Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ জামিনের পরই হঠাৎ ‘ফিট’, বাড়ি গেলেন মদন

এত তাড়াতাড়ি মদন মিত্র হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন, তা শনিবার রাত পর্যন্ত ঘুণাক্ষরেও টের পাননি এসএসকেএম-এ নিযুক্ত পুলিশ বাহিনী থেকে চিকিৎসকেরা।

হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে মদন মিত্র। রবিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে মদন মিত্র। রবিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৩৪
Share: Save:

এত তাড়াতাড়ি মদন মিত্র হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন, তা শনিবার রাত পর্যন্ত ঘুণাক্ষরেও টের পাননি এসএসকেএম-এ নিযুক্ত পুলিশ বাহিনী থেকে চিকিৎসকেরা।

এসএসকেএম সূত্রে খবর, শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত খবর ছিল মদনবাবু বুধবারের আগে ছাড়া পাবেন না। সেই মতো তৈরি ছিল হাসপাতালে নিযুক্ত পুলিশ বাহিনী। রবিবার ভোরের দিকে এক পুলিশ আধিকারিককে ফোনে জানানো হয়, এ দিনই মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক হবে। বোর্ডের বৈঠক ডাকতে হাসপাতালের তরফে আট সদস্যের চিকিৎসকদের সকাল থেকেই মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে বলা হয়, সকাল ১১টার মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক শুরু হবে।

আট জনের মধ্যে এ দিন উডবার্নে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাত্র চার জন। নেতৃত্বে ছিলেন চিকিৎসক শিবময় দত্ত। নিধার্রিত সময়সীমা অনুযায়ী এ দিন সকাল ১১টায় বোর্ডের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলে প্রায় ৪০ মিনিট। বোর্ড বৈঠকের শেষে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে। কিন্তু, কতকগুলি শর্তসাপেক্ষে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রিলিজ অর্ডারে মদনবাবুকে বলা হয়েছে তাঁকে ছাড়া হলেও হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসার জন্য আসতে হবে। এ দিন হাসপাতালের তরফে বেলা ১২টা নাগাদ মদনবাবুর পরিবারের হাতে রিলিজ অর্ডার তুলে দেওয়া হয়।

মন্ত্রীর অনুগামীরা জানান, জ্যোতিষী মদনবাবুকে এ দিন বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ হাসপাতাল ছে়ড়ে যেতে বলেছিলেন। কারণ, ওটাই নাকি ছিল শুভ সময়। সেই মতো দুপুর ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ হাসপাতাল ছেড়ে উডবার্নের সিঁড়ি বেয়ে হেঁটে নেমে আসেন মদনবাবু। পরনে ছিল হলুদ পাঞ্জাবি ও সাদা পাজামা। দু’পাশে পরিবারের সদস্য-সহ অনুগামীদের ভিড়। অ্যাম্বুল্যান্সে ভবানীপুরের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় কোনও মন্তব্য করেননি মদনবাবু। কেবল হাতজো়ড় করে নমস্কার করেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় মদন মিত্রের অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে ও পিছনে ছিল কলকাতা পুলিশের এসকর্ট। এসকর্টের সামনে বাইক বাহিনীকেও দেখা গিয়েছে।

দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ নাগাদ বাড়ি পৌঁছে মদনবাবু বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত আমরাই ম্যাচ জিতলাম। সত্যের জয় হল। মানুষের জয় হল।’’ আপনার শরীর কেমন আছে? মন্ত্রী জানান, চিকিৎসকেরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা মেনে চলব। আপনি কবে মন্ত্রীত্বে ফিরছেন? মদনবাবুর উত্তর, “এ বিষয়ে এখনও বলার সময় আসেনি।”

এ দিন সকালে এসএসকেএম-এ গিয়ে দেখা গেল, উডবার্নের সামনে মিডিয়ার গুটিকয়েক প্রতিনিধি। মদনবাবুর জামিন পাওয়া নিয়ে শনিবার রাতে কামারহাটি উৎসবের মেজাজে থাকলেও এ দিন উডবার্নের সামনে তার উল্টো ছবিটাই দেখা গিয়েছে। ছিল না কোনও ভিড়। তাঁর দুই ছেলেকে তিন বার ওঠানামা করতে দেখা গিয়েছে। সকালে মদনবাবুকে দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায়। মদনবাবুকে দেখা করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর প্রতিক্রয়া ছিল, ‘‘দীর্ঘদিন পর জামিন পাওয়ার পর তাঁর চোখেমুখে প্রশস্তির ছাপ ছিল।’’

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

জামিন না পেলে মদন কি এসএসকেএম ছাড়তেন?

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে এ দিন মদনবাবুকে শুভেচ্ছা দিতে আসেন কামারহাটি পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ গণ। তাঁর সঙ্গে ঢোকে এই প্রতিবেদকও। উডবার্নের দোতলার ২১ নম্বর কেবিনের সামনে তখন নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনী। দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের পুজোর প্রসাদ নিতেই বিশ্বজিৎবাবুর দিকে হাত ব়াড়ালেন মদনবাবু। সেই সময় তাঁর পরনে ছিল সাদা লুঙ্গি ও নেভি-ব্লু রঙের গেঞ্জি। চকচকে গাল দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, সবে দাড়ি কেটে উঠেছেন। লুঙ্গিটাও সে রকম গোটানো ছিল। সাংবাদিক পরিচয় শুনেই নিরাপত্তারক্ষীদের গভীর আকুতি, ‘দাদা দয়া করে বেরিয়ে যান।’ ঘড়িতে তখন পৌনে ১২টা।

এর মধ্যেই হঠাৎ করে বিশাল পুলিশ বাহিনীকে উডবার্নে ঢুকতে দেখা গেল। ঘিরে ফেলা হল গেট। ভিআইপি মদন মিত্রের জন্য তখন অন্য রোগীর পরিজনদের নাকানিচোবানি অবস্থা। উডবার্নে ঢুকতে গেলে পুলিশের হাজারো জি়জ্ঞাসা। বেলা ১২টা নাগাদ মদন মিত্রের নামাঙ্কিত ও ছবি সম্বলিত একটি অ্যাম্বুল্যান্স উডবানের্র মেন গেটের সামনে দাঁড়াল। ভবানীপুর থানার পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘রেডি হোন, মদনবাবু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ভবানীপুরের উদ্দেশে যাবেন।’’

১১ ফেব্রুয়ারি থেকে একটানা এসএসকেএমের উডবার্নে চিকিৎসাধীন মদন মিত্র। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন, সকালে এই খবর পেয়ে মদনবাবুর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রত্যেক দিন তিনটি শিফটে কেবল মদনবাবুর জন্য ১৫ জন করে পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিল।’’ পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, কেবল শাসক দলের হেভিওয়েট মন্ত্রী হওয়ায় টানা ন’মাস মদনবাবুর জন্য কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে নিত্যদিনই নাজেহাল অবস্থা পুলিশের। এই পরিস্থিতিতে মদনবাবুর মতো বন্দির জন্য প্রতিদিন আলাদা ব্যবস্থার মানে পুলিশের অন্য কাজ ব্যাহত হওয়া। সে দিক থেকে মদনবাবুর জামিন পেয়ে খুশি পুলিসকর্মীরা। অনেকে জানাচ্ছেন, কোনও কাজ না থাকায় শুধু হাসপাতালে বসে দিন কাটাতে হত। একদম ভাল লাগত না। এ দিন উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে মদন মিত্রের জামিন পাওয়া নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, এটা আদালতের বিষয়। এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করব না।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...

একের পর এক আর্জি খারিজের পর হঠাত্ জামিন মদনের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE