Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সাক্ষ্য, প্রমাণের অভাব, সিপিএম নেতা ফাল্গুনী খুনে বেকসুর খালাস ২১

২০০৯ সালের ১৫ই জুন ধান্যরুখী গ্রামের খেড়ুয়া লালবাবা আশ্রমের কাছে খুন হয়েছিলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ফাল্গুনীবাবু। খুন ও তার রোষের আগুনে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল গ্রাম। নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে কোঁয়ারপুর গ্রামের সিপিএম নেতা শিবকুমার দে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, মোটরবাইকে চেপে মাজিগ্রামের দিকে যাওয়ার সময় খেড়ুঁয়ায় নিত্যানন্দ আশ্রমের কাছে বুকে গুলি করা হয় ফাল্গুনীকে।

ডান দিকে, কাটোয়া আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ার পরে। নিজস্ব চিত্র

ডান দিকে, কাটোয়া আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ার পরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৫:৫১
Share: Save:

মঙ্গলকোটের সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় খুনের মামলায় বেকসুর খালাস পেলেন ২১ জন অভিযুক্ত।

শুক্রবার কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম) সন্দীপ চৌধুরী ফাল্গুনী হত্যায় অভিযুক্তদের উপযুক্ত সাক্ষ্য, প্রমাণের অভাব বেকসুর খালাস দেন। সরকারি আইনজীবী তথা তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য মণ্ডল আজিজুল হক বলেন, ‘‘বারবার সমন পাঠিয়ে সাক্ষীদের ডেকে আনা হয়। ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। তবে মূল সাক্ষী মৃতের ভাই সাক্ষ্য দিতে আসেননি।’’ অভিযুক্তদের অন্যতম তৃণমূল নেতা প্রদীপ চট্টরাজ, দেবকুমার ধাড়ারা বলেন, ‘‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো গেল না আমাদের। সত্যের জয় হল।’’

২০০৯ সালের ১৫ই জুন ধান্যরুখী গ্রামের খেড়ুয়া লালবাবা আশ্রমের কাছে খুন হয়েছিলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ফাল্গুনীবাবু। খুন ও তার রোষের আগুনে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল গ্রাম। নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে কোঁয়ারপুর গ্রামের সিপিএম নেতা শিবকুমার দে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, মোটরবাইকে চেপে মাজিগ্রামের দিকে যাওয়ার সময় খেড়ুঁয়ায় নিত্যানন্দ আশ্রমের কাছে বুকে গুলি করা হয় ফাল্গুনীকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার আগের দিন ওই আশ্রমের সাধু চন্দন ব্রহ্মচারীর সঙ্গে গোপনে সভা করে তৃণমূল নেতা বিকাশ চৌধুরী, প্রদীপ চট্টরাজ, দেবকুমার ধাড়ারা ফাল্গুনীকে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ ছক কষেছিলেন বলেও অভিযোগপত্রে দাবি করেন তিনি। তবে পরবর্তীতে বিরূপ সাক্ষী হয়ে যান তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আদালতে শিবকুমার জানিয়েছিলেন, ঘটনার কিছুই মনে নেই তাঁর। সিপিএমও দল থেকে বহিষ্কার করে তাঁকে।

ওই ঘটনার পরে গ্রাম ছাড়া হয়ে গিয়েছিলেন সিপিএম-বিরোধীরা। বাড়ির পর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা অমর পালের নাতনিকে জলে ডুবিয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্ররা দফায় দফায় এসেও খেঁড়ুয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। ঘটনার ঠিক এক মাস পর, ১৫ জুলাই সেই সময় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে ৯ জনের বিধায়ক দল ধান্যরুখী গ্রামে যান। কিন্তু সিপিএমের তাড়া খেয়ে মানসবাবু-সহ কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে খেত জমি দিয়ে ছুটে পালাতে হয়। পরে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুদরুন মোড়ে জনসভা করেন। তারপরে ২০১৩ সালেও সবুজের মাঝে ধান্যরুখী ছিল লাল। সে গ্রামে ভোট হয়েছিল ফাল্গুনীবাবুর নামে। এখন অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে আরও।

খুনের পরে ঘটনাস্থল থেকেই অভিযুক্ত চন্দনকে ধরে পুলিশ। বর্ধমান হাসপাতাল থেকে ধরা হয় জখম তাপস ঘোষকে। পরে ধান্যরুখীর কংগ্রেস কর্মী অমর পাল, কাশীনাথ পাল আত্মসমর্পণ করেন। বাকি অভিযুক্তরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন। ওই বছরেরই ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। প্রদীপ, দেবু, বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারা দেওয়া হলেও বাকিদের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার ধারা ১২০ (বি) দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ্য বিকাশ চৌধুরী। তিনি তৃণমূল কর্মী ডালিম শেখ খুনের মামলায় এখন সংশোধনাগারে রয়েছেন। বাকিরা জামিনে ছিলেন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক এ দিন বলেন, ‘‘মঙ্গলকোটে যত জন আমাদের নেতা খুন হয়েছেন প্রত্যেক অভিযুক্তই খালাস হয়ে গিয়েছেন। ফাল্গুনীর বেলাতেও তাই ঘটল। কেন এমন হচ্ছে সেটা আমাদের কাছে রহস্য।’’ অভিযুক্তদের আইনজীবী সমীর চট্টরাজ বলেন, ‘‘ঘটনার কোনও প্রতক্ষ্যদর্শী ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE