Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পাত-ফোড়ন

সেলুলার জেল দেখে বিস্তর খেয়ে স্বাধীন বাঙালির ছুটি কাটিয়ে ফেরা। পরাধীন ভারতের বিপ্লবীদের কী খাবার জুটত সেই কালাপানির জেলখানায়? উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যুগান্তর দলের কর্মী, বোমার মামলায় ধরা পড়ে শেষে চালান হলেন আন্দামানে।

বিশ্বজিৎ রায়
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৬
Share: Save:

সেলুলার জেল দেখে বিস্তর খেয়ে স্বাধীন বাঙালির ছুটি কাটিয়ে ফেরা। পরাধীন ভারতের বিপ্লবীদের কী খাবার জুটত সেই কালাপানির জেলখানায়? উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যুগান্তর দলের কর্মী, বোমার মামলায় ধরা পড়ে শেষে চালান হলেন আন্দামানে। কলকাতার জেলে বরাদ্দ লপসি – ফেন মেশানো হলে সাদা, ডাল মেশানো হলে পীত, আর গুড় মেশানো হলে লাল। কোনও দিন এক বাটি রেঙুন চালের ভাত, খানিকটা অড়হর ডাল, পাতা ও ডাঁটা সেদ্ধ, সঙ্গে তেঁতুল গোলা। তবে বিপ্লবীরা টের পেলেন ‘পয়সা থাকিলে’ সেকালেও ‘জেলখানার মধ্যে বসিয়াই সব পাওয়া যায়।’ দক্ষিণা অনুযায়ী ভাতের ভিতর কই মাছ, রুটির ভেতর আলু-পেঁয়াজের তরকারি, পাহারাওয়ালার পাগড়ির ভেতর পান-চুরুট । আন্দামানে সে নবাবি নেই। কথায় কথায় হাতে পায়ে বেড়ি আর পেনাল ডায়েট ‘কঞ্জি’। কঞ্জি মানে খানিকটা খুদ ফুটিয়ে দেওয়া। বেশ কয়েক বছর থাকার পর ধর্মঘট ইত্যাদি করে বারীন্দ্র, হেমচন্দ্র, উপেন্দ্রনাথ জেলে খানিকটা সুখের মুখ দেখলেন। কচুপাতা সেদ্ধ আর তাদের খেতে হবে না, সকাল দশটা থেকে বারোটার মধ্যে নিজেদের রান্না তাঁরা নিজেরা করবেন। হেমচন্দ্র নাকি খানিক রাঁধতে পারতেন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী গম্ভীর ভাবে রান্না শুরু হল — মোচার ঘণ্ট । পেঁয়াজ ফোড়ন দিয়ে কালো রঙের যে পদার্থটি শেষ অবধি পাতে পড়ল তা একেবারে ‘মোচার কাবাব’। এক দিন ঠিক হল শুক্তো করা হবে। হেমচন্দ্রের অনবদ্য প্রণালী, ‘তরকারির মধ্যে এক আউন্স কুইনাইন মিক্‌চার ফেলিয়া দিলেই তাহা শুক্তো হইয়া যায়।’ উপেন্দ্রনাথের ‘নির্বাসিতের আত্মকথা’ পড়লে মনে হয় নির্জলা-কৌতুকই অত্যাচার সইবার ‘রেসিপি’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE