Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Migrant Workers

পরিযায়ী কুপন পেয়ে হতবাক গাড়ি-মালিক

এটা কী ভাবে ঘটল, কেনই বা তাঁর জন্য এই কুপন বরাদ্দ হল, তা জানতে স্থানীয় রেশন দোকানেও গিয়েছিলেন ওই খড়দহবাসী।

আসবে ট্রেন। তার আগে ঘুম পরিযায়ী শ্রমিকদের। রবিবার হাওড়া স্টেশনে।

আসবে ট্রেন। তার আগে ঘুম পরিযায়ী শ্রমিকদের। রবিবার হাওড়া স্টেশনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৪:৫৭
Share: Save:

ভুল! সবই ভুল!

ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত— সেটা অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ।

পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখে অন্ন তুলে দিতে দু’মাসের কুপনের ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই কুপন পেয়েছেন খড়দহের মাদারিপুর পল্লির এক বাসিন্দা। এক সময় ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করলেও ২০১৮ সালের জুন থেকে যিনি খড়দহেই থাকেন। আয়করও দেন। তাঁর স্ত্রীও সরকারি চাকুরে। এমনকি তাঁদের ডিজিটাল রেশন কার্ডও রয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ মে-জুনের বিনামূল্যের কুপন পেলেন, প্রশ্ন তুলছেন খড়দহের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাসিন্দা।

এটা কী ভাবে ঘটল, কেনই বা তাঁর জন্য এই কুপন বরাদ্দ হল, তা জানতে স্থানীয় রেশন দোকানেও গিয়েছিলেন ওই খড়দহবাসী। সেখান থেকে তাঁকে জানানো হয়, ‘ভুল করে হয়েছে।’ নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের কুপনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আবেদন করতে হয়। কিন্তু আবেদন করা তো দূরের কথা, এই কুপন দেওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি বলে জানান একাধিক গাড়ির ওই মালিক। তিনি বলেন, ‘‘আমার এমন কুপনের প্রয়োজন নেই। আমার কাছে কুপন আসায় যাঁর সত্যিই প্রয়োজন রয়েছে, তিনি তো বঞ্চিত হলেন।’’

খাদ্য দফতর সূত্রের বক্তব্য, আবেদন না-করলে এমন কুপন পাওয়ার কথা নয়। তাই বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। তবে প্রকৃত গ্রাহকের তুলনায় এই ‘ভুলের’ সংখ্যা খুব কম বলে জানাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকে। খাদ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কুপন-পিছু খাদ্যসামগ্রীর আর্থিক মূল্য কয়েকশো টাকা। কুপন বিলি নিয়ে এমন অভিযোগ পেলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখবে দফতর।’’ এই সংক্রান্ত প্রাপ্ত তালিকা খুঁটিয়ে দেখার মতো লোকবল না-থাকায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যাচাই যে সম্ভব নয়, তা-ও মানছেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকে।

প্রশাসনের অনেকে জানান, পুর এলাকায় কখনও কখনও গ্রাহকদের তালিকা তৈরি করে থাকেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (প্রাক্তন কাউন্সিলর বর্তমানে ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর)। ফলে রেশনের সুবিধা নিতে না-চাওয়া ব্যক্তিও তাড়াহুড়োর মধ্যে তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়ে থাকতে পারেন। রেশন নিয়ে অনিয়ম নজরে আসতেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করায় এখন আর এমন অভিযোগ কার্যত নেই বলে জানান দফতরের আধিকারিকেরা। আবেদন গ্রাহ্য হওয়ার পরেও ডিজিটাল কার্ড যাঁরা পাননি, তাঁদের ‘ফুড কুপন’ দেওয়া হয়। পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘরে ফেরার পরে তাঁরাও ফুড কুপন পান। শ্রম দফতরের তালিকা অনুসারে ব্লক স্তরে বিডিওরা ওই শ্রমিকদের কুপন বিলি করেছেন। এবং তারই ভিত্তিতে খাদ্যশস্য বরাদ্দ করেছে সরকার।

আমপানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তা নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। অনেক ক্ষেত্রে ‘ভুয়ো’ ক্ষতিগ্রস্তেরা ‘ভুল’ স্বীকার করে অর্থ ফেরতও দিচ্ছেন। ‘‘একটি ভুল কিন্তু এক জন প্রকৃত প্রাপককে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। আর সেই ভুলের সঙ্গে যদি অর্থের সম্পর্ক থাকে, তা হলে দুর্নীতির কথা এসেই যায়,’’ বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers Food Coupon State Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE