রোজ ভ্যালি অফিস থেকে নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যাচ্ছেন সিবিআই অফিসারেরা। বুধবার আগরতলায় বাপি রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
ত্রিপুরায় সারদারও আগে রয়েছে রোজ ভ্যালি। বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কাজকর্ম সামনে আসার পরে পরেই, একদম প্রথম দিকে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লেখে ত্রিপুরার বাম সরকার। অবশেষে সেই আবেদনের ভিত্তিতেই ত্রিপুরা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজ একযোগে রোজ ভ্যালির বিভিন্ন দফতরে, কর্তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালাল সিবিআই। সিবিআইয়ের এক সূত্রের বক্তব্য, ত্রিপুরায় রোজ ভ্যালিই সব থেকে বেশি টাকা তুলেছিল। এ ছাড়াও ত্রিপুরায় তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণেও তারা সারদা গোষ্ঠীর থেকে অনেক এগিয়ে ছিল।
সিবিআই সূত্রের খবর, রোজ ভ্যালির দুই ডিরেক্টর অনিরুদ্ধ গুপ্ত ও সন্তোষ ভৌমিকের বাড়িতে সকালেই পৌঁছে যায় তদন্তকারী দল। তল্লাশি চালায় কয়েক ঘণ্টা। একই সময়ে সংস্থার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত চম্পক নগরের নারায়ণ দাস, শেখর কর, রামলাল গোস্বামী, চন্দন দেবনাথকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারীরা। কলকাতা থেকে তলব করা হয়েছে সংস্থার অন্যতম কর্তা অশোক সাহাকেও। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নথিও আটক করেছে তারা। সিবিআই সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, রাজ্যের এক বাম মন্ত্রী ও চার বিধায়ককে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। যদিও এ ব্যাপারে সরকার বা বিধানসভা সূত্রে সমর্থন মেলেনি।
আগরতলা, ধর্মনগর, উদয়পুর, বিশালগড়, জিরানিয়া-সহ ত্রিপুরার সাতটি এলাকায় রোজ ভ্যালির অফিসেও একযোগে সিবিআই তদন্তকারী দলের সদস্যরা তল্লাশি শুরু করে। এখন দফায় দফায় চলছে জেরা। দুপুরে সিবিআইয়ের পদস্থ আধিকারিক এম তরঙ্গ বলেন, ‘‘আজ সকাল থেকেই আগরতলায় রোজভ্যালির সদর দফতরে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এখনও চলছে। সিবিআইয়ের ২০ জনের একটি তদন্তকারী দল কলকাতা, গুয়াহাটি ও শিলং থেকে পৌঁছেছে আগরতলায়।’’
আরও কয়েক দিন তল্লাশি চলতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। তবে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল যে আজ ত্রিপুরা জুড়ে রোজ ভ্যালির বিভিন্ন অফিসে, বাড়িতে হানা দেবে তা তারা গত কালই রাজ্যকে জানিয়েছিল। তদন্তকারী দলের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্যও চাওয়া হয়। সেই মতো সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করে। বিশাল টিএসআর ও পুলিশ বাহিনী সকাল থেকেই রোজ ভ্যালির সদর দফতর ঘিরে রাখে। যদিও বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায়ের এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জানান, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’
রোজ ভ্যালির বিভিন্ন দফতরে সিবিআই হানার খবর চাউর হতেই বহু আমানতকারী সংস্থার সদর দফতরের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সন্ধ্যে পর্যন্ত কয়েকশো আমানতকারী সদর দফতরের সামনে জড়ো হয়ে যান। এমনই এক আমানতকারী চাঁদ মিঁয়া এসেছিলেন রানিরবাজার থেকে। তাঁর কথায়, ‘‘চার বছরে টাকা দ্বিগুণ করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সংস্থাটি। আমরা, আত্মীয়স্বজন মিলে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম।” তাঁর দাবি, ‘‘সাত-আট মাস আগেই আমানতের মেয়াদ শেষ হয়। সংস্থা থেকে টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলেও এখনও এক পয়সাও ফেরত পাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy