নিখোঁজ মহাদেব বাগদি। —নিজস্ব চিত্র।
চেহারা ভারী। খেপায় সহপাঠীরা। তাই হস্টেলে বা স্কুলে যাবে না বলত মহাদেব। সে কথা না শুনে বুঝিয়ে তাকে স্কুলে ফিরতে রাজি করিয়েছিলেন বাবা-মা। তার পর থেকে খোঁজ নেই পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটির।
পাঁচ দিন ধরে ছেলের সন্ধান না পেয়ে দিশাহারা আউশগ্রামের গোন্না গ্রামের খেতমজুর কেবলা বাগদি ও রীতা বাগদি। নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন তাঁরা। হস্টেলে সহপাঠীদের ‘মোটা’ ডাকের জেরে অবসাদে ভুগে কোথাও চলে গিয়েছে ছেলে, এমনই অনুমান তাঁদের।
ফুট চারেকের মহাদেবের ওজন ৪৫ কেজির আশপাশে। আউশগ্রামের সর চিন্তহরণ মুখার্জ্জী স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করত সে। রীতাদেবীর কথায়, ‘‘ছেলের চেহারা কিছুটা ভারী। বাড়ি ফিরলে বলত, স্কুলে-হস্টেলে অন্য ছেলেরা ওকে ‘মোটা মহাদেব’ বলে খেপায়। তাতে অতিষ্ঠ হয়েই স্কুলে যেতে চাইত না।’’
কেবলাবাবু জানান, সম্প্রতি ছুটিতে বাড়ি ফিরেও ছেলে হস্টেলে ফিরতে চাইছিল না। কিন্তু এ বার পরীক্ষা হলে অন্য স্কুলে ভর্তি করাবেন, এই আশ্বাস দিতে রাজি হয়। গত মঙ্গলবার স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়েও ফিরে আসে মহাদেব। বেলায় আবার বেরোয়। তার পর থেকেই বেপাত্তা। রীতাদেবী বলেন, ‘‘মোটে ২০ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল। পরে হস্টেলে ফোন করে জানতে পারি, ও পৌঁছয়নি। সব আত্মীয়ের বাড়িতে খুঁজেছি। কোথাও পাইনি।’’
প্রথমে ঘটনাটি মানতে না চাইলেও হস্টেল সুপার নিখিল কর্মকার পরে বলেন, ‘‘আড়ালে ওই ছাত্রকে কিছু ছেলে ‘মোটা’ বলে খেপাত শুনেছি। তবে আমাদের সামনে তেমন কিছু বলতে শুনিনি।’’ মনোবিদ মোহিত রণদীপের মতে, আশপাশের মানুষের এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় ছোটরা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হয়। হীনমন্যতা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে তার ভাল দিকগুলি তুলে ধরে বোঝানো দরকার। তিনি বলেন, ‘‘অন্যের অনুভূতি বুঝতে শেখানো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই। সহানুভূতির জায়গা তৈরি করা গেলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা রোখা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy