Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভিআইপি থেকে রাতারাতি মামুলি বিমানযাত্রী, নেপথ্যে কি নবান্নই

মাঝে স্রেফ চব্বিশ ঘণ্টা। তার মধ্যে পরিস্থিতিটা বেমালুম বদলে গেল। ভিআইপি থেকে তিনি হয়ে গেলেন মামুলি এক বিমানযাত্রী! তাঁর দুধসাদা স্করপিও, পুলিশের পাইলট কার সব পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরের চার নম্বর গেটের সামনে।

সাধারণ যাত্রীর মতোই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসছেন মুকুল রায়। ছবি: শৌভিক দে।

সাধারণ যাত্রীর মতোই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসছেন মুকুল রায়। ছবি: শৌভিক দে।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

মাঝে স্রেফ চব্বিশ ঘণ্টা। তার মধ্যে পরিস্থিতিটা বেমালুম বদলে গেল। ভিআইপি থেকে তিনি হয়ে গেলেন মামুলি এক বিমানযাত্রী!

তাঁর দুধসাদা স্করপিও, পুলিশের পাইলট কার সব পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরের চার নম্বর গেটের সামনে। কারণ খবর ছিল, দুপুরের দিল্লি ফ্লাইটে এমন এক জন ভিআইপি আসছেন, যাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখে পড়তে দেওয়া চলবে না। তাই তাঁকে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল ভবনের লাগোয়া ওই গেট দিয়ে বার করার তোড়জোড়। কিন্তু শেষমেশ তিনি আর পাঁচ জন সাধারণ যাত্রীর মতোই এক নম্বর গেট দিয়ে বেরোলেন। মিডিয়ার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে অস্বস্তিও পোহালেন দস্তুরমতো।

তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। মঙ্গলবার যিনি সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ডেলোর বৈঠকে নিজের উপস্থিতির কথা স্বীকার করে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে ঘোরতর বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছেন। দিল্লিতে ওই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পরে বুধবার দুপুরে তিনি কলকাতায় ফিরেছেন। এবং বিমানবন্দরে তাঁর জন্য আয়োজিত ভিআইপি নিরাপত্তা বলয়কে শেষ মুহূর্তে যে ভাবে ঠুঁটো করে রাখা হল, তা দেখে অনেকেরই ভুরু কুঁচকেছে। খাস নবান্নের নির্দেশেই এমনটা হয়েছে বলে পুলিশ-সূত্রে ইঙ্গিতও মিলেছে।

মুকুলবাবু এ দিন কলকাতায় নামলে ফের যাতে তাঁকে মিডিয়ার মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য বিমানবন্দরে তৎপরতার অন্ত ছিল না। প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে চার নম্বর গেট দিয়ে ‘নিরুপদ্রবে’ বার করে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। মুকুলবাবুর গাড়ি, পুলিশের পাইলট জিপ সব চার নম্বরে মোতায়েন হয়ে যায়। মুকুল-মোলাকাতের আশায় সকাল থেকে বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের যে সব প্রতিনিধি, ব্যপার-স্যাপার দেখে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁরা ধরেই নেন, তৃণমূলের ওই রাজ্যসভা সাংসদের সঙ্গে বিমানবন্দরে অন্তত কথা বলা যাবে না। তাঁরা এক নম্বর গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

কিন্তু ওঁদের সামনে সুযোগ যেন চলে এল ছপ্পর ফুঁড়ে!

বেলা সওয়া বারোটায় জেট এয়াওয়েজের দিল্লি-কলকাতা উড়ান কলকাতার মাটি ছুঁল। নির্দিষ্ট সময়ে। বিমানের প্রথম সারির জানলার ধারে বসে থাকা ব্যক্তিটি অনেকটা পথ হেঁটে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে এক নম্বর গেট দিয়েই বেরিয়ে এলেন। এবং বেরিয়ে সামনেই দেখলেন সংবাদমাধ্যমকে। মুকুল রায়কে ঘিরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। তাঁর সাদা গাড়ি, পুলিশের পাইলট জিপ ইত্যাদি তখন চার নম্বরের সামনেই দাঁড়িয়ে!

চারের বদলে এক হয়ে গেল কী করে?

বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: মুকুলবাবুকে যখন চার নম্বর গেট দিয়ে বার করার প্রস্তুতি পাকা, তখনই বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তার ফোন আসে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা-অফিসারদের কাছে। বলা হয়, ‘ভিআইপি’র মতো চার নম্বর গেট দিয়ে মুকুলবাবু বেরোবেন না। তাঁকে আম-যাত্রীদের সঙ্গে এক নম্বর দিয়েই বেরোতে হবে। বিমানবন্দর-সূত্রের দাবি, এটা খোদ বিধাননগর পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারের নির্দেশ বলে ফোনে জানানো হয়েছিল।

মুকুলবাবু যখন বিমান থেকে নেমে এরোব্রিজ দিয়ে হেঁটে টার্মিনালে ঢুকছেন, পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কথা তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এক নম্বরের বাইরে যে ‘মিডিয়া’ আছে, সে কথাও তাঁকে জানিয়ে দেন এক পুলিশ অফিসার। টার্মিনালের বাইরে বেরিয়ে মিডিয়া পরিবৃত মুকুল বলেন, ‘‘কোনও প্রশ্নের উত্তর দেব না।’’ পরে অবশ্য কয়েকটি কথা বলে গাড়িতে উঠতে যান। কোথায় গাড়ি?

এক পুলিশ-কর্তা তাঁকে জানান, গাড়ি রয়েছে চার নম্বরে। পাইলট জিপে ফোন গিয়েছে।

নতুন টার্মিনালের সামনে হেঁটে-হেঁটে গাড়ি খুঁজতে থাকেন মুকুল রায়। সেই সুযোগে পরের পর প্রশ্ন ধেয়ে আসতে থাকে। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যান তিনি। কিছু প্রশ্নের জবাব দেননি। কিছু প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, “কিছু বলব না।” কিছু প্রশ্ন শুনে বলেছেন, “যা বলার তো বলেই দিয়েছি!” গলাটা একটু যেন কাঁপা কাঁপা শোনাচ্ছিল। মুকুলবাবুর গাড়ি বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে এক পুলিশকর্মীর বিস্মিত স্বগতোক্তি, “সময়ের সঙ্গে অবস্থা কেমন বদলে যায়!”

এ দিনের বিমানবন্দরপর্ব সম্পর্কে সরকারি ভাবে প্রশাসনের কোনও কর্তা মুখ খোলেননি। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ফোন ধরেননি, এসএমএসের জবাবও দেননি। যদিও কমিশনারেটের এক কর্তা বলেছেন, “মুকুলবাবুর বিমানবন্দর থেকে নির্গমনের ব্যাপারে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলানো হয়েছে নবান্নেরই নির্দেশে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam mukul roy dumdum airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE