Advertisement
E-Paper

শামি ভারতটা দেখে নিক, আমি বাংলা দেখে নেব

বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে তাঁর মনে হয়েছে দিনটা আর পাঁচ দিনের মতো নয়। আলাদা। বাংলাকে গত রাতেই জিতিয়েছেন, অবিশ্বাস্য বোলিং স্পেলে-- ৯-৪-১৩-৩। মাঝে জিম, সিএবি ঘুরে একবার ময়দানের ক্লাবে। এবং সেখানে বিজয় হাজারে থেকে শামিকে টুর্নামেন্টে আর না পাওয়ার প্রসঙ্গ, জাতীয় দলে বঞ্চনার উত্তর অশোক দিন্দা খোলাখুলি যে ভাবে দিলেন...।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৪
যাঁর হাতে বল কথা বলে। বুধবার অশোক দিন্দা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

যাঁর হাতে বল কথা বলে। বুধবার অশোক দিন্দা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে তাঁর মনে হয়েছে দিনটা আর পাঁচ দিনের মতো নয়। আলাদা। বাংলাকে গত রাতেই জিতিয়েছেন, অবিশ্বাস্য বোলিং স্পেলে-- ৯-৪-১৩-৩। মাঝে জিম, সিএবি ঘুরে একবার ময়দানের ক্লাবে। এবং সেখানে বিজয় হাজারে থেকে শামিকে টুর্নামেন্টে আর না পাওয়ার প্রসঙ্গ, জাতীয় দলে বঞ্চনার উত্তর অশোক দিন্দা খোলাখুলি যে ভাবে দিলেন...।

প্রশ্ন: কাল থেকে তো আপনি আবার একা।

দিন্দা: মানে? ওহ, শামি থাকবে না সেটা?

প্র: হ্যাঁ।

দিন্দা: শামি থাকলে তো ভালই হত। ওর মধ্যে যে রিদমটা থাকে, যে খিদেটা থাকে, সেটা পেলে তো সেমিফাইনাল আরও সহজ হয়ে যেত। আমি আরও খুলে বল করতে পারতাম। শামি যখন নেই, তখন আমাকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। জুনিয়রদের নিয়ে বসতে হবে। চিন্তাভাবনা করতে হবে। দেখুন, আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চ যা, তাতে আশা করা যায় সেমিফাইনালে খারাপ কিছু হবে না। বীরপ্রতাপও ভাল করছে। তবে শামির সঙ্গে তো কারও তুলনা চলে না।

প্র: কোয়ার্টার-যুদ্ধের আগে আপনি বলেছিলেন, শামি আর আমি থাকা মানে প্রতিপক্ষ চাপে। সেটা তো আর বলা যাবে না?

দিন্দা: কে বলল? শামি ছাড়াও যে দিন্দা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, পরের ম্যাচেই বুঝিয়ে দেব। শেষ ন’-দশটা ম্যাচে কি সেটা আমি করিনি? যদি না করতাম, রঞ্জি, বিজয় হাজারে সেমিফাইনালে উঠতাম কি? আবার করব। তিনশো পাঁচ ওভার এখনও পর্যন্ত এই মরসুমে বল করেছি! ক্যাপ্টেনকে একবারও বলিনি, আর পারছি না। ক্লান্ত লাগছে। বরং ক্যাপ্টেন যত বার আমার হাত থেকে বল নিয়ে নিয়েছে, তত বার সেটা ছিনিয়ে নিয়েছি। কারণ জানতাম, আমাকে উইকেট বার করতে হবে। নইলে বাংলা বিপদে পড়বে।

তাই বলব, শামি ভারতটা দেখে নিক। আমি বাংলা দেখে নেব!

প্র: বাংলায় আজ পর্যন্ত বহু পেস-জুটি এসেছে। সুব্রত গুহ-সমর চক্রবর্তী। বরুণ বর্মণ-সুব্রত পোড়েল। দত্তাত্রেয় মুখোপাধ্যায়-সাগরময় সেনশর্মা। রণদেব বসু-শিবশঙ্কর পাল। রণদেব বসু-অশোক দিন্দা। এখন মহম্মদ শামি-অশোক দিন্দা। সেরার তালিকায় দিন্দা-শামি জুটি কোথায় থাকবে?

দিন্দা: যাঁদের নাম করলেন, তাঁদের অনেকের খেলাই আমি দেখিনি। রণদেবের সঙ্গে বল করেছি। আলাদা ক্লাসের পেসার। ওর তুলনায় আমি কিছুই না। আর নিজের কথা বলতে পারি, রণদা, শামি দু’জনের সঙ্গে বল করেই আমি প্রচুর উইকেট পেয়েছি। রণদা আর শামি ডিফারেন্ট বোলার। রণদা বল করলে একটা দিক থেকে মেডেন, মেডেন আর মেডেন আসত। চাপে পড়ে যেত ব্যাটসম্যান। উল্টো দিকে থাকতাম আমি— আগুনে স্পেল! এখন শামি থাকায় দু’দিকেই আগুনে স্পেল!

শামি-দিন্দা জুটি কতটা ভাল আরও বোঝা যাবে তেমন ব্যাটসম্যানের সামনে পড়লে। পেস বা সিম মুভমেন্টে যাদের কিছু করা যায় না। যেমন ধোনি। কোহলি। বা বোঝা যাবে এমন উইকেটে যেখানে সিম বা সুইং তেমন হয় না। সেখানে আমরা অন্যদের শুইয়ে দিই আগে, তার পর তো জুটির এক নম্বর, দু’নম্বর।

প্র: কিন্তু মঙ্গলবারের ইডেনে আপনাদের স্পেলকে তো বাংলা ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা বলে ধরা হচ্ছে।

দিন্দা: সেটা বলতে পারেন। ১৬৭ নিয়ে নেমেছিলাম। তামিলনাড়ুর যা ব্যাটিং লাইন আপ, সেখানে ওদের ৯০-এ অল আউট করে দেওয়া নিশ্চয়ই বড় ব্যাপার। শামিকে আমি নামার সময়েই বলেছিলাম, চার বেরোক বা ছয়, ভাববি না। ভাববি আমাদের দশটা তুলতে হবে। প্রথম দশ ওভারে তিন-চারটে ফেলে দিতে হবে। নতুন বলে তুই দু’টো নিবি তো আমি দু’টো। দেখবি, ওরা চাপে পড়ে যাবে।

প্র: এতটা তেতে ছিলেন?

দিন্দা: থাকব না? ম্যাচটাই তো গরম ছিল। ১৬৭-তে আমাদের অলআউট করে দিল। যেটা হওয়ার মতো টিম আমাদের নয়। ওতেই গরম হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের ১৬৭-তে ফেলে দিলে আমরা তার চেয়েও কমে ওদের নামিয়ে দেব।

প্র: তাই অত ফিস্ট পাম্প?

দিন্দা: ওটা ব্রেট লি, ডেল স্টেইনকে দেখে শেখা। মনে হয়েছিল, বিশ্বের সেরা দু’দন ফাস্ট বোলার যখন করে, দেখি কী ব্যাপার। দেখলাম, ফিস্ট পাম্প করলে আগ্রাসন অনেক বেড়ে যায়। মনে হয়, অ্যায়াম দ্য কিং অব টোয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস!

প্র: বল করার সময় ক্লাব হাউসের বক্সে নির্বাচকদের মুখগুলো খোঁজেননি?

দিন্দা: নাহ্। স্ত্রী এসেছিল। তাকেই দেখিনি। শুধু ব্যাটসম্যান দেখছিলাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেরা ওয়ান ডে বোলিংটাও হয়ে গেল।

প্র: আজ পর্যন্ত সেরা মরসুমও তো? আগে এক মরসুমে ৭২-টা উইকেট নিয়েছেন। এ বার এখনও ৫৩-টা। কিন্তু কোনও বারই এ ভাবে একা টানতে হয়নি।

দিন্দা: এ ভাবে ভাবলে সেরা। একা টানতে হলে উইকেট কমে যায়। বিপক্ষকে অল আউট করতেও সময় লাগে। কিন্তু আমার এটা ভাল লাগে। ভাল প্লেয়ার নিয়ে সবাই জিততে পারে। কিন্তু একা ম্যাচ বার করার মর্যাদা, তৃপ্তি আলাদা।

প্র: তার পরেও আপনি জাতীয় দলে ব্রাত্যই থাকবেন।

দিন্দা: কী করব? আমি বলতে পারি না, আমাকে নাও। আমি প্রমাণ করতে পারি। যত দিন ক্রিকেট খেলব, যত দিন হাতে বল থাকবে বুঝিয়ে যাব, অশোক দিন্দাও ইন্ডিয়া খেলতে পারত। এখন প্রথম স্পেল যেমন করব, শেষটাও তাই। নানা রকম ইয়র্কার মারতে পারি। পায়ে, আউটসাইড দ্য অফ স্টাম্পে। রাঁচিতেই বিজয় হাজারের ম্যাচে চব্বিশটা ইয়র্কার মেরেছিলাম। ওয়াকার ইউনিস এলে সেটা আরও ঝালিয়ে নেব।

আর আজও জানি না কেন ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলাম? ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া আটটা টেস্টে গেলাম, একটাও খেললাম না। সে বার ন’টা ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে ৫৯ উইকেট নিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যদি দেশের উইকেটে এ রকম বল করতে পারি, তা হলে অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকার পিচে কী করতে পারতাম! ভাবি, কে খেলতে পারত আমাকে। কিন্তু কখনও কমপ্লেন করিনি। নির্বাচকরা এখন আমার বোলিং দেখে ‘ওয়েল বোল্ড’ বলেন। আমি ভাবি, এমন বল করব যাতে ‘এক্সেলেন্ট’ বলেন। মঙ্গলবারেরটা নিশ্চয়ই এক্সেলেন্টই ছিল, তাই না?

প্র: সেমিফাইনালে তো রেলওয়েজ। সুবিধে না অসুবিধে?

দিন্দা: সুবিধে। রঞ্জিতে ওদের দু’বার খেলেছি। জানি কে কেমন। জিতে ফাইনালে উঠতে হবে।

প্র: উঠে নিশ্চয়ই জিততেও হবে।

দিন্দা: অবশ্যই।

প্রার্থনা

dinda vijay hazare trophy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy