সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের সেই ফুটব্রিজ। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।
সব মিলিয়ে মোট ৬টা প্ল্যাটফর্ম। ফুট ওভার ব্রিজ দুটো। তবে, তার মধ্যে একটা ফুট ওভার ব্রিজই সব ক’টা প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সংযোগ রেখেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছির সেই ফুট ওভার ব্রিজেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল। ফুট ওভার ব্রিজের উপরে যাত্রীদের ভিড় এবং হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মত্যু হল দু’জনের। গুরুতর জখম হলেন আরও অন্তত ১৩ জন। তাদের মধ্যে কয়েক জন শিশুও রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১১ জনকে হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং অপদার্থতার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘একই সঙ্গে তিনটে ট্রেন এসে গিয়েছিল। ফুট ওভার ব্রিজের উপরে হুড়োহুড়ি করে দু’জন মারা গিয়েছেন। কারা মারা গিয়েছেন এখনও সবিস্তার জানতে পারিনি।’’ তিনি নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। নিখরচায় আহতদের চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রেলও। নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ আর্থিক সাহায্য এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে রেলের তরফে জানানো হয়েছে। অল্প আহতদের পঞ্চাশ হাজার এবং বাকিদের যাবতীয় চিকিৎসার খরচ রেল বহন করবে বলেও রেল জানিয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় একটি উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ যদিও মৃত্যুর কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ সাঁতরাগাছি স্টেশনে বেশ কয়েকটি একপ্রেস ট্রেন এসে দাঁড়ায়। কয়েকটি ট্রেন ছাড়বে বলেও দাঁড়িয়েছিল। ফলে প্রচুর যাত্রী একসঙ্গে ফুট ওভার ব্রিজে উঠে পড়েন। সেই সময় পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে। ১১ জনকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রেলের আধিকারিকরা হাসপাতালে রয়েছেন।’’
রেল সূত্রে খবর, ওই সময় সাঁতরাগাছি-চেন্নাই এক্সপ্রেস, শালিমার-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি-দিঘা প্যাসেঞ্জার এবং দু’টি লোকাল ট্রেন সাঁতরাগাছিতে এসে পৌঁছয়। অফিস ফেরত যাত্রীদের একটা বড় অংশও তখন ওই স্টেশনে ছিলেন। সব মিলিয়ে যাত্রীদের প্রবল ভিড় হয় ওই ফুট ওভার ব্রিজে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আচমকাই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বিস্তর ধাক্কাধাক্কিতে ব্রিজের উপরে পড়ে যান কয়েক জন। তার পর সেখানেই পদপিষ্ট হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘‘ওভার ব্রিজের কয়েকটা ধাপ পেরিয়েছি সবে। ভিড়ের মধ্যে আটকে গেলাম। সামনে-পিছনে একটুও এগোতে পারছিলাম না। পা রাখা তো দূর, ভিড় থেকে মাথা বার করে শ্বাস নেব তার জো নেই। ওই ভাবে প্রায় ২০-মিনিট দাঁড়িয়েছিলাম। ভিড় না এগোচ্ছিল, না পিছোচ্ছিল।’’
আরও পড়ুন- পেলিং যাওয়ার পথে খাদে গাড়ি, মৃত একই পরিবারের ৫, শোকের ছায়া মছলন্দপুরে
আরও পড়ুন- সাঁতরাগাছি ওভারব্রিজের নয়া নকশা
ঘটনার সময় ওই ওভার ব্রিজের উপরে কোথাও কোনও আরপিএফ বা রেলপুলিশের কর্মী ছিলেন না বলে অভিযোগ। এ দিনই হঠাৎ করে ভিড় হয়েছিল বলে রেলের তরফে দাবি করেন সঞ্জয়বাবু। কিন্তু, নিত্যযাত্রীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, সাঁতরাগাছিতে এমন পরিস্থিতি প্রায় রোজই তৈরি হয়। এবং সবটা জেনেও রেল এ ব্যাপারে অত্যন্ত উদাসীন বলে অভিযোগ। এক যাত্রী বলেন, ‘‘রোজ যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতে যে কোনও দিনই এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’’
ঘটনায় শোক প্রকাশ এবং তদন্তের দাবি করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘এই ঘটনায় কংগ্রেস গভীর ভাবে শোকাহত। ঘটনার পিছনে সাঁতরাগাছি স্টেশন কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি দায়ী। হঠাৎ করে ট্রেনের প্লাটফর্ম পরিবর্তনের ঘোষণার জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রদেশ কংগ্রেসে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাইছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল হাওড়া জেলা কংগ্রেস নেতা সুনীল আদকের নেতৃত্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy