কর্মব্যস্ত: কলাভবনের অনুষ্ঠান ও নন্দন মেলার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। শনিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
কলাভবনের শতবর্ষের অনুষ্ঠান এবং নন্দন মেলা এ বছর হবে একসঙ্গে। আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে অনুষ্ঠান। চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই শান্তিনিকেতনে আসতে শুরু করেছেন কলাভবনের প্রাক্তন পড়ুয়ারা। কলাভবনে সাজো সাজো রব। এক দিকে ব্ল্যাক হাউসের সামনে চলছে শতবর্ষের মঞ্চ তৈরির কাজ, অন্য দিকে পড়ুয়ারা ব্যস্ত হাতেকলমে জিনিস তৈরিতে।
এ বছরই কলাভবনের শতবর্ষ। বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, ১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব। ১৯১৯ সালের ৩ জুলাই থেকে কলাভবন নাম নিয়ে সেখানেই শুরু হয় সঙ্গীত ও কলার চর্চা। চিঠি, ছবিতে তার প্রমাণ মেলে। কোনও চিঠিতে উল্লেখ আছে, ‘এখানে ছবি ও গান খুব চলিতেছে’। কোনও ছবিতে দেখা যায়, একই ছাদের নীচে দুটি বিষয়েরই চর্চা হচ্ছে। এক পাশে কেউ সেতার বাজাচ্ছেন, অন্য পাশে আর এক জন ছবি আঁকতে ব্যস্ত। এ ভাবেই কলা ও সঙ্গীত বরাবর সমান তালে চলেছে শান্তিনিকেতনে। সে কারণে কলাভবনের শতবর্ষ মানে সঙ্গীতভবনেরও শতবর্ষ। তাই কলাভবনের এই উদ্যোগে সামিল হবে সঙ্গীতভবনও। অবশ্য ইতিমধ্যেই সঙ্গীতভবন শতবর্ষের কিছু অনুষ্ঠান করেছে। এ বার কলাভবনের এক টানা অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে।
কলাভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৯ নভেম্বর বৈতালিকের মধ্যে দিয়ে কলাভবনের শতবর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হবে। মোমবাতির আলো, হাতের কাজ, ট্যাবলো, ভিজ্যুয়াল— সবই থাকবে শোভাযাত্রায়। ৩০ নভেম্বর আসার কথা প্রাক্তনী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁকে কলাভবনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হবে। চল্লিশের দশকে যাঁরা কলাভবনের ছাত্র ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এখনও বেঁচে রয়েছেন তিন জন। এ বিষয়ে, কলাভবনের ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক শিশির সাহানা বলেন, ‘‘জগদীশ মিত্তাল, এ রামচন্দ্রণ এবং রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এই তিন জনের মধ্যে রামানন্দবাবু আসবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়াও অনেক বিখ্যাত প্রাক্তনী আসছেন সে দিন।’’ ওই দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
পরের দু’দিন অর্থাৎ ১ ডিসেম্বর এবং ২ ডিসেম্বর চিরাচরিত ভাবেই নন্দনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ১ ডিসেম্বর এই মেলার সূচনা হয়। মাঝে দু’বছর বন্ধ ছিল এই মেলা।
একবার বন্যার জন্য, আর এক বার নকশাল আন্দোলনের কারণে। তা বাদে প্রতি বছরই কলাভবন চত্বরে নন্দনমেলা হয়ে আসছে। ১৯৭৩ সালের আগে কলাভবনের নিজস্ব কোনও তহবিল ছিল না। এক বার এক পড়ুয়ার পা কেটে যায়। চিকিৎসার খরচ জোগাতে সমস্যা হয়েছিল। তখনই ঠিক হয়, সারা বছর পড়ুয়ারা যা বানাবেন তা দিয়ে একটি মেলার আয়োজন করা হোক। সেখান থেকে যা আয় হবে, সেটি ভবনের ফান্ডে জমা হবে। তৈরি হয় ‘কলাভবন স্টুডেন্টস এইড অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ফান্ড’। নন্দনমেলায় জিনিস বিক্রি করে যে আয় হয়, তার সবটাই ফান্ডে জমা থাকে। পড়ুয়াদের প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে এই টাকা ব্যবহার করা হয়।
কলাভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবনের প্রাক্তনী দিনকর কৌশিকের এ বছর জন্ম শতবার্ষিকী। তাই তাঁর কাজের একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও কলাভবনের প্রথম অধ্যক্ষ অসিত হালদারের আঁকা ৩২টি তৈলচিত্র এসে পৌঁছেছে কলাভবনে। তাঁর ছেলে আদেশ হালদার নেদারল্যান্ডস থেকে সেগুলি পাঠিয়েছেন। কলাভবনের অধ্যক্ষ গৌতম দাসের কথায়, ‘‘এই ৩২টি চিত্র আমাদের কাছে সম্পদ।’’ তিনি আরও জানান, শতবর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠান শুধু ক্যাম্পাসের মধ্যেই গণ্ডীবদ্ধ থাকবে না। বিভিন্ন প্রদর্শনী, আলোচনাসভা, কর্মশালার আয়োজন করা হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শান্তিনিকেতনে আর্ট ফেয়ার করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। নয়াদিল্লির ললিত কলা অ্যাকাডেমি এই মেলায় সহযোগিতা করবে।
এ ছাড়াও ৩ ডিসেম্বর প্রতি বছরের মতোই নন্দলাল বসুর জন্মদিন পালিত হবে। সব মিলিয়ে কলাভবনে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রাক্তন, বর্তমান মিলে একজোটে কাজ করছেন সকলে। তাঁরা বললেন, ‘‘নন্দনমেলা আমাদের কাছে যে কোনও উৎসবের থেকে বড়ো। এর সঙ্গেই শতবর্ষের অনুষ্ঠানও যুক্ত হয়েছে। তাতে আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy