মানস ভুঁইয়া
শাসক পক্ষের এক চালে বেআব্রু হয়ে গিয়েছে দলে গোষ্ঠী কোন্দলের ছবিটা। বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান পদে মানস ভুঁইয়াকে নিয়োগ করা নিয়ে প্রকাশ্য কাদা ছোড়াছুড়িতে তাই ইতি টানল কংগ্রেস। ওই পদে থাকা না-থাকার বিষয়টি কার্যত মানসবাবুর বিবেকের উপরেই ছেড়ে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সবংয়ের বর্ষীয়ান বিধায়ককে প্রদেশ সভাপতি আর্জি জানিয়েছেন, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার স্বার্থেই তিনি যেন ওই পদ ছেড়ে দেন। মানসবাবুর পাল্টা যুক্তি শুনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পরিষদীয় দলের বৈঠকও ডেকেছেন অধীরবাবু।
তবে মানসবাবু যে একেবারে চাপমুক্ত, তা বলা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার দলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে চিঠি পাঠিয়েছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। হাইকম্যান্ডের অনুমতি নিয়েই পিএসি চেয়ারম্যানের পদটি বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যা ঘটল, তা বিস্তারিত জানিয়ে ওই চিঠিতে মান্নান অভিযোগ করেছেন— কংগ্রেস এবং বামেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতেই তৃণমূল সরকার যে এই ‘খেলা’ খেলেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এ-ও বোঝা যাচ্ছে, মানসবাবুকে জানিয়েই এই পদক্ষেপ করেছে সরকার। কারণ, স্পিকারের ঘোষণার ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মানসবাবু।
সোমবার পিএসি চেয়ারম্যান পদে মানসবাবুর নাম ঘোষণা হওয়ার পর তীব্র অশান্তি শুরু হয় কংগ্রেসে। তাঁরা সুজনবাবুর নাম সুপারিশ সত্ত্বেও ওই পদে মানসবাবুর নাম ঘোষিত হওয়ায় এক দিকে স্পিকারের সমালোচনা করেছিলেন মান্নান। অন্য দিকে, একাধিক কংগ্রেস নেতা কার্যত প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন যে, মানসবাবুই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ‘আঁতাঁত’ করে নিজের ওই পদে আসা নিশ্চিত করেছেন। প্রসঙ্গত, মানসবাবুকে কেন পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হবে না, সেই প্রশ্ন বিরোধী দলনেতাকে এর খানিক আগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
ক্রমশ দেখা যায়, শাসক দলের ধুরন্ধর কৌশলে কংগ্রেসেরই অন্তর্কলহ প্রকট হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় মঙ্গলবার দল এবং জোট — দু’কূল রক্ষা করতে নামেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সূত্রের খবর, এ দিন সকালে মানসবাবুকে মেসেজ পাঠান অধীরবাবু। তাতে তিনি লেখেন, ‘শাসক দল কেন এই কৌশল নিল, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আপনার সবটাই জানা। আপনার কাছে অনুরোধ, পিএসি চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিন। এত দিনের রাজনৈতিক জীবনে যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন, তা দয়া করে নষ্ট করবেন না। এ-ও মনে রাখবেন, হাইকম্যান্ডের মত নিয়েই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’
অধীরকে পাল্টা মেসেজে মানসবাবু অভিযোগ করেন, তাঁকে অপমান করা হয়েছে। পিএসি চেয়ারম্যানের পদটি যে বামেদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে কংগ্রেস পরিষদীয় দলে কোনও আলোচনা হয়নি। পিএসি-র সদস্য হিসেবে প্রস্তাবিত তালিকায় তাঁর নাম রাখার সময়েই তিনি আপত্তি করেছিলেন। তার পর স্পিকার তাঁকে মনোনীত করার পর দলের বিভিন্ন নেতা যে ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, তাতে তিনি অসম্মানিত বোধ করছেন। অধীরবাবু তখন তাঁকে জানান, তিনি প্রদেশ সভাপতি থাকতে মানসবাবু কখনওই অসম্মানিত হবেন না। এর পরেই আগামী শনিবার পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেন প্রদেশ সভাপতি।
প্রকাশ্যে অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মানসবাবু। মান্নানকে প্রশ্ন করা হলে তিনিও বলেন, ‘‘সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। এখন কিছু বলতে চাইছি না।’’ কারও কারও দাবি, সোমবার দলের একাংশ মানসবাবুকে শো-কজের দাবি পর্যন্ত তুলেছিলেন। কিন্তু এ দিন মান্নানকে অধীরবাবু বলে দিয়েছেন, এমন কোনও পদক্ষেপ যেন করা না হয়। প্রশ্ন হল, এত কিছুর পরেও মানসবাবু কি ইস্তফা দেবেন? স্পষ্ট করেননি প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো
দিতে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে শনিবারের বৈঠকে গরহাজিরও থাকতে পারেন মানসবাবু।
এই টানাপড়েনের সমান্তরালে আরও একটি চাপান-উতোর চলছে। সোমবার স্পিকারের সিদ্ধান্তকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করায় মান্নানের বিরুদ্ধে এ দিন স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছেন উপ-মুখ্য সচেতক তাপস রায়। নোটিসের খবর শুনে মান্নান বলেছেন, ‘‘আমি স্বাগত জানাচ্ছি। যে কোনও ষ়ড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, তৃণমূল সরকারের গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদ যদি অন্যায় হয়, হাজার বার সেই অন্যায় করব। জেলে যেতে হলে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy