Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কুয়াশাতেও তীব্র গতি, প্রাণ গেল সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার-সহ দুই বন্ধুর

শীতরাতের কুয়াশা। সেই সঙ্গে তীব্র গতি। এই দুইয়ের যোগফলেই গাড়িটা নয়ানজুলিতে ছিটকে প়ড়ে ঢুকে গেল কালভার্টের নীচে। প্রাণ গেল দুই যুবক বন্ধুর। লংড্রাইভে বেরিয়ে টাকি ঘুরে কলকাতায় ফিরছিলেন তাঁরা। 

অরিজিৎ রায়চৌধুরী এবং স্নেহাশিস দাস।

অরিজিৎ রায়চৌধুরী এবং স্নেহাশিস দাস।

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫২
Share: Save:

শীতরাতের কুয়াশা। সেই সঙ্গে তীব্র গতি। এই দুইয়ের যোগফলেই গাড়িটা নয়ানজুলিতে ছিটকে প়ড়ে ঢুকে গেল কালভার্টের নীচে। প্রাণ গেল দুই যুবক বন্ধুর। লংড্রাইভে বেরিয়ে টাকি ঘুরে কলকাতায় ফিরছিলেন তাঁরা।

শনিবার রাত ১১টা নাগাদ মিনাখাঁর মালঞ্চ সেতু থেকে দ্রুত গতিতে নামার সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, এক যুবক ঘটনাস্থলেই মারা যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁর সঙ্গীকে রবিবার ভোরের দিকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। মৃতদের নাম স্নেহাশিস দাস ও অরিজিৎ রায়চৌধুরী। নব নালন্দা স্কুলের প্রাক্তন সহপাঠী দুই যুবকেরই বয়স ৩১ বছর। অরিজিৎ নিউ টাউনে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। স্নেহাশিস পেশায় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। রূপম ইসলামের ফসিলস ব্যান্ডের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শব্দপ্রযুক্তিও নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। দু’জনে বেরিয়েছিলেন অরিজিতের বড় গাড়িতে। স্নেহাশিস গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বাসন্তী হাইওয়ের কয়েক গজ দূরে বিদ্যাধরী নদীর উপরে মালঞ্চ সেতু। কিছুটা ধনুকের মতো বাঁকা ঢাল বেয়ে নেমেছে সেতুটা। পুলিশের ধারণা, ঘন কুয়াশায় সম্ভবত সেতুর ঢাল ঠিকঠাক খেয়াল করতে পারেননি গাড়িচালক। গাড়ি বেশ জোরেই চলছিল বলে পুলিশের অনুমান। রাস্তার ধারে শুকনো নয়ানজুলির উপরের একটি ছোট কালভার্টের নীচে গড়াতে গড়াতে ঢুকে যায় গাড়িটি। পরে ভাঙাচোরা গাড়ির দরজা কুড়ুল দিয়ে কেটে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা দুই আরোহীকে বার করে আনেন।

নিস্পন্দ স্নেহাশিসের শিয়রে মা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

রাতে বেহালার পর্ণশ্রীর বাড়ি থেকে অরিজিতের মায়ের ফোন পেয়ে তাঁকে সব জানায় পুলিশ। বিকেলে ময়না-তদন্তের পরে স্নেহাশিসের দেহ পৌঁছয় রানিকুঠির বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নিস্পন্দ ছেলেকে আঁকড়ে পড়ে আছেন মা।

মিনাখাঁর মালঞ্চে দুর্ঘটনার পরে। —নিজস্ব চিত্র।

বিড়বিড় করে চলেছেন: ‘‘গাড়িতে করে কোথায় গেলি, এক বারটি বলে গেলি না কেন?’’

চলে এসেছেন ছেলের ব্যান্ডের সঙ্গী-বন্ধুরা। রূপম ইসলাম বললেন, ‘‘ও (স্নেহাশিস) আমার ভাইয়ের মতো। কোনও কুঅভ্যাস, নেশা করার ধাত ছিল না। কী ভাবে এমন ঘটল, মাথায় ঢুকছে না!’’

আরও পড়ুন: সবচেয়ে মারাত্মক ঘাতক পথ দুর্ঘটনাই, ভারতে সংখ্যা সর্বাধিক বলছে ‘হু’-র সমীক্ষা

গত এক মাসে ফসিলসের সঙ্গে হায়দরাবাদ, মুম্বই, আগরতলায় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন স্নেহাশিস। রূপমের স্ত্রী তথা ফসিলসের ম্যানেজার রূপসার কথায়, ‘‘কত ছোটখাটো ব্যাপারে স্নেহাশিসের উপরে ছোট ভাইয়ের মতো নির্ভর করতাম। এত দায়িত্বশীল ছেলের এমন ঘটতে পারে, কখনও ভাবিনি!’’ দুর্ঘটনার একটু আগেই ‘বেশি রাতে বাড়ি ফিরছি’ বলে স্নেহাশিসের ফোন আসে। তবে দুই বন্ধুর কেউই বাড়িতে টাকি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলেননি। অরিজিৎ কয়েক মাস আগে দিল্লি থেকে নতুন চাকরি নিয়ে কলকাতায় আসেন।

আরও পড়ুন: চাদর-চাপা শিশুপুত্রের দেহ, ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলেন মা

পুলিশের ধারণা, রাত ১০টা নাগাদ দুই বন্ধু টাকি থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন। টাকিতে তাঁরা কোথায় ছিলেন, সেটা এখন খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Fogg Sound Engineers Death Taki
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE