Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলে বড় ছেলে, ভাঙন প্রয়াত বিধায়কের ঘরে

ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেয় ভাই। মা আর মুখ দেখেন না ছেলের। মানুষে-মানুষে এমন বিচ্ছেদ করাতে পারে কেবল তিনটে জিনিস। প্রেম, সম্পত্তি, আর রাজনীতি। বসিরহাটের প্রয়াত বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের পরিবার ভেঙেছে রাজনীতি। ৮ বার বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন এই সিপিএম নেতা। তাঁর মৃত্যুর জেরেই বসিরহাটে দক্ষিণ কেন্দ্রে এই নির্বাচন হচ্ছে। নারায়ণবাবুর বড় ছেলে উৎপলকে শনিবার দেখা গেল তৃণমূলের ক্যাম্পে। ছোট ছেলে জ্যোতিপ্রকাশ নারায়ণবাবুর বাড়ির পাশেই সিপিএমের ক্যাম্পে বসে ভোট সামলাতে ব্যস্ত।

তৃণমূলের শিবিরে উৎপল মুখোপাধ্যায়। ডান দিকে, সিপিএম শিবিরে ব্যস্ত ভাই জ্যোতিপ্রকাশ মুখোপাধ্যায়। শনিবার। ছবি: দেবাশিস রায়

তৃণমূলের শিবিরে উৎপল মুখোপাধ্যায়। ডান দিকে, সিপিএম শিবিরে ব্যস্ত ভাই জ্যোতিপ্রকাশ মুখোপাধ্যায়। শনিবার। ছবি: দেবাশিস রায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৮
Share: Save:

ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেয় ভাই। মা আর মুখ দেখেন না ছেলের। মানুষে-মানুষে এমন বিচ্ছেদ করাতে পারে কেবল তিনটে জিনিস। প্রেম, সম্পত্তি, আর রাজনীতি।

বসিরহাটের প্রয়াত বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের পরিবার ভেঙেছে রাজনীতি। ৮ বার বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন এই সিপিএম নেতা। তাঁর মৃত্যুর জেরেই বসিরহাটে দক্ষিণ কেন্দ্রে এই নির্বাচন হচ্ছে। নারায়ণবাবুর বড় ছেলে উৎপলকে শনিবার দেখা গেল তৃণমূলের ক্যাম্পে। ছোট ছেলে জ্যোতিপ্রকাশ নারায়ণবাবুর বাড়ির পাশেই সিপিএমের ক্যাম্পে বসে ভোট সামলাতে ব্যস্ত।

অথচ সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনেও উৎপল ছিলেন সিপিএম দলেই। হঠাৎ এই পরিবর্তন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে উৎপলবাবু বলেন, “শেষের দিকে বামফ্রন্ট সরকারের মতাদর্শ মেনে নিতে পারছিলাম না।” গত ৩০ বছর ধরে সিপিএম পার্টির সদস্য এবং ২৭ বছর ধরে বসিরহাটের শাখা সম্পাদক থাকার পর তাই তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

তারপরেই ভাঙন ধরেছে পরিবারে। ছোট ছেলে জ্যোতিপ্রকাশ মেদিনীপুরের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনে শিক্ষকতা করেন। তাঁকে সে ভাবে রাজনীতি করতে দেখা যায়নি। কর্মসূত্রে বাইরেই থাকেন। ভোটের জন্য ফিরে দাদার দলবদল দেখে দুঃখিত তিনি। বলেন, “দাদার কাজে আমাদের পরিবারের লজ্জার শেষ নেই।” স্বপ্নেও দলবদল করার কথা ভাবতে পারেন না বোন রাজশ্রীও। নারায়ণবাবুর স্ত্রী নীলিমাদেবীও বলেন, “আমি আর বড় ছেলের মুখদর্শন করব না। যে দিন থেকে ও দল ছেড়েছে, সেদিনই ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক শেষ। বসিরহাটের প্রতি বাবার অবদান মনে রাখল না?”

রাজনীতির জেরে পরিবারে ভাঙন বড় কম হয়নি। খাস নেহেরু-গাঁধী পরিবারেই রাহুল গাঁধী আর বরুণ গাঁধী ভোটের ময়দানে লড়াই করছেন। দাদা মাধবরাও সিন্ধিয়া কংগ্রেসের তাবড় নেতা, বোন বসুন্ধরা রাজে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হ’ন। রাজ্যেও এমন উদাহরণ কম নয়। মামা গুরুদাস দাশগুপ্ত সিপিআইয়ের শীর্ষ নেতা, ভাগ্নী কাকলি ঘোষ দস্তিদার তৃণমূল নেত্রী। দাদা তথাগত রায় বিজেপি নেতা, ভাই সৌগত তৃণমূলের সাংসদ।

সব ক্ষেত্রেই অবশ্য রাজনৈতিক বিরোধ ব্যক্তিগত রেষারেষি হয়ে দাঁড়ায়নি। যেমন হয়েছে মুখোপাধ্যায় পরিবারে। বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ৬ ফুট লম্বা প্রতিকৃতি নারায়ণবাবুর। জোড়হাতে স্বাগত জানাচ্ছেন অভ্যাগতদের। এ দিন দুই ভাই দুপুরে একই সঙ্গে খাওয়ার জন্য বাড়ি ঢুকলেন ঠিকই। কিন্তু ছোট ভাই একতলায়, আর বড় ভাই দোতলায় উঠে গেলেন। রাজনীতি এমন করেই দূরে ঠেলে দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE