Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ খুনে বেকসুর ১৮ অভিযুক্তই

পুলিশ খুনের মামলা। অথচ পুলিশই তদন্ত করে ঠিকঠাক তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে না-পারায় দুবরাজপুর থানার সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তীর খুনের ঘটনায় সোমবার বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন ১৮ জন অভিযুক্ত। 

অমিত চক্রবর্তী।

অমিত চক্রবর্তী।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

পুলিশ খুনের মামলা। অথচ পুলিশই তদন্ত করে ঠিকঠাক তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে না-পারায় দুবরাজপুর থানার সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তীর খুনের ঘটনায় সোমবার বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন ১৮ জন অভিযুক্ত।

ক’দিন আগেই কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল অসীম দাম খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে সাত জনের। কিন্তু অমিত-খুনের তদন্ত যে ঠিক ভাবে হয়নি, তা এ দিন বলেছেন বীরভূমের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সোমেশচন্দ্র পাল। তাঁর মন্তব্য, অনেকটা দায়সারা তদন্ত হয়েছে। সন্দেহাতীত ভাবে দোষ প্রমাণ করতে না-পারায় অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেওয়া হল।

রায় শুনে এ দিন আদালত চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অমিতের স্ত্রী পুতুল সরকার চক্রবর্তী। তিনি নিজেও পুলিশকর্মী। বালুরঘাটে কর্মরত। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ডিপার্টমেন্টই চায়নি অমিত বাঁচুক! ওর খুনিরা শাস্তি পাক। তাই অমিত বাঁচেনি। আসামিরাও সাজা পায়নি।’’

২০১৪-র ৩ জুন দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েতের আউলিয়া গোপালপুর গ্রামে ১০০ দিন প্রকল্পে একটি পুকুর সংস্কার করাকে ঘিরে তৃণমূল-সিপিএমের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন দুবরাজপুর থানার টাউনবাবু অমিত। দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫ দিনের লড়াই শেষে বছর সাঁইত্রিশের ওই যুবক মারা যান ২৮ জুলাই। ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অভিযোগকারী ছিলেন দুবরাজপুরের তৎকালীন ওসি ত্রিদীপ প্রামাণিক। তদন্তকারী অফিসার অমিতের সহকর্মী রণজিৎ বাউরি।

রায় ঘোষণার পরে সিউড়ি আদালতে স্ত্রী পুতুল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্তদের তালিকায় নাম ছিল সিপিএমের জোনাল নেতা সৈয়দ মকতুল হোসেন, দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূলের আলিম শেখ-সহ দুই দলের জনা তিরিশ নেতা-কর্মী-সমর্থকের। ওই বছর সেপ্টেম্বরে ৫০ জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। মকতুল, আলিম এবং এক নাবালক-সহ ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি ২৯ জন আজও পুলিশের খাতায় ফেরার। মকতুল-সহ দু’জন মারা যান। নাবালকের মামলা চলছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে। আলিম শেখ এ দিন বলেন, ‘‘সত্যের জয় হয়েছে।’’

পুলিশ ও সরকারি আইনজীবী অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন বলে মামলার প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠেছিল। এক সময় পাবলিক প্রসিকিউটর রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বদলি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন পুতুলদেবী। পরে তিনি সরে দাঁড়ান। বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর মলয় মুখোপাধ্যায়ও এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশের তদন্তে অনেক ফাঁকফোকর ছিল বলেই বিচারক অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়েছেন।’’ জেলার পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়ালের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

ছোটবেলায় বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে অমিত ও তাঁর একমাত্র বোন অমিতা চুঁচুড়ার রথতলার বাসিন্দা, পিসি ও পিসেমশাই শেফালি ও লক্ষ্মীনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে মানুষ হন। শেফালিদেবীর কথায়, ‘‘ওকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু কারা প্রকৃত অপরাধী, কারা ধরা পড়ে আবার ছাড়াও পেয়ে গেল— সবটাই রহস্য হয়ে রইল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Dubrajpur Police Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE