দু’বছর আগে বেলুড় মঠের সংগ্রহশালা থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল মা সারদার জপের মালা এবং তাঁর ব্যবহার করা আরও কিছু জিনিসপত্র। সেগুলি পুনরুদ্ধার করতে এ বার বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দকে নিজে এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কাল দিল্লিতে স্বামী সুহিতানন্দের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মোদী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মঠ ও মিশনের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহারাজ স্বামী শুভকরানন্দও। মা সারদার ব্যবহৃত সামগ্রী উদ্ধারের পাশাপাশি মেরঠে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য বাংলোটিকে জবরদখলের হাত থেকে উদ্ধার করে দেওয়ার জন্যও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে। মোদী তাতেও ইতিবাচক সাড়া দেন।
২০১৩ সালের জুলাই মাসে বেলুড় মঠের মিউজিয়াম থেকে মা সারদার একাধিক দ্রব্য চুরি হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে হইচই শুরু হয়। তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। দেখা যায়, অপরাধের জাল ছড়িয়ে রয়েছে সুদূর তাইল্যান্ডে। সেখানকার এক বড় ব্যবসায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে অসৎ উপায়ে ধর্মগুরুদের নানা দুর্লভ উপকরণ হাতিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করছিল বলে অভিযোগ। সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু তার পরেও অপহৃত সামগ্রী পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কাল বৈঠকে গোটা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শুনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বৈদেশিক অপরাধের দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দাবিভাগের সাহায্য নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তিনি গড়বেন। বিষয়টি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে আবদ্ধ নেই, তাই কার্যোদ্ধারের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান মোদী।
মেরঠের বাংলোটি নিয়েও কথা হয়েছে মোদীর সঙ্গে। ১৮৯০ সালে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ছ’জন গুরুভাইকে নিয়ে ওই বাংলোতে ৪০ দিন ছিলেন। পরে লন্ডন থেকে স্বামী অখণ্ডানন্দকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন, এই বাংলোটিতে রামকৃষ্ণ মিশনের একটি সেন্টার করার ইচ্ছা তাঁর রয়েছে। প্রয়োজনে সেই কাজে কিছু টাকা পাঠাবেন বলেও স্বামীজি ওই চিঠিতে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবৎকালে সেই স্বপ্ন পূরণ করা যায়নি। আপাতত বাংলো সংলগ্ন জমিটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আওতায় রয়েছে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও গোটা বিষয়টি মঠের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জমিটি ছেড়ে দিতেও রাজি ছিল। কিন্তু শেষ অবধি জট এখনও কাটেনি।
প্রধানমন্ত্রী স্বামী সুহিতানন্দের কাছে জানতে চান, এই বাংলোটি নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? তাঁকে জানানো হয়, বাংলোটিকে কেন্দ্র করে একটি পলিক্লিনিক, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র এবং বিবেকানন্দের বাণী ও জীবন বিষয়ক শিক্ষাক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে মিশনের। এ ব্যাপারে জট ছাড়ানোর জন্য মোদী উদ্যোগী হবেন বলে কথা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন, দীর্ঘদিন তাঁর বেলুড় মঠে যাওয়া হয়নি। শীঘ্রই গিয়ে স্বামী আত্মস্থানন্দের সঙ্গে সেখানে একবার দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy