মঙ্গলবার নগর দায়রা আদালতে কুণাল ঘোষ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ফল প্রকাশের এগারো দিন পরে দেখা হল বাবার সঙ্গে। আদালত চত্বরে। পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন বাবা।
সারদা মামলায় অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ এখন জেলে। তাঁরই ছেলে কুন্তল এ বার আইএসসি পরীক্ষায় ৯৫.৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন। ফল বেরিয়েছে ৬ মে। এত দিন পরে মঙ্গলবার, তাঁর সঙ্গে কুণালের দেখা হল ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারভবনে।
ঘনিষ্ঠ মহলে কুণাল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ছেলের সঙ্গে এ ভাবে দেখা করার কথা পুলিশ জানতে পারলে সমস্যা হতে পারে। তাই কাকপক্ষী যাতে টের না পায়, সে ভাবেই লুকিয়ে এ দিন কুন্তলকে আদালত চত্বরে আসার জন্য দূত মারফত খবর পাঠান কুণালই। ঘনিষ্ঠ মহলকে তিনি জানান, প্রতিকূল পরিবেশে পড়াশোনা করেও এত ভাল ফল করায় তিনি এক বার আদর করতে চেয়েছিলেন ছেলেকে। জেলে দেখা করলেও সে সুযোগটা ছিল না। কারণ, জেলে বন্দি ও দর্শনার্থীর মধ্যে একটি ছোট জাল লাগানো জানলা থাকে। সেই জানলা দিয়ে একে অন্যের মুখ দেখতে পেলেও ছোঁয়ার উপায় থাকে না। তাই, এ দিন কুণালের হাজিরার আগেই সেখানে পৌঁছে যাওয়ার জন্য চুপিসারে খবর পাঠানো হয়েছিল কুন্তলকে।
কুণালের সেই আশঙ্কাকে একেবারে ভুল প্রমাণ করে ‘পুলিশ-কাকু’রাই মঙ্গলবার কুন্তলকে শুধু অভিনন্দন জানিয়েই থেমে থাকেননি, মিষ্টি এনে খাইয়েছেনও। পরে ফোনে কুন্তল বলেন, ‘‘আমি অভিভূত।’’ এখানেই শেষ নয়, ছেলের সঙ্গে কুণাল যাতে কিছু ক্ষণ সময় কাটাতে পারেন, তার জন্য পুলিশের অফিসারেরাই তাঁদের কোর্ট অফিসারের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসান।
জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর দু’টোয় কুণালকে আদালত কক্ষে আনা হয়। কিন্তু, তার আগে নিয়ম মতো সকালেই জেল থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় আদালতের লকআপে। যে পথ দিয়ে সাধারণ মানুষ বিচারভবনে ঢোকেন, সেই পথ দিয়েই কুন্তল ঢুকে একতলার সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়েছিলেন সাড়ে এগারোটা থেকে। কুণালকে পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে আসা হয়। দুপুর বারোটা নাগাদ সিঁড়ির মুখে ছেলেকে দেখতে পান কুণাল। জড়িয়ে ধরেন তাঁকে। প্রথমে হতচকিত হয়ে যান পুলিশ অফিসারেরাই। কিন্তু, সব কথা শুনে তাঁরা কুণাল ও কুন্তলকে কোর্ট অফিসারের ঘরে নিয়ে যান। বাবা-ছেলে বসে কথা বলেন প্রায় মিনিট কুড়ি — পুলিশেরই সামনে।
কুণাল ছেলেকে বলেন, ‘‘আমার এই অবস্থার মধ্যে ছেলে এত ভাল রেজাল্ট করেছে। আমি ভীষণ খুশি।’’ পরে আদালত কক্ষে বিচারককেও কুণাল জানান, ছেলেকে এক বার ছুঁয়ে দেখার জন্য তিনি আদালত চত্বরেই ডেকে পাঠিয়েছিলেন। পরে কুন্তল জানান, গত জুন মাসে শেষ বার জেলে গিয়ে দেখা হয়েছিল বাবার সঙ্গে। এ বার ফল বেরোনোর পরে কুন্তলের মা ফোনে কুণালকে তা জানান। কুন্তল বলেন, ‘‘প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে আমার স্কুল (সেন্ট জেমস) আর বন্ধুরা খুব সাহায্য করেছে।’’
এ দিনই সারদা মামলায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসুরও আদালতে হাজিরা ছিল। তিনিও ওই একই সময়ে কোর্ট অফিসারের ঘরে গিয়ে দেখতে পান কুন্তলকে। সূত্রের খবর, ভাল ফল করার জন্য তিনিও অভিনন্দন জানান কুন্তলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy