প্রতীকী চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন মুচিপাড়া এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্তারা! কেন?
পুলিশ বলছে, ব্যাঙ্কের হয়ে এটিএমে টাকা ভরার কাজ করে ওই সংস্থা। ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদী পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল করার পরে সংস্থার কর্তারা এটিএমে টাকার হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখেন হুগলির ২৪টি এটিএমে যত টাকা ভরতে পাঠানো হয়েছিল, ততটা ভরা হয়নি। ফারাকটা ছিল ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার!
তবে এই টাকা সরানোয় জড়িত ভূতেরা যে সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে, তা টের পেয়েছিলেন বেসরকারি ওই সংস্থাটির কর্তারা। পুলিশ জানায়, এর পরেই সংস্থার তরফে একটি অন্তর্তদন্ত করা হয় ও এটিএমে টাকা ভরার ভারপ্রাপ্ত চার কর্মীর বিরুদ্ধে মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। গত সপ্তাহে মানস চট্টোপাধ্যায়, রিয়াজুল ইসলাম, শুভজিৎ কুণ্ডু ও সন্তু সর্দার নামে ওই চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মানস ও রিয়াজুলের বাড়ি আরামবাগে। শুভজিৎ উত্তরপাড়া ও সন্তু তারকেশ্বরের বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, টাকা উদ্ধার করা না গেলেও অপরাধ কবুল করেছে ধৃতেরা। জেরায় জানা যায়, হাতিয়ে নেওয়া টাকা ঠিকাদারি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে তারা। মঙ্গলবার প্রথম দফার পুলিশি হেফাজত শেষে ধৃতদের আদালতে পেশ করা হলে ফের তাদের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে হয়।
পুলিশের কাছে ওই সংস্থার কর্তারা জানান, মার্চে এটিএম অডিট হয়। ফলে তার পরে গত কয়েক মাসে ধাপে ধাপে টাকা সরানো হলেও তা ধরা পড়েনি। নোট বাতিলের পরে সব টাকার হিসেব মেলাতে হওয়ায় ঘটনাটি সামনে আসে। তদন্তকারীদের দাবি, ব্যবসার লাভ থেকে পরবর্তী অডিটের আগেই টাকা ফের এটিএমে ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের। পুলিশ জানায়, ওই চক্রের মূল পান্ডা মানস। তার নির্দেশেই টাকা সরানোর কাজ হয়েছিল। লুঠের বেশির ভাগ টাকা সরিয়েছিল সে। যা ঠিকাদারি ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়। পরে অবশ্য বাকিরাও তাতে টাকা বিনিয়োগ করে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশের দাবি, এমনিতে এটিএম থেকে টাকা চুরি কার্যত অসম্ভব। কারণ ভল্ট খুলতে দু’টি পাসওয়ার্ড প্রয়োজন। যার একটি থাকে সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীর কাছে। অন্যটি তিনি টাকা ভরতে এলে সেই সময়ে ফোন করে ব্যাঙ্ক থেকে জেনে নেন। দ্বিতীয় পাসওয়ার্ডটি এক বারই ব্যবহার করা যায়, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের (ওটিপি) মতো। ফলে এ ক্ষেত্রে যে সংস্থার কর্মীরাই জড়িত, তা বুঝেছিলেন কর্তারা।
পুলিশ সূত্রের ব্যাখা, কত টাকা ভরা হয়েছে তা এটিএমে থাকা সফ্টওয়্যারের পক্ষে বোঝা সম্ভব না। যে সব কর্মী এটিএমে টাকা রাখেন, তাঁরাই টাকা ভরার পরে তার পরিমাণ ব্যাঙ্কের কাছে জানিয়ে দেন। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা সেই সুযোগ নিয়ে এটিএমগুলিতে কম টাকা ভরতো।
ব্যাঙ্কগুলির তরফেও জানানো হয়েছে, এটিএমে টাকা না ভরে তা সরানোর মতো জালিয়াতি করা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সফ্টওয়্যারে ধরা পড়বে না। অডিটের সময়েই তা ধরা পড়ে। বছর দুয়েক আগে বেহালার একটি এটিএম থেকে ঠিক একই কায়দায় প্রায় ১৭ লক্ষ হাতিয়ে ধরা পড়েছিল টাকা ভরার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মী। তবে এখন ওই চুরি রুখতে মাঝে মাঝেই ব্যাঙ্কের
তরফে এটিএমে হানা দেওয়া হয় বলে দাবি ব্যাঙ্কগুলির।
লালবাজার সূত্রে খবর, ২৩ নভেম্বর রাতে সংস্থার তরফে অভিযোগ হওয়ার পর দিনই অফিসের বাইরে ঘোরাঘুরি করছিল মানস। টাকা উধাও নিয়ে কোনও অভিযোগ হয়েছে কি না জানার চেষ্টা করছিল। সে কথা কানে আসে পুলিশের। তখনই তাকে ধরা হয়। মানসকে জেরা করে বাকিদের কথা জানতে পারে পুলিশ।
তদন্তকারীদের দাবি, মানস ধরা পড়েছে বুঝতে পেরেই বাকিরা গা ঢাকা দেয় কলকাতায়। গত শুক্রবার রিয়াজুল ও শুভজিৎকে ধরা হয়। পরে সন্তুকে টোপ দিয়ে পাকড়াও করা হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। মানস, রিয়াজুল, শুভজিৎ ও সন্তু — এই চার জনের কাছেই হুগলির বিভিন্ন এলাকার এটিএমে টাকা ভরার কাজ করত। তাদের কাছেই থাকত পাসওয়ার্ড। মানস এবং সন্তু এক সঙ্গে পাসওয়ার্ড মিলিয়ে টাকা ভরতো এটিএমে। এ ভাবেই একসঙ্গে কাজ করত শুভজিৎ ও রিয়াজুল।
মঙ্গলবার মানসের আইনজীবী পূর্ণেন্দু মাইতি বলেন, ‘‘মানস তদন্তে সহযোগিতা করছে। ওই ঘটনায় আসল যারা জড়িত, সেই চাঁই-দের ধরতে পারলেই সব টাকার হদিস মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy