Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাষি সিপিএমের, ধান ফেরাল কিসান মান্ডি

শাসক দলের বিধায়কের নিষেধ। তাই কিসান মান্ডিতে আসা সিপিএম কর্মীর ধান না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হল বলে অভিযোগ।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

শাসক দলের বিধায়কের নিষেধ। তাই কিসান মান্ডিতে আসা সিপিএম কর্মীর ধান না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হল বলে অভিযোগ।

নদিয়া জেলা খাদ্য নিয়ামকের কাছে লিখিত ভাবে এই অভিযোগ জানিয়েছেন হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য সুশীল ঘোষ। অভিযোগের তির কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের দিকে। যদিও তিনি তা স্বীকার করেননি। কিন্তু চাপে পড়ে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন।

শুধু হাঁসখালি নয়, জেলার বহু জায়গাতেই তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ধান বিক্রিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা কৃষকসভার জেলা সম্পাদক মেঘলাল শেখের বক্তব্য, ‘‘বেছে-বেছে আমাদের লোকজনকে হয়রান করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বাদ দিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়।’’

রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা আইন বলবৎ করার জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ টন ধান সংগ্রহ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৩ লক্ষ টন সংগ্রহ হয়েছে বলে খাদ্য দফতর সূত্রের খবর। অথচ খরিফ মরসুমের শেষ লগ্নে, জানুয়ারিতেই সবচেয়ে বেশি ধান সংগ্রহ করা সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে দলবাজি যে আখেরে তৃণমূল সরকারকেই বিপাকে ফেলবে তাতে সন্দেহ নেই।

শুধু নদিয়াতেই সিপিএম প্রভাবিত কৃষকসভার সদস্যসংখ্যা খাতায়-কলমে পাঁচ লক্ষ ৮০ হাজার, রাজ্যে প্রায় এক কোটি বলে বাম নেতাদের দাবি। এর অর্ধেকও যদি সত্যি হয়, তা হলে রং বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কোথাও কোনও দলবাজি হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আছে, দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছ থেকে ধান কিনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে।’’

হাঁসখালির কাগমারির চাষি সুশীল বিশ্বাসের অভিযোগ, খাদ্য দফতরের ‘পারচেজ অফিসার’ পঙ্কজ মণ্ডলের নির্দেশ মতো গত ১৮ জানুয়ারি তিনি ও তাঁর ভাইপো সমর ঘোষ ৩৫ কুইন্ট্যাল ধান নিয়ে ব্লক অফিসের পাশে কিসান মান্ডিতে গিয়েছিলেন। সুশীলবাবুর অভিযোগ, ‘‘পারচেজ ম্যানেজারই কিন্তু বলে দেন, আমাদের ধান নিতে পারবেন না। বিধায়কের বারণ আছে।’’

ওই সময়ে ব্লক অফিসে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ শশাঙ্ক বিশ্বাস। সুশীলবাবুর দাবি, সব শুনে তিনি কিসান মান্ডিতে ফোন করে তাঁদের ধান নিতে অনুরোধ করেন। পরে বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকেও ফোন করেন। তাতেও লাভ হয়নি। মরিয়া হয়ে তিনি নিজেই বিধায়ককে ফোন করেন।

সুশীলবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিধায়ক জানতে চান, কে আমায় ধান আনতে বলেছে? পঙ্কজবাবুর কথা বলতেই উনি বলেন, ‘মান্ডিতে ধান রেখে যান। পরে নেওয়া যায় কি না দেখব।’ রবি নামে এক তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে দেখাও করতে বলেন। কিন্তু মান্ডিতে গেলে রবি জানান, ধান নেওয়ার কোনও নির্দেশ বিধায়ক তাঁকে দেননি। এর পরে আর বিধায়কও ফোন ধরেননি।’’ সুশীলবাবুদের দাবি, কিসান মান্ডিতে ধান রেখে গেলে তা যদি চুরি বা লুঠ হয়ে যায় তার দায়িত্ব তাঁরা নিতে পারবেন না বলে খাদ্য দফতরের অফিসারেরা তাঁদের জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা ফের রাহা খরচ দিয়ে ধান ফিরিয়ে নিয়ে যান।

কী বলছেন তৃণমূল নেতারা?

সত্যজিৎবাবুর দাবি, ‘‘ওঁদের আমি ফোনে বলেছিলাম, ধান নিতেই হবে। তেমন হলে উনি মান্ডিতে ধান রেখে যেতে পারেন। সিভিক ভলান্টিয়ারেরা পাহারা দেবে।’’ পরক্ষণেই তিনি বলেন, ‘‘পরে অবশ্য খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওঁদের ধান এত নোংরা ছিল যে সেটা নেওয়ার মতো ছিল না।’’ একই সুরে পারচেজ অফিসার পঙ্কজ মণ্ডলও দাবি করেন, ‘‘আমরা ওঁদের ধান নেব‌ না বলিনি। কিন্তু ধানে প্রচণ্ড নোংরা, মাটি আর ইটের টুকরো ছিল। তাই বলেছিলাম, ধান ঝেড়ে নিয়ে আসতে। উনি সেটা না করে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’

খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ শশাঙ্কবাবু শুনে বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘‘সব শুনে আমি পারচেজ অফিসারকে ধান নিয়ে নিতে বলেছিলাম। তার পরেও কেন তা নিল না, বুঝতে পারছি না। সত্যজিৎ আমায় বলেছে, সে এ সবের কিছুই জানে না।’’ জেলাশাসক বিজয় ভারতী জেলার খাদ্য নিয়ামকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন। খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী আবার রানাঘাট মহকুমা খাদ্য নিয়ামককে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কী বলছেন খাদ্যমন্ত্রী? তাঁর বয়ানটা কারও সঙ্গেই মিলছে না। খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘আমাদের অফিসারেরা জানিয়েছেন, নদিয়ায় কৃষক প্রতি সর্বোচ্চ ৩০ কুইন্ট্যাল ধান কেনার কথা। কিন্তু ওই চাষি ৬০-৭০ কুইন্ট্যাল ধান এনেছিলেন। তাই বিধায়ক ওঁকে অর্ধেক ধান ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন।’’

এর পরে আর তদন্তে কী-ই বা পাওয়া যেতে পারে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE