Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

এই সেই চিতাবাঘ? দাবি উঠল, গুলি করুন!

যে ঘটনাকে ঘিরে শুক্রবার সন্ধ্যায় রীতিমতো ধুন্ধুমারকাণ্ড বাধার উপক্রম নিল মাদারিহাটের ধুমচিপাড়া চা বাগানে।

অবশেষে বাঘ-বন্দি। —নিজস্ব চিত্র।

অবশেষে বাঘ-বন্দি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৭
Share: Save:

এ বার বন দফতরের খাঁচায় ধরা পড়ল পূর্ণ বয়স্ক একটি পুরুষ চিতা বাঘ। আর যে ঘটনাকে ঘিরে শুক্রবার সন্ধ্যায় রীতিমতো ধুন্ধুমারকাণ্ড বাধার উপক্রম নিল মাদারিহাটের ধুমচিপাড়া চা বাগানে।

ধরা পড়া চিতা বাঘটিকে ‘মানুষখেকো’ ধরে নিয়ে সেটিকে গুলি করে মারার দাবিতে সরব হন স্থানীয় বাসিন্দারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় চিতাবাঘটিকে সেখান থেকে নিয়ে যেতে বনকর্মীদের বাঁধাও দেন তাঁরা। তবে শেষ পর্যন্ত উত্তেজিত জনতাকে কোনও রকমে বুঝিয়ে চিতাবাঘটিকে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এই চিতাবাঘটিই ‘মানুষখেকো’ কি না, তা নিয়ে বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মনেও সন্দেহ দানা বেধেছে৷ তবে সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে না দেখে এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে নারাজ বন দফতরের কর্তারা।

গত দু’মাস ধরে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মাদারিহাটের চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায়। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মাদারিহাটের একাধিক চা বাগান এলাকায় চিতাবাঘের হানায় তিন শিশু, কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন দু’জন। মৃত ও জখমদের তালিকায় একজন করে ধুমচিপাড়া চা বাগানের বাসিন্দাও রয়েছেন৷

আরও পড়ুন: বাজেটে নেই চায়ে পে চর্চা, হতাশ শিল্প

মাদারিহাটে চিতাবাঘ নিয়ে আতঙ্ক দানা বাঁধতেই সেখানকার বিভিন্ন চা বাগান এলাকায় খাঁচা পাতার কাজ শুরু হয়। ধুমচিপাড়া চা বাগান এলাকাতেও খাঁচা পাতা হয়। সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই চা বাগানের জলের ট্যাঙ্কের কাছে পাতা একটি খাঁচায় একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘ ধরা পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারাই সেটা প্রথম দেখতে পান। খবর পেয়ে কাছেই ডিউটিরত অবস্থায় থাকায় মাদারিহাট ও লঙ্কাপাড়া রেঞ্জের কর্মীরা সেখানে ছুটে যান। কিন্তু ততক্ষণে প্রচুর মানুষ খাঁচাটিকে ঘিরে ফেলেছেন।

এক বনকর্মীর কথায়, “উত্তেজিত জনতার একটাই দাবি ছিল, চিতা বাঘটিকে মেরে ফেলতে হবে।” খবর পেয়ে দুই রেঞ্জের বনকর্মীদের আরও কয়েকটি দল এলাকায় ছুটে যায়৷ সেখানে পৌঁছয় মাদারিহাট থানার পুলিশও। কিন্তু চিতাবাঘটিকে গুলি করে মারার দাবিতে অনড় থাকেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, তাঁদের কথা মানা না হওয়ায় চিতাবাঘটিকে সেখান থেকে নিয়ে যেতে বনকর্মীদের বাধাও দেওয়া হয়।

বন দফতরের মাদারিহাটের রেঞ্জ অফিসার খগেশ্বর কার্যী বলেন, “শেষ পর্যন্ত বাসিন্দারে কোনও মতে বুঝিয়ে চিতাবাঘটিকে আমরা উদ্ধার করতে সমর্থ হই।” লঙ্কাপাড়ার রেঞ্জ অফিসার বিশ্বজিৎ বিষয়ী বলেন, ‘‘উদ্ধারের পরে চিতাবাঘটিকে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’

তবে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলেও এই বাঘটিই আদৌ ‘মানুষখেকো’ কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি বন দফতরের কর্তারা৷ বন দফতর সূত্রের খবর, শেষ দুই মাসে এই নিয়ে মাদারিহাটে ছয়টি চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হল।

মাদারিহাটের রেঞ্জ অফিসার খগেশ্বরবাবু বলেন, “আগের চিতাবাঘগুলি প্রত্যেকটি স্ত্রী চিতাবাঘ ছিল। এই প্রথম পূর্ণ বয়স্ক একটি পুরুষ চিতাবাঘ ধরা পড়ল। স্বাভাবিকভাবেই তাই একটা সন্দেহ দানা বাধে যে, এই চিতাবাঘটি কোনও মানুষকে মেরে ফেলেছে বা জখম করেছে কিনা? তবে আমরা এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। বিশেষজ্ঞরাই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবেন।”

জলদাপাড়ার ভারপ্রাপ্ত ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘এই চিতাবাঘটি মানুষখেকো হতে পারে, না-ও হতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে হবে। তাতে কী তথ্য উঠে আসছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব হবে।’’ তার আগে সংশয়ের খাঁচাতেই বন্দি এই চিতাবাঘ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leopard Forest Department Cage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE