Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
আফ্রিদি-আক্রোশে প্রায় ধ্বংস এশিয়া জয়ের স্বপ্ন

শেষ ওভারটা শামির জন্য রাখা যেত

শেষ ওভারে আফ্রিদির বিশাল ছয় দু’টো দেখে আঠারো বছর আগের শারজার এক ঐতিহাসিক রাত আচমকা মনে পড়ে গেল। সে দিনও এই ২৪৬-ই তাড়া করছিল পাকিস্তান। শুধু এশিয়া কাপের বদলে টুর্নামেন্টটা ছিল অস্ট্রেলেশিয়া কাপ। আর রবিবারের মতো কার্যত সেমিফাইনাল নয়, ওটা ছিল পুরোদস্তুর ফাইনাল। তখন আমি খুব ছোট। মনে আছে, দাদার সঙ্গে বসে ম্যাচটা দেখছিলাম। টেনশনে হাত-পা কাঁপছিল। শেষ বলে চার দরকার এই অবস্থায় সে দিন চেতন শর্মার বলটা সোজা বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন জাভেদ মিঁয়াদাদ!

আশা জেগে ছিল শেষ ওভারেও। কিন্তু অশ্বিনের পরপর দু’বলে শাহিদ আফ্রিদির ছয় জয়ে পৌঁছে দিল পাকিস্তানকে। এশিয়া কাপের ফাইনালে যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ার পরে নতশির অধিনায়ক কোহলি। রবিবার ঢাকার মিরপুরে। ছবি: এএফপি।

আশা জেগে ছিল শেষ ওভারেও। কিন্তু অশ্বিনের পরপর দু’বলে শাহিদ আফ্রিদির ছয় জয়ে পৌঁছে দিল পাকিস্তানকে। এশিয়া কাপের ফাইনালে যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ার পরে নতশির অধিনায়ক কোহলি। রবিবার ঢাকার মিরপুরে। ছবি: এএফপি।

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৮:৫৩
Share: Save:

শেষ ওভারে আফ্রিদির বিশাল ছয় দু’টো দেখে আঠারো বছর আগের শারজার এক ঐতিহাসিক রাত আচমকা মনে পড়ে গেল।

সে দিনও এই ২৪৬-ই তাড়া করছিল পাকিস্তান। শুধু এশিয়া কাপের বদলে টুর্নামেন্টটা ছিল অস্ট্রেলেশিয়া কাপ। আর রবিবারের মতো কার্যত সেমিফাইনাল নয়, ওটা ছিল পুরোদস্তুর ফাইনাল। তখন আমি খুব ছোট। মনে আছে, দাদার সঙ্গে বসে ম্যাচটা দেখছিলাম। টেনশনে হাত-পা কাঁপছিল। শেষ বলে চার দরকার এই অবস্থায় সে দিন চেতন শর্মার বলটা সোজা বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন জাভেদ মিঁয়াদাদ!

ওই বলটার পর পাঁচ মিনিট আমি বা দাদা, কেউ কথা বলতে পারিনি। আমাদের মতো সমস্ত ভারত সমর্থকের নিঃশ্বাস-প্রঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন মিঁয়াদাদ। টিভিতে আজ ম্যাচের শেষ ওভারে আফ্রিদির পরপর দু’টো ছয়ে পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য জয় দেখার পরও কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে বসেছিলাম। নিশ্চিত, আমার মতো প্রচুর ভারতবাসীও।

শারজার মিঁয়াদাদকে তো কোথাও মনে পড়িয়ে দিল মিরপুরের আফ্রিদি!

এত রাতেও দেখছি কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছেন, এমন কালান্তক রবিবারের পর অশ্বিনের কী হবে? বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করার জন্য লোকে যত না চেতন শর্মাকে মনে রেখেছে, তার চেয়ে বেশি রেখেছে মিঁয়াদাদের ওই ছয় মারার জন্য। অশ্বিন ভারতের এক নম্বর স্পিনারের ভাগ্যে এর পর তা হলে কী থাকবে? লোকে কি তাকেও মনে রাখবে আফ্রিদির কছে বেধড়ক মার খেয়ে ম্যাচটা হারার জন্য?

যুক্তি বলছে, না। গোটা বছর ধরে এখন এত বেশি ক্রিকেট হয় যে, আগের ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের রমরমা অতটা আর নেই। রবিবারের ম্যাচটা নিঃসন্দেহে আলাদা। সাম্প্রতিক কালে এত রুদ্ধশ্বাস ওয়ান ডে ম্যাচ দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। কিন্তু বছরে এখন দু’বার বা একবার পাকিস্তানের সঙ্গে দেখা হয়েই যায় ভারতের। মার্চেই তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা ভারত খেলবে পাকিস্তানের সঙ্গে। তখন যদি অশ্বিন ভাল বল করে ম্যাচটা জেতায়, আফ্রিদির কাছে লাঞ্ছনাটা লোকে মনে রাখবে না।

আর অশ্বিনকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। শেষ ওভারের প্রথম বলে যখন আজমলকে বোল্ড করল, তখনও ম্যাচে ভারতই ছিল। পাকিস্তানের তখনও পাঁচ বলে দরকার দশ, একটা উইকেট চলে গেলেই সব শেষ। কিন্তু স্পিনার পেলে আফ্রিদি বরাবরই ভয়ঙ্কর। শট টাইম হওয়ার দরকার নেই, মিসহিটেই ছয় মেরে দেবে। দু’টো ছয়ই ধরুন। একটাও টাইম হয়নি। কিন্তু ওর পাওয়ার এত যে, টাইমিংটা সত্তর ভাগ ঠিকঠাক হলেও বলটা মাঠের বাইরে পড়বে। ওর রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে যে আঠারো বল পিছু ওর একটা ছয় থাকে! যে রেকর্ডটা ওয়ান ডে-তে ক্রিস গেইলেরও নেই। আফ্রিদির বয়স হয়েছে, এখন ব্যাটসম্যান কম বোলার বেশি। তবু ছয় মারার ব্যাপারে বিশ্বে এখনও এক নম্বর। অশ্বিনকে তাই আমি দুষব না। বরং প্রশ্ন করব, আফ্রিদি নামার সময়ই ওকে ফেরত পাঠানোর স্ট্র্যাটেজিটা হল না কেন?

বরাবর দেখা গিয়েছে যে আফ্রিদি স্পিনার যতটা ভাল খেলে, পেসার ততটা নয়। অথচ আজ একবারও দেখলাম না শামি এসে ওকে বাউন্সার মারছে। বা শর্ট দিচ্ছে। ম্যাচের কোনও কোনও অংশে ভুবনেশ্বর কুমারের পারফরম্যান্স সমালোচনার মুখে পড়বে। যেমন ৪৭তম ওভারে তেরো রান দিয়ে বসা। কিন্তু এটাও ঘটনা যে, মার খেয়েছে যেমন, তেমন ভারতকে ফিরিয়েও এনেছিল ভুবি। নিজের পরের ওভারেই। তিন রান দিয়ে, একই ওভারে দু’টো উইকেট নিয়ে। ভুবি যে গতিতে বল করে তাতে বাউন্সার মারতে গেলে লাভ হবে না। উল্টে বাউন্ডারির বাইরে যাবে। কিন্তু শামির পেস ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটার। কখনও বা তারও বেশি। ও কেন দেবে না? আর ওর মাথায় না এলে বিরাটেরও উচিত ছিল ব্যাপারটা ওকে বলে আসা।

সর্বনাশের শুরু ও শেষ

কিন্তু দু’টোর একটাও ঘটল না। বিরাটের ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে অভিযোগ থাকার কথা নয়। বোলিং চেঞ্জ থেকে শুরু করে মার খেলেও বোলারে ভরসা রাখা সব গুণ আছে বিরাটের। ভুবি এক ওভারের তেরো দেওয়ার পরেও ওকেই আবার বল দিয়েছে। অন্য কাউকে ডাকেনি। যেটা ভাল। কিন্তু ওর আজ একটা ব্যাপারে ভুল হয়ে গেল। টিমে যখন তিনটে স্পিনার ছিল, অনায়াসে অশ্বিনকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানো যেত। তাতে সুবিধে হত যে, দু’জন পেসারের কুড়িটা ওভার অনেক ভাল ভাবে ব্যবহার করা যেত। শেষ দিকে শামির একটা ওভার পড়েও থাকতে পারত। আর শেষ ওভারে অশ্বিনকে মেরে যেমন দু’বলে বারো তুলে দিয়েছে আফ্রিদি, শামি থাকলে হয়তো পারত না। বাউন্সার না দিলেও, না। কিন্তু প্রথম দিকে পেসারদের দিয়ে পাঁচ-পাঁচ ওভার করিয়ে দিলে সেই সুযোগটা আর থাকে না।

রবিবার হারের জন্য বোলারদের খুব দায়ী করব না। এই বোলিং যে ২৪৫ নিয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনেছে, সেটাই যথেষ্ট। অসাধারণ বল করেছে অমিত মিশ্র, এত দিন পর কামব্যাক করে। আশ্চর্য লাগছে ভারতীয় ব্যাটিং দেখে। আরে, তোমরা নিজেরাই ম্যাচে প্রচুর মোমেন্টাম তৈরি করছ, আবার নিজেরাই সেটা বারবার নষ্ট করছ? এ দিন মিরপুরে ভারতীয় ইনিংসের সময় মাঝে মাঝেই কখনও পঁচিশ, কখনও চল্লিশ রানের পার্টনারশিপ হয়েছে। কিন্তু কোনওটাই বিগ পার্টনারশিপ হয়নি। ভারত যখন দু’শোর কাছে, তখনও মনে হয়েছিল আড়াইশো পার করবে। কোথায় কী? স্লগে রান ওঠে, ভারতের পড়ল উইকেট। আজমল একই ওভারে দু’টো নিয়ে চলে গেল। কোনও সন্দেহ নেই, ধোনিকে মিস করছে ভারত। ও থাকলে এই রানটাই ২৮০-তে যায়। কিন্তু দীনেশ কার্তিক দিয়ে সেটা হবে না। তিন বছর আগের কার্তিক আর আজকের কার্তিক— এক নয়। বুঝে পারছি না, কেন ঋদ্ধিমান সাহাকে ভাবা হবে না? ধোনি ছাড়া উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে ঋদ্ধির ধারেপাশে কেউ নেই। কী টেস্টে, কী ওয়ান ডে-তে। বাজি ফেলে বলতে পারি, ঋদ্ধি থাকলে কার্তিকের মতো স্টাম্পিং মিস করত না। ব্যাটেও হয়তো ওর চেয়ে বেশি রানই করত। আরও একটা ব্যাপার। পূজারাকে ফের টিমের বাইরে রাখা। ওকে কী করতে তা হলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? শুধু কি ওকে বাইরের জন্যই ভাবা হবে, উপমহাদেশে নয়?

যা পরিস্থিতি, অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে ভারতের এশিয়া কাপ মোটামুটি এখানেই শেষ। আফগানিস্তান ম্যাচটা মনে হয় নিয়মরক্ষারই দাঁড়াবে। হালফিলে অতিরিক্ত ক্রিকেট নিয়ে বিরক্তির বাজারে এমন টানটান একটা ম্যাচ দিয়ে বিদায়, শেষ ওভারে ভারত বনাম আফ্রিদির ডুয়েল— সবই হল। শুধু বিশ্বসেরা হয়েও এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হল না।

একবার নয়। বিশ্বকাপ জয়ের পর পরপর দু’বার।

বেঁচে শুধু অঙ্কে পয়েন্ট টেবল

পাকিস্তান ৩ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট। নেট রান রেট ০.৪৩৮। শ্রীলঙ্কা ২ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট। নেট রান রেট ০.১৬৮। ভারত ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট। নেট রান রেট -০.০২৭। আফগানিস্তান ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট। নেট রান রেট-০.৪০০। বাংলাদেশ ২ ম্যাচে ০ পয়েন্ট। নেট রান রেট -০.৩৮৪।

ভারতকে ফাইনালে যেতে হলে

• শ্রীলঙ্কাকে শেষ দুটো ম্যাচে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের কাছে হারতে হবে।

• পাকিস্তানকে শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারতে হবে।

• বাংলাদেশ জিতলেও তাদের বোনাস পয়েন্ট পাওয়া চলবে না।

• আফগানিস্তানকে বোনাস পয়েন্ট-সহ হারাতে হবে ভারতকে।

ঋদ্ধিমান কী দোষ করলেন?

কার্তিকের কিসসা

ম্যাচ ৩, ইনিংস ৩, রান ২৯, সর্বোচ্চ ২৩, গড় ১৪.৫০, স্ট্রাইক রেট ৫৬.৮৬, বাউন্ডারি ২, ক্যাচ ২, স্টাম্প ১।

স্টাম্পের সুযোগ নষ্ট: ২

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩০তম ওভারে রবীন্দ্র জাডেজার বলে কুমার সঙ্গকারাকে স্টাম্পের সুযোগ ফস্কান। সঙ্গকারার রান তখন ৩০। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রান করেন তিনি।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৭.৫ ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সোহেব মাকসুদকে স্টাম্প করার সুযোগ নষ্ট। মাকসুদ ক্রিজের বাইরে থাকলেও ঠিক সময়ে বল ধরতে পারেননি কার্তিক।

ভারত

রোহিত ক হাফিজ বো তালাহ ৫৬
ধবন এলবিডব্লু হাফিজ ১০
বিরাট ক আকমল বো গুল ৫
রাহানে ক হাফিজ বো তালাহ ২৩
রায়ডু ক আলি বো আজমল ৫৮
কার্তিক ক আজমল বো হাফিজ ২৩
জাডেজা ন.আ. ৫২
অশ্বিন স্টা আকমল বো আজমল ৯
শামি ক মাকসুদ বো আজমল ০
মিশ্র ন.আ. ১
অতিরিক্ত
মোট ৫০ ওভারে ২৪৫-৮
পতন: ১৮, ৫৬, ৯২, ১০৩, ১৫৫, ২১৪, ২৩৭, ২৩৭।
বোলিং: হাফিজ ৯-০-৩৮-২, গুল ৯-০-৬০-১, জুনেইদ ৭-০-৪৪-০,
আফ্রিদি ৮-০-৩৮-০, তালাহ ৭-১-২২-২, আজমল ১০-০-৪০-৩

পাকিস্তান

শার্জিল বো অশ্বিন ২৫
শাহজাদ ক অশ্বিন বো মিশ্র ৪২
হাফিজ ক ভুবনেশ্বর বো অশ্বিন ৭৫
মিসবা রান আউট ১
আকমল ক জাডেজা বো মিশ্র ৪
মাকসুদ রান আউট ৩৮
আফ্রিদি ন.আ. ৩৪
গুল ক রাহানে বো ভুবনেশ্বর ১২
তালাহ ক জাডেজা বো ভুবনেশ্বর ০
আজমল বো অশ্বিন ০
জুনেইদ ন.আ. ১
অতিরিক্ত ১৭
মোট ৪৯.৪ ওভারে ২৪৯-৯।
পতন: ৭১, ৯৩, ৯৬, ১১৩, ২০০, ২০৩, ২৩৫, ২৩৬, ২৩৬।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ১০-০-৫৬-২, শামি ১০-০-৪৯-০,
অশ্বিন ৯.৪-০-৪৪-৩, জাডেজা ১০-১-৬১-০, মিশ্র ১০-০-২৮-২।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

asia cup 2014 india-pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE