Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

স্মরণসভা হয়ে উঠল বিরোধী জোটের মঞ্চ

বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। কংগ্রেস-বামেদের জোট হওয়া নিয়ে চলছে আলোচনা। তা আরও জোরদার করার চেষ্টা করলেন শিলিগুড়ির বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। সোমবার একই মঞ্চ থেকে একযোগে রাজ্য থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে উৎখাত করার ডাক দিলেন বাম-কংগ্রেস নেতারা।

এ বি বর্ধনের স্মরণসভায় মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

এ বি বর্ধনের স্মরণসভায় মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০২
Share: Save:

বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। কংগ্রেস-বামেদের জোট হওয়া নিয়ে চলছে আলোচনা। তা আরও জোরদার করার চেষ্টা করলেন শিলিগুড়ির বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। সোমবার একই মঞ্চ থেকে একযোগে রাজ্য থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে উৎখাত করার ডাক দিলেন বাম-কংগ্রেস নেতারা।

শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনী হল ঘরে এ দিন প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা অর্ধেন্দুভূষণ বর্ধনের স্মরণসভার আয়োজন করে দার্জিলিং জেলা সিপিআই। সেখানে যোগ দিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা মেয়র অশোক ভট্টাচার্য-সহ একাধিক বাম নেতারা তো বটেই, দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার ওই জোটবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দেন। কেন্দ্রের অসহিষ্ণুতার প্রশ্ন আসলেও দুই পক্ষের বক্তব্যে বহু বার তৃণমূল সরকারের পরিবর্তনের কথা উঠে আসে। এমনকি, সিপিআই-র রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পান্ডাও সংগ্রামী মানুষের জোট হলে তা প্রয়াত নেতার অন্যতম ইচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়ার সামিল হবে বলেও উল্লেখ করেন।

সভায় মেয়র তথা সিপিএম নেতা অশোকবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই শুরু হয়েছে। মানুষের ডাকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজ্যে যা চলছে, তা ভাবা যায় না। এর পরিবর্তনের জন্য জোটবদ্ধ ভাবেই আমাদের এগোতে হবে।’’ একধাপ এগিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘কংগ্রেস এক সময় সরকারি ভাবে জরুরি অবস্থা জারি করে ফল ভুগেছে। কিন্তু এখন রাজ্যে অলিখিত জরুরি অবস্থা চলছে। মানুষের মত প্রকাশের মতো অতি সাধারণ অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রকামীদের একজোট হয়ে এগিয়ে আসতেই হবে।’’

এদিন প্রয়াত সিপিআই-র সাধারণ সম্পাদকের ঘন্টা দু’য়েকের স্মরণসভা আদতে অনেকটাই ‘জোটে’র মঞ্চ হয়ে ওঠে। আরএসপি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের মত দলগুলির নেতারা কংগ্রেসের উদারীকরণ নীতি নিয়ে সভায় প্রশ্ন তুললেও বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যের কথাই বলেছেন। বামঐক্যের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিরোধী এবং গণতন্ত্রকামী সংগঠন, দলগুলির ভূমিকা জরুরি বলে আরএসপি জেলা সম্পাদক বিনয় চক্রবর্তী বা সিপিআই জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী মনে করে দিয়েছেন।

সভার একেবারে শেষে বক্তব্য রাখার সময় শঙ্করবাবু বলেছেন, ‘‘আমরা এক বিরাট কমিউনিস্ট নেতার স্মরণে একসঙ্গে বসেছি। তাই হয়ত, অনেকেই বলবেন জোট তো হয়েই গিয়েছে। এখন শুধু দিনের অপেক্ষা। এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। আসলে রাজ্যে যা চলছে, তাতে সবার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। মানুষ এর সুবিচার চাইছে।’’ আবার সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘মানুষের জোটবদ্ধ হওয়ার একটাই সঠিক সময়। সেই কাজই সর্বত্র চলছে। বামপন্থীরা এতে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।’’

গত শনিবার, রবিবার শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় সভা করেছেন দুই প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা। তাঁরাও খোলাখুলিভাবে বাম-কংগ্রেস ‘জোটে’র পক্ষেই সওয়াল করেছেন। সার্বিক জোট না সম্ভব হলেও আসন রফা করে ভোটের ময়দানে দুইপক্ষ নামতে পারে বলেও প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। খুব দ্রুত বাম-কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব চূড়ান্ত ঘোষণা করতে পারেন বলেও কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপবাবু জানিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় কলকাতা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষ একজোট হচ্ছে, প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে। তাই এই অবস্থায় বামেদের সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলে কংগ্রেস নেতৃত্ব যে আসবেন, তা সভার শুরুর সিপিআই নেতারা জানিয়ে দেন।

তাঁর জানান, গত পুরসভার নির্বাচন, মহকুমা পরিষদ নিবার্চনে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট আলাদা আলাদা ভাবে লড়লেও ভোট লুঠ রুখতে একজোট রক্ষার ডাক দিয়েছেন সিপিএম নেতা অশোকবাবু। যা অনেকটাই এই এলাকায় সফল হয়েছে। সিপিএম দুটি বোর্ডে ক্ষমতায় আসলেও কংগ্রেসও পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে সাধ্য মতো লড়াই করে অনেক আসনই দখল করেছে। সেখানে খোলাখুলি ভাবে আগামী ভোটে জোট বা আসন রফা হলে শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসনে শাসক দল কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে বাধ্য।

সভায় এদিন শঙ্করবাবু বামপন্থী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘ক্ষমতায় থেকে বা না থেকেও দেশের সর্বত্র বস্তি, শিল্প, কারখানায় সব সময় লাল পতাকা উড়তে দেখা যায়। সংখ্যায় কম হলেও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে কমিউনিস্টরা অগ্রণী। ওঁদের থেকে অনেক শেখার রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE