যে ভাবে শ্রীরামপুর আদালতের কিছু আইনজীবী বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস বয়কট করে চলেছেন, তাতে কলকাতা হাইকোর্টের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার বয়কটের ৫০ দিন উদ্যাপন উপলক্ষে যে ভাবে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে, তাতে সরাসরি হাইকোর্টকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের অনেকেই।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, কোনও নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থে সব সময়েই হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। শ্রীরামপুর আদালতের বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস বয়কটের ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি নিশিথা মাত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারকের সঙ্গে কথা বলেছেন। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল শ্রীরামপুর আদালত ঘুরে এসেছেন। তার পরেও আন্দোলন চলতে থাকায় আইনজ্ঞদের অনেকেই সরাসরি হাইকোর্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
এই ব্যাপারে বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিম্ন আদালতের বিচারকের কাজে বাধা দিলে বা তাঁর মুখের উপর অপমানজনক কোনও কথা বলা হলে, তিনি নিজেই আদালত অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন। তা না হলে হাইকোর্টেরও ক্ষমতা রয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার।”
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “অনেক আগেই হাইকোর্টের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। যা হচ্ছে তা খুবই খারাপ। হাইকোর্ট তদন্ত করছে শুনেছি। কিন্তু তাতে তো কাজের কাজ হচ্ছে না।” আর কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, হাইকোর্টের নিষ্ক্রিয়তাতেই শ্রীরামপুরে আন্দোলনকারী আইনজীবীরা প্রশ্রয় পাচ্ছেন।
এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কী করতে পারত? চিত্ততোষবাবু বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিচারক অন্যায় করে থাকলে, তাঁকে সরাতে হবে। আইনজীবীরা অন্যায় করে থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।” কেন যে এত দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে তা বুঝতে পারছেন না বলেও জানান তিনি। তাঁর আক্ষেপ, “ক্ষতি তো হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। তাঁদের কথা কেউ ভাবছেন না।” অশোকবাবুও বলেন, “মানুষের কাছে বিচার পাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাঁরা বিচার না পেলে হাইকোর্টকেই এগিয়ে আসতে হবে।”
তবে এই সব নিয়ে কোনও হেলদোল নেই শ্রীরামপুর আদালতের আন্দোলনকারী আইনজীবীদের। বুধবারও তাঁরা কাজ ফেলে সংগ্রাম আন্দোলন ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় মেতে ছিলেন। এ দিন যৌথ সংগ্রাম কমিটির দলের খেলা ছিল। খেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে নড়বেন না। উল্টে মন্দাক্রান্তাদেবীকে বদলি করা না হলে আগামী সোমবার থেকে গোটা আদালত বয়কট করার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
বিচারপ্রার্থীরা কিন্তু এই আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। শ্যামল মুখোপাধ্যায় নামে এক বিচারপ্রার্থী বলেন, “আইনজীবীদের এজলাস বয়কটের ফলে আমাদের চরম ক্ষতি হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদের এই ক্ষতির জবাব দেবেন কে? ওখানে আবার আন্দোলনের নামে ক্রিকেট হচ্ছে। এ সব দেখে এক জন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে খারাপ লাগছে।”
এ দিন বিকেল ৫টায় আদালতে আসেন হুগলির জেলা বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, আদালতের পরিকাঠামো নিয়ে তিনি বিচারকদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে মন্দাক্রান্তাদেবীর এজলাসের সমস্যা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। কিছু দিন আগে অবশ্য আদালতে এসে এ ব্যাপারে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন জেলা বিচারক। আইনজীবীদের বয়কট তুলে নেওয়ারও আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁর আর্জি অবশ্য কানে তোলেননি আন্দোলনকারী আইনজীবীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy