Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Open Defecation

মার্শালের হুইস্‌লে বন্ধ মাঠে শৌচ

মার্শাল নেমেছে মাঠে। গলায় ফিতে দিয়ে বাঁধা হুইস্‌ল। প্রতি বার তাতে ফুঁ পড়ছে, আর শৌচের জন্য আদাড়ে-বাদাড়ে বসে থাকা লোকজনের পিলে চমকে উঠছে। 

মার্শাল টুডু। —নিজস্ব চিত্র

মার্শাল টুডু। —নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত
সোনামুখী শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৯
Share: Save:

সবে ভোরের আলো ফুটেছে। মাঠঘাট ঢাকা কুয়াশার চাদরে। আচমকা সে সব ফুঁড়ে দিল হুইস্‌লের তীক্ষ্ণ আওয়াজ।

মার্শাল নেমেছে মাঠে। গলায় ফিতে দিয়ে বাঁধা হুইস্‌ল। প্রতি বার তাতে ফুঁ পড়ছে, আর শৌচের জন্য আদাড়ে-বাদাড়ে বসে থাকা লোকজনের পিলে চমকে উঠছে।

স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মার্শাল টুডুর এ-হেন তৎপরতায় গত মাস দুয়েকে বাঁকুড়ার সোনামুখীর চকধোবাকুড়ের অনেক মানুষ শৌচের জন্য মাঠে যাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ধানসিমলা পঞ্চায়েতের চকধোবাকুড়ে গ্রামে ৪২টি পরিবারের বসবাস। সমস্ত বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে। তবে অধিকাংশই ব্যবহার হত না এত দিন। ইদানীং হচ্ছে। মার্শালের দৌলতে।

আরও পড়ুন: পানীয় জলের সঙ্কটের মুখে শহর, তৈরি হচ্ছে নয়া নীতি

‘আতমা’ প্রকল্পে চকধোবাকুড়েকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। মার্শালের স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রকাশ কর্মকার জানান, গত ৪ ডিসেম্বর সেই সূত্রে গ্রাম পরিদর্শনে যান অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সীমা হালদার এবং বিডিও (‌সোনামুখী) দেবলীনা সর্দার। নির্মল বিদ্যালয়ের পুরস্কার পাওয়া চকধোবাকুড়ে প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করেন তাঁরা। সীমাদেবী মার্শালকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, গ্রামের সবাই শৌচাগার ব্যবহার করেন কি না? মার্শাল জানিয়েছিল, না। এমনকি সে নিজেও রোজ সকালে মাঠে যায়। সীমাদেবী তাকে বোঝান, কেন শৌচালয় ব্যবহার করা দরকার। প্রকাশবাবুর কথায়, ‘‘লজ্জায় পড়েছিল মার্শাল। সীমাদেবী ওকেই দায়িত্ব দেন গ্রামের মানুষকে সচেতন করার।’’ আর হুইস্‌লের পরিকল্পনা প্রকাশবাবুর।

বাড়ি ফিরে বাবার থেকে পুরনো হুইস্‌ল চেয়ে নিয়েছিল মার্শাল। তার বাবা অশ্বিনী টুডুও শিক্ষক। তিনি বলছেন, ‘‘ও যে ব্যাপারটায় এতটা গুরুত্ব দিয়েছে, প্রথমে বুঝিনি। পরদিন (গত ৫ ডিসেম্বর) আলো ফুটতেই দেখি, হুইস্‌ল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।’’ ছেলের পিছু পিছু গিয়েছিলেন বাবা। দেখেছেন, শৌচ করতে মাঠে আসা লোকজনের দিকে বাঁশি বাজিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে মার্শাল। কাছে গিয়ে বোঝাচ্ছে, কেন এমনটা করা ঠিক নয়।

এ ভাবেই চলছিল। পুরনো হুইস্‌ল গলায় ঝুলিয়ে এক দিন স্কুলে হাজির হয়েছিল সাত বছরের খুদে। তা দেখে নতুন একটি হুইস্‌ল কিনে দেন প্রধান শিক্ষক প্রকাশবাবু। একরত্তির উৎসাহ তাতে বেড়ে যায়। মার্শাল বলছে, ‘‘বাড়ির সবাই বাথরুমে যায়। পাড়ার বন্ধুরা মাঠে যেত বলে আমিও যেতাম। এখন ভুল বুঝেছি। বন্ধুদের বুঝিয়েছি। অন্যদেরও বলছি। যত দিন পাড়ার লোকে মাঠে যাওয়া বন্ধ না-করবে, দেখলেই হুইস্‌ল বাজাব।’’

মাঠে শৌচে গিয়ে হুইস্‌লওয়ালা মার্শালের মুখে পড়া একাধিক গ্রামবাসীর বক্তব্য, ‘‘একে ওই বাঁশি। তার পরে বাচ্চাটা এসেই বলতে শুরু করল, ‘খোলা জায়গায় শৌচ করলে রোগ হয়। বাইরে শৌচ করা লজ্জার ব্যাপার’। শুনে প্রথমটা রাগ হয়েছিল। কিন্তু মার্শাল নাছোড়বান্দা। তাই এখন আর শৌচে মাঠে যাচ্ছি না।’’

ধানশিমলা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের ইউসুফ মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমরা সচেতনতার প্রচার চালিয়ে আসছিলাম। তাতে কাজ হয়তো হত। কিন্তু মার্শালের দৌলতে এই ক’দিনেই মাঠেঘাটে শৌচ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ বিডিওর কুর্নিশ, ‘‘একা মার্শাল যেন একটা বাহিনীর কাজ করে দেখিয়ে দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Open Defecation Sonamukhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE