নিজের নিজের গন্তব্যে যাবেন বলে মিনিবাসে চড়েছিলেন যাত্রীরা। কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কেউ কেউ বসে। আর ছিল কিছু পুলিশ। বেশ যাচ্ছিল বাস। হঠাৎই যাত্রীরা দেখলেন, গন্তব্যের রাস্তা ছেড়ে বাসটি হাওড়া সদর থানার পথ ধরেছে। চেঁচামেচি জুড়ে দিলেন অনেক যাত্রী। “আরে আরে বাঁধা রাস্তা ছেড়ে থানায় বাস ঢোকাচ্ছ কেন,” পরিত্রাহি চিৎকার করে জানতে চাইলেন কেউ কেউ।
চিৎকার-চেঁচামেচিতে কান না-দিয়ে যাত্রী-সহ আস্ত মিনিবাসটাকেই থানা-চত্বরে ঢুকিয়ে দিল পুলিশ।
বুধবার বিকেলে হাওড়া সদর থানার পুলিশের এই কীর্তিতে বাসযাত্রীরা স্তম্ভিত। কমবেশি আতঙ্কিতও কেউ কেউ। এমন অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী আগে কখনও হননি তাঁরা। পরে জানতে পারলেন, বাসে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র পরীক্ষা পাশ করে চাকরির দাবিতে পথে নামা কিছু প্রার্থী। আসলে আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করতে না-পেরেই পুলিশ গোটা বাসটিকে ঢুকিয়েছে থানায়!
নাটকটা একাধিক অঙ্কের এবং বেশ কয়েক ঘণ্টার। আর তার সূত্রপাত এ দিন বেলা ১টা নাগাদ। দীর্ঘদিন ধরে মিছিল-অবস্থান-অনশন-আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও স্কুলশিক্ষকের পদপ্রার্থীদের দাবির কোনও সুরাহা হয়নি। তাই নবান্ন অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে এক দল প্রার্থী এ দিন হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের বাইরে জড়ো হন। কিন্তু ভুল করে বেশ কয়েক জন চলে যান মন্দিরতলায়। সেখানে বাস থেকে নামতেই পুলিশ ৩৭ জনকে গ্রেফতার করে শিবপুর থানায় নিয়ে যায়।
সেটাকে নাটকের প্রথম অঙ্ক ধরলে দ্বিতীয় অঙ্কের স্থান হাওড়া স্টেশন। মন্দিরতলায় সঙ্গীদের গ্রেফতার করা হয়েছে শুনেই হাওড়া স্টেশনে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারী প্রার্থীরা শিবপুর থানায় যাওয়ার জন্য ধর্মতলা-দানেশ শেখ লেন রুটের একটি মিনিবাসে উঠে পড়েন। পুলিশ পড়ে আতান্তরে। কারণ, ওই মিনিবাসে অন্য যাত্রীরাও ছিলেন। আন্দোলনকারীরা সেই ভিড়ে মিশে আছেন বুঝতে পেরেও পুলিশকর্মীরা তাঁদের আলাদা করে চিনতে পারছিলেন না। অগত্যা সাধারণ যাত্রী-সহ মিনিবাসটিকে হাওড়া সদর থানায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
আর সেই সিদ্ধান্ত কাজে পরিণত করতে উদ্যোগী হওয়া মাত্র হল্লা শুরু করেন আম-যাত্রীরা। তবে মাঝরাস্তায় বাস থামিয়ে তাঁদের রেহাই দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। যাত্রীরা চেঁচাচ্ছেন। বাসও দৌড়চ্ছে। এ ভাবেই এক সময় মিনিবাসটি পৌঁছে যায় থানার হাতায়। নিজেদের আস্তানার চৌহদ্দিতে পৌঁছে পুলিশ টিকিট দেখে দেখে সাধারণ যাত্রীদের একে একে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ন’জন আন্দোলনকারী এবং মিনিবাসের চালককে আটক করা হয়।
মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও স্কুলশিক্ষকের পদে নিয়োগপত্র না-পেয়ে বেশ কিছু প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ১৪৪ ধারা ভেঙে সল্টলেকে এসএসসি-র দফতরে ঢুকে অনশন করেছেন তাঁদের সঙ্গীরা। একাধিক বার ১৪৪ ধারার নিষেধ ভেঙেছেন তাঁরা। ব্যস্ত সময়ে অবরোধ করেছেন সল্টলেকের করুণাময়ীর মোড়ও। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তা হলে এ দিন এমন উদ্যোগ কেন?
হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) নিশাত পারভেজ জানান, মন্দিরতলায় ১৪৪ ধারা রয়েছে। ওখানে জমায়েত বা বিক্ষোভ নিষিদ্ধ। তাই আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি আটকাতে গিয়ে পুলিশ সাধারণ যাত্রীদের হেনস্থা করল কেন?
“ওঁরা সত্যিই সাধারণ যাত্রী নাকি আন্দোলনকারী, সেটা পরীক্ষা করার দরকার ছিল। সেই কারণেই বাসটিকে থানায় নিয়ে যেতে হয়েছে,” ব্যাখ্যা দেন ওই পুলিশকর্তা। পরে অবশ্য সাধারণ বাসযাত্রীদের মতো ছেড়ে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদেরও।
পথে নামা প্রার্থীরা কী বলছেন?
আন্দোলনকারীরা পুলিশের এ দিনের ভূমিকার নিন্দা করেছেন। তাঁরা জানান, চাকরির দাবিতে তাঁদের আন্দোলন তো চলবেই। তা ছাড়াও পুলিশের এই আচরণের প্রতিবাদে তাঁরা আরও বড় কর্মসূচি নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy