Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

রাতে ঘুম নেই, আতঙ্কের দৃষ্টি কেবল নদীর দিকেই

তিস্তা পাড়ের দুই পঞ্চায়েতের প্রায় ১৪০০ পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। বুধবার ভোর থেকে তিস্তা পাড়ের বারোপেটিয়া এবং মান্তাদাড়ি পঞ্চায়েতের গ্রামগুলিতে নদীর জল ঢুকতে শুরু করে। জলের নীচে চলে যায় রাস্তা, চাষের জমি-সহ একাধিক গ্রাম।

জলে ভেসেছি বসতি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপেটিয়া এলাকায় সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জলে ভেসেছি বসতি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারোপেটিয়া এলাকায় সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

সব্যসাচী ঘোষ ও সন্দীপ পাল
মালবাজার ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৫
Share: Save:

তিস্তা পাড়ের দুই পঞ্চায়েতের প্রায় ১৪০০ পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। বুধবার ভোর থেকে তিস্তা পাড়ের বারোপেটিয়া এবং মান্তাদাড়ি পঞ্চায়েতের গ্রামগুলিতে নদীর জল ঢুকতে শুরু করে। জলের নীচে চলে যায় রাস্তা, চাষের জমি-সহ একাধিক গ্রাম। বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে তুলনামূলক উঁচু জমিতে উঠে যেতে থাকেন গ্রামবাসীরা। সম্পত্তিহানির পরিমাণ কোটির অঙ্ক ছাড়াবে বলেই আশঙ্কা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, জলের তোড়ে তিস্তার ডান পাড়ে অবস্থিত এই দুই পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০টি পোল্ট্রি ফার্ম ভেসে গিয়েছে। মারা গিয়েছে মুরগি ছানাও। সবজির খেত যেমন জলের তলায়, তেমনই বাসিন্দাদের অন্যতম জীবিকা মাছচাষের পুকুরেও নদীর জল ঢুকেছে। চাষের মাছ বাইরে বেরিয়ে লোকসানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। জল বাড়তে থাকায় বাধ্য হয়েই তিস্তার জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। ৩৮টি গেট দিয়ে জল ছাড়া হয়। জল ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই মান্তাদাড়ি আর বারোপেটিয়া পঞ্চায়েতের বিস্তৃত অংশ প্লাবিত হয়। টাকিমারি এলাকার প্রবীণ রায়ের বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এখন কার্যত খোলা আকাশের নীচে পরিবারের সকলকে নিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে জানান প্রবীণ।

উত্তর পাড়া, পশ্চিম পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, নাথুয়ার চর এলাকা থেকে বন্যার্তরা নাথুয়া বিএফপি এবং নাথুয়ার চর প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নেয়। ত্রাণ শিবিরের চেহারা নেয় এই দু’টি স্কুল। বন্যার্তদের বারোপেটিয়া পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে চিঁড়ে-গুড়ের মতো শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে বলে প্রধান কৃষ্ণ দাস দাবি করেন। যদিও দয়াবতী রায়, যমুনা রায়রা দুপুর অবধি কোনও ত্রাণের দেখা পাননি বলেও পাল্টা অভিযোগ করেন। তবে বাসিন্দাদের পাশে থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান কৃষ্ণবাবু। এ দিকে বুধবার রাতে ফের কী অঘটন ঘটবে তা নিয়েই উৎকন্ঠায় দিন কাটছে বন্যার্তদের। বন্যাপীড়িত সুশীল রায়ের কথায়, ‘‘দু’দশক ধরে তিস্তাকে দেখছি। কখনও এ ভাবে নদীকে ফুঁসে উঠতে দেখিনি। ফের রাত হলে যদি জল বাড়ে সেই আতঙ্কেই আছি। রাতে দু’চোখের পাতা এক না করে নদীর দিকেই চেয়ে বসে থাকা ছাড়া আর তো কোনও উপায় নেই আমাদের।’’

তবে তিস্তার জল কমছে বলে দাবি ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তিস্তায় রেকর্ড জল বেড়ে যাওয়ায় তা ছাড়া হয়েছে।’’ বুধবার বিকেলের পর থেকেই জলের পরিমাণও কমতে শুরু করেছে বলে রাজীববাবু জানান। দোমহনি পর্যন্ত তিস্তায় যে লাল সতর্কতা রয়েছে, তা তুলে দিয়ে হলুদ সতর্কতা জারি করা যায় কি না তা দেখা হচ্ছে বলে জানান সেচমন্ত্রী।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে তোর্সা নদীতে লাল সংকেত ছিল হাসিমারা এলাকায়। দুপুরের পরে জল নামতে শুরু করলে হলুদ সংকেত জারি হয় নদীতে। জল বাড়ায় দলসিংপাড়া ও সুভাষিনী এলাকার কিছু অংশে ভাঙন হয়। সেচ দফতরের আলিপুরদুয়ারের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার নীরজ সিংহ বলেন, “বুধবার সন্ধে ৬টার পর থেকে হলুদ সংকেত তুলে নেওয়া হয়েছে। নদীর জল স্বাভাবিক। ভুটানে বৃষ্টির জন্য এ দিন ভোরে জল বেড়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।”

তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী বাস্তুকার সুমন দে সরকারের কথায়, ‘‘লিস, ঘিস-সহ তিস্তার সরাসরি সংযোগে থাকা বিভিন্ন নদীগুলিতে জল আচমকা এতটাই বেড়ে যায় যে, আমরা বাধ্য হয়ে রেকর্ড জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE