক্রমণ ভাগে ক্লোজের জায়গা হবে কি না! গোলের পর সামারসল্ট দিয়ে সেলিব্রেশন করতে অভ্যস্ত এই পোলিশ-জার্মান আবার দাঁড়িয়েছিল রেকর্ডের সামনে। এ বারের বিশ্বকাপে এক গোল করলেই ক্লোজে স্পর্শ করবে রোনাল্ডোর ১৫ বিশ্বকাপ গোলের রেকর্ডকে। পর্তুগালের বিরুদ্ধে ভেবেছিলাম সেটা হয়ে যাবে। কিন্তু সে দিন সেটা হয়নি।

বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে রোনাল্ডোকে ছুঁয়ে ক্লোজের ডিগবাজি। ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে রোনাল্ডোকে ছুঁয়ে ক্লোজের ডিগবাজি। ছবি: এএফপি

সুব্রত পাল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০৩:৫২
Share: Save:

জার্মানি-২ (গোটজে, ক্লোজে)
ঘানা-২ (আইয়ু, জিয়ান)

গত দুই বিশ্বকাপে জার্মানির গোলের পর মিরোস্লাভ ক্লোজের সামারসল্ট দেখেছিলাম। চিন্তা ছিল এ বারের তারুণ্য নির্ভর জার্মান আক্রমণ ভাগে ক্লোজের জায়গা হবে কি না!

গোলের পর সামারসল্ট দিয়ে সেলিব্রেশন করতে অভ্যস্ত এই পোলিশ-জার্মান আবার দাঁড়িয়েছিল রেকর্ডের সামনে। এ বারের বিশ্বকাপে এক গোল করলেই ক্লোজে স্পর্শ করবে রোনাল্ডোর ১৫ বিশ্বকাপ গোলের রেকর্ডকে। পর্তুগালের বিরুদ্ধে ভেবেছিলাম সেটা হয়ে যাবে। কিন্তু সে দিন সেটা হয়নি।

অবশেষে স্যাটারডে নাইট সেলিব্রেশনটাই হল ক্লোজের সেই বিশ্বরেকর্ড ছোঁওয়ার গোলে। বাড়িতে বসে স্ত্রী দেবস্মিতার সঙ্গে খেলাটা দেখছিলাম। ক্লোজে যখন নামছে তখনই ওকে বলেছিলাম, আজ ক্লোজে গোল করবেই। ক্লোজে দেখলাম কথাটা মিলিয়ে দিল। দেখলাম সেই সামারসল্টও। তাও আবার কখন? জার্মানি যখন ঘানার কাছে ১-২ হারছে। জীবনের শেষ বিশ্বকাপে তার প্রথম ম্যাচে ক্লোজেও মস্তানের মতো মাঠে নামল, দেখল এবং গোল করে বাঁচাল জার্মানির হারতে বসা ম্যাচ।

পর্তুগালের বিরুদ্ধে শুরুতেই গোল পেয়ে যাওয়ায় জার্মানি ছন্দটা পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঘানা আফ্রিকার ‘ব্রাজিল’। নাইজিরিয়া, ক্যামেরুনের পর ওরাই এখন রোমাঞ্চে ভরা আফ্রিকান ফুটবলের ধারক ও বাহক। তাই এ দিন রাতে শুরু থেকেই জার্মানিকে ওরা চেপে ধরেছিল। লাম-ওজিলদের পাওয়ার ফুটবলের সামনে ঘানা কিন্তু কেঁপে যায়নি। বরং শুরু থেকেই ওপেন ফুটবল খেলতে শুরু করল ওরা। প্রথমার্ধে কোনও দলই গোল করেনি। এই সময় জিয়ান, মুন্তারিদের অনুপ্রাণিত ফুটবলটা দেখে মনে হচ্ছিল, ওদের ফুটবলের রিংটোনটা আজতোমরা পর্তুগালকে চার গোল মারতে পারো। কিন্তু আমাদের সঙ্গে অত সহজে গোল পাবে না। ম্যাচেও সেটাই হল।

জানতাম দ্বিতীয়ার্ধে দুই কোচই দলে পরিবর্তন আনবেন। আর সেই পরিবর্তন আনতেই খেলাটা ঘুরে গেল। তবে একটা ব্যাপার বলব। সোয়াইনস্টাইগারকে দেখে মনে হল, ও ফিট। সেখানে খেদেইরাকে সত্তর মিনিট পর্যন্ত টানা হল বুঝলাম না। আমার মনে হয়, সত্তর মিনিটে করা দু’টো চেঞ্জ যদি আর দশটা মিনিট আগে করতেন লো, তা হলে ম্যাচটা হয়তো জার্মানি জিতেও যেতে পারত। খেয়াল করলে দেখবেন, নেমেই সোয়াইস্টাইগার আর ক্লোজে বাঁ দিক থেকে পরের পর আক্রমণ তুলে ঘানাকে ব্যতিব্যস্ত করে ছাড়ছিল। সোয়াইনস্টাইগারকে আটকাতে গিয়ে বারবার ওকে মারতে হচ্ছিল মুন্তারিদের। জার্মানির পরের ম্যাচ ক্লিন্সম্যানের যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। উনি নিজে এই জার্মান টিমটার কোচ ছিলেন কয়েক বছর আগে পর্যন্ত। টিমটার ঘাঁতঘোঁত খুব ভাল রকম জানেন। ওই ম্যাচে যদি আবার সোয়াইনস্টাইগারকে শুরু থেকে না নামানোর ভুলটা করেন লো, ভুগতে হতে পারে। একটা লামকে মাঝমাঠে তুলে এনে কখনওই মাঝমাঠের একটা সোয়াইনস্টাইগারকে রিপ্লেস করা যায় না। কারণ জার্মান টিমটার খেলাটাই তৈরি করে ও।


জিয়ানের গোলে এগিয়ে গিয়ে ঘানার নাচ। ছবি: রয়টার্স

যাক গে, আবার ম্যাচে ফিরি। ব্রাজিল বিশ্বকাপে একটা ট্রেন্ড চোখে পড়ছে। বেশ কিছু গোল হচ্ছে উইংকে ব্যবহার করে। কারণ সব দলই মাঝমাঠটা এমন ভাবে ব্লক করছে যে, অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন উইং থেকে বল উড়ে আসবে। শনিবারও তাই দেখলাম। মুলারের ক্রস থেকে গোটজের গোলই বলুন বা তার তিন মিনিটের মধ্যেই আফুলের ক্রস থেকে হেডে আইয়ুর সমতা ফেরানো। তবে জিয়ানের গোলটা একটু অন্য রকম। মুন্তারি ওকে মিডল করিডর দিয়েই গোলটা করাল। প্রথমার্ধে জার্মান ডিফেন্স যে রকম আঁটোসাঁটো লাগছিল দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু বোয়াতেং উঠে যাওয়ার পর সেই টাফ জার্মান ডিফেন্সটা আর দেখা গেল না। আর সত্যি কথা বলতে, শেষের মিনিট পনেরো-কুড়ি ছাড়া জার্মানদের চিরপরিচিত প্রেসিং ফুটবলটাও সে ভাবে দেখতে পাইনি। শুরু থেকে কেমন যেন মাঝে মাঝেই স্লো করে দিচ্ছিল ওরা।

সব মিলিয়ে তা হলে কী দাঁড়াল?

যা দেখছি, জার্মানি যাচ্ছে পরের রাউন্ডে। প্রায় চলেই গিয়েছে। বাকি তিনটে দলের পয়েন্টের বিচারে এখনও সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। পতুর্গাল রবিবার যদি যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে দেয়, দ্বিতীয় পজিশন নিয়ে লড়াইটা আরও জোর হবে। টিভিতে শুনছিলাম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘানার বিদায় এখন প্রায় সময়ের অপেক্ষা। যদিও আমার মনে হয়, গ্রুপ ‘জি’ থেকে প্রথম টিম হিসেবে বেরিয়ে যাওয়ার মতো টিম ঘানা ছিল না। যারা জার্মানিকে এমন ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে, তাদের বেরিয়ে যাওয়া কি ফুটবলপ্রেমীদের পক্ষে খুব ভাল বিষয়ের হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE