Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পশ্চিম মেদিনীপুর

ফের ডাইনি অপবাদে হত্যা

মাঝে শুধু ঘণ্টা ছয়েকের তফাত। দাসপুরের গ্রামে ডাইনি অপবাদে তিন মহিলাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় ঘাটাল আদালত সাত জনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল সোমবার বিকেলে। বিচারক জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘জেলায় ডাইনি অপবাদে খুনের ঘটনায় এত জনের সর্বোচ্চ সাজা এই প্রথম।’’ দৃষ্টান্তমূলক এই শাস্তি ঘোষণার রাতেই ফের এক মহিলাকে ডাইনি ঠাওরে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল সেই পশ্চিম মেদিনীপুরেই। এ বার ঘটনাস্থল ডেবরা।

দেবমাল্য বাগচী
ডেবরা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০৩:৫৪
Share: Save:

মাঝে শুধু ঘণ্টা ছয়েকের তফাত।

দাসপুরের গ্রামে ডাইনি অপবাদে তিন মহিলাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় ঘাটাল আদালত সাত জনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল সোমবার বিকেলে। বিচারক জোর গলায় বলেছিলেন, ‘‘জেলায় ডাইনি অপবাদে খুনের ঘটনায় এত জনের সর্বোচ্চ সাজা এই প্রথম।’’ দৃষ্টান্তমূলক এই শাস্তি ঘোষণার রাতেই ফের এক মহিলাকে ডাইনি ঠাওরে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল সেই পশ্চিম মেদিনীপুরেই। এ বার ঘটনাস্থল ডেবরা।

ডেবরার ভরতপুর পঞ্চায়েতের বীরসিংহপুরে নিহতের নাম সোমবারি টুডু (৪৬)। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই গ্রামে গত কয়েক মাসে রোগে ভুগে কয়েক জনের মৃত্যু হয়। সোমবার বিকেলে গ্রামের কিশোরী বীণা মুর্মু অসুস্থ হয়ে পড়ে। বীণার পরিবারের ধারণা হয়, সোমবারি আদর করেছেন বলেই সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে খবর চাউর হতেই সালিশি সভার নিদান দেন গ্রামের মাতব্বরেরা। সন্ধ্যার সেই সালিশিতে ডাকা হয় সোমবারিকে। গ্রামের মেয়ে-বউরা দাবি করে, সোমবারি ডাইন। তাঁর ছোঁয়া লেগেছে বলেই বীণা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদের চেষ্টা করেও পারেননি সোমবারি। তাঁর দিকে তেড়ে আসে গ্রামবাসীদের একাংশ। সালিশি সভা ভেস্তে যায়। তবে ‘ডাইনি’ সোমবারিকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার প্রক্রিয়া ধাক্কা খায়নি। তাঁকে গাছে বেঁধে শুরু হয় মারধর। হামলাকারী সেই দলের পুরোভাগে ছিলেন রেন্টা টুডু, চণ্ডী হেমব্রম, মালতী মাণ্ডি, রণজিৎ মাণ্ডিরা। রেন্টা হলেন বীণার মামা।

স্ত্রীকে বাঁচাতে আসেন সোমবারির স্বামী শেরু টুডু। মারধর করা হয় তাঁকেও। জখম স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকুও পাননি শেরু। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সোমবারির। এ দিন কাঁদতে কাঁদতে শেরু বলেন, “বউটাকে পিটিয়েই মেরে দিল। কিচ্ছু করতে পারলাম না।” রেন্টা-সহ মূল অভিযুক্তরা পলাতক। তবে রেন্টার ভাই হাওরা সরেন-সহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে ডাইন অপবাদে খুন নতুন নয়। শহর ঘেঁষা এলাকাতেও এমন নজির আছে। বীরসিংহপুর থেকে
ডেবরা ব্লক শহরের দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার। গ্রামের কাছেই প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়তেও যায়। তবু ডাইনি, তুকতাক, বিষ নজরের মতো শব্দগুলো থেকে মুক্তি পায়নি বীরসিংহপুর। গ্রামে খবরের কাগজও ঢোকে না। তাই ঘাটাল কোর্টের ফাঁসির সাজার কথা শোনেননি গ্রামবাসীরা। বরং স্কুল পড়ুয়া অনিমা সরেন, শ্রাবণী সরেনরা বলছে, “স্কুলে বলে, ডাইন বলে কিছু নেই। কিন্তু আমরা জানি ও সব আছে। রাতে দেখা যায়।’’

প্রকৃত শিক্ষার আর সচেতনতার অভাবেই যে এখনও এই আঁধার তা মানছে প্রশাসনের একাংশও। তবে ডেবরার বিডিও জয়ন্ত দাসের আশ্বাস, “এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Witch Villager
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE