Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের খুনে সম্মতি ছিল মায়ের, বলল ধৃত

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিচিত কাকুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল শুভম। পরের দিন সকালে রেলপুলিশের থেকে খবর আসে কাঁকুড়গাছি রেললাইনের ধার থেকে ওই কিশোরের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছে।

শুভম রায়

শুভম রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

হাওড়ার কিশোর শুভম রায়ের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে এখনও ধন্দে তদন্তকারীরা। তাকে জীবিত অবস্থায় চলন্ত ট্রেনের সামনে ঠেলে ফেলা হয়েছিল, না কি আগেই খুন করে পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই কাণ্ড ঘটানো হয়েছিল, সেটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জেরায় শুভমের মায়ের কথাতেও বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এমনকি পুলিশের দাবি, রণজিৎ জেরায় জানিয়েছে যে শুভমকে খুনের পরিকল্পনার কথা কাকলি নিজেও জানত।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিচিত কাকুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল শুভম। পরের দিন সকালে রেলপুলিশের থেকে খবর আসে কাঁকুড়গাছি রেললাইনের ধার থেকে ওই কিশোরের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে নেমে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুভমের মা কাকলি ও তার বন্ধু কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা রণজিৎ ভড়কে গ্রেফতার করে। দু’জনকে শনিবার হাওড়া আদালতে তোলা হয়। তদন্তে প্রয়োজনীয় আরও কিছু তথ্য পেতে ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারীরা সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেন। বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এ দিনও কলাবাগানের বাসিন্দারা ধৃতদের কড়া শাস্তির দাবি করে বিক্ষোভ দেখান।

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুভম নিখোঁজ থাকায় পরিবারের অন্যেরা চিন্তিত থাকলেও মা কাকলি কেন নিরুত্তাপ ছিলেন তা প্রথম থেকেই ভাবাচ্ছিল তদন্তকারীদের। এমনকি বারবার জেরায় কাকলি দাবি করেছিল ওই দিন রণজিতের সঙ্গে তার কোনও কথাই হয়নি। কিন্তু কাকলির মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা অন্য তথ্য পান। তাঁরা দেখেন, ঘটনার দিন দুপুর থেকে শুরু করে রাত ২টো পর্যন্ত বারবার দীর্ঘ সময় ধরে রণজিতের সঙ্গে কথা হয়েছে শুভমের মায়ের। এমনকি রাতে যে সময়ে কাকলি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে যায়, তখনও দু’জনের মধ্যে ফোনে কথা হয় বলেই দাবি পুলিশের। কেন সেই তথ্য কাকলি জানায়নি সেটাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানায়, জেরায় রণজিৎ দাবি করেছে, শুভম তাকে কাকা বলে মানত। কিন্তু রণজিতের সঙ্গে কাকলির একসঙ্গে থাকা নিয়ে আপত্তি ছিল ১২ বছরের শুভমের। আর তাই ‘পথের কাঁটা’ সরাতেই ওই কিশোরকে প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর তার পুরোটাই কাকলি জানত বলে দাবি করেছে রণজিৎ। পুলিশি জেরায় সে আরও দাবি করেছে, কাঁকুড়গাছি রেললাইনটিই খুনের জন্য নিরাপদ মনে করেছিল। কারণ হাওড়ার প্রায় সব জায়গাই চেনা ছিল ওই কিশোরের। তাই কাকলি অসুস্থ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি, এই টোপ দিয়ে হাওড়া থেকে শুভমকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ওই যুবক। প্রথমে নিজের বাড়িতে কিছু ক্ষণ সে রেখেছিল শুভমকে। রাত ৮টা নাগাদ হাসপাতাল যাবে বলে ওই কিশোরকে নিয়ে বাড়ি থেকে বার হয়ে রণজিৎ রেললাইনের ধারে পৌঁছেছিল। এর পরে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে চলন্ত ট্রেনের সামনে শুভমকে ঠেলে ফেলে দেয় সে। তার পরে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাতে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল রণজিৎ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE